দশ বছরের প্রেমকাহিনির সামারি
দুইহাজার সাত সালের ঈদের দিন মেয়েটা একটা রেস্টুরেন্ট বাঁদরামি করতে গিয়ে চোখে পড়ে যায়। নাম্বার জোগাড় করে ফোন দিসিলাম, কাঁটায় কাঁটায় নয় দিন লাগসিল পটাইতে! ১২ ডিসেম্বর একরকম জোর করে বলতে বাধ্য করসি যে সে আমারে ভালা পায়! পরে দুইজনেই হাসতে হাসতে স্বীকার করসিলাম যে একজন আরেকজনরে বাঁশ দিতে ডেটিং শুরু করসিলাম, পরে দুইজনেই কাইত হয় গেছি!
প্রথম তিন বছর বেসিক্যালি কোন ডেট হয় নাই! ওর স্কুলের সামনে দাঁড়ায়ে থাকতাম। সে স্কুল থেকে বের হইত বান্ধবীদের সাথে হাহাহিহি করতে করতে, আমি ওর পিছে পিছে ওর বাসা পর্যন্ত যাইতাম। সে বাসায় ঢুকার আগে টাটা দিত। মাঝে মাঝে ওর বাসার সামনে দিয়ে যাওয়ার টাইমে ফোন দিতাম। সে জানালায় এসে পর্দা সরায়ে উঁকি মেরে দেখত। একবার সাহস করে ওর বাসায় ঢুকে গেসিলাম, ওর বাসার কুত্তা তাড়া করসিল! এই ছিল অবস্থা! একটা সময়ে চেহারা ভুলে গেসিলাম একজন আরেকজনের, কিন্তু ফোনে ফোনে সে কি প্রেম, বাপরে বাপ!
স্কুলের এক স্যারের কাছে পড়ত। স্যার আবার একটু লুচু টাইপের ছিল। তাই আমি গিয়ে বলসিলাম স্যার এইটা আমার গার্লফ্রেন্ড একটু দেইখা রাইখেন। তখন আবার একটু গুন্ডাগুন্ডা টাইপের এটিট্যুড ছিল, ওই স্যারের সহ্য হয় নাই এমন কাহিনি। হারামজাদা করল কি, তার বাসায় সুন্দর করে আমারে ড্রাগ এডিক্ট বানায়ে দিল! আমার গার্লফ্রেন্ডও কম যায় না। সে বিদ্রোহে দিল তার মোবাইল সারেন্ডার করে! আমার হইল হ্যাপা। চারমাস যোগাযোগ বন্ধ! আমি খালি ছ্যাঁক খাওয়া গান শুনি আর চোখের পানি ফেলি! :’(
কলেজে উঠে একটু একটু ডেটিং শুরু করসিলাম। তাও তিনমাসে একটা রিকশা রাইড! তার বাসায় পড়াইতাম। একদিন ম্যাথ না পারায় দিলাম স্কেল দিয়া এক বাড়ি। এমন ডমেস্টিক ভায়োলেন্স, তার উপরে সে প্রাচীন আমলের নারীবাদী। হাতের কাছে কম্পাস ছিল, কাঁটা আমার হাতে ঢুকায়ে দিল এক টান! হাত ফেঁড়ে রক্তারক্তি অবস্থা! সেইটা দেখে ভ্যাঁ ভ্যাঁ করে কানতে কানতে স্যাভলন/তুলা এনে ব্যান্ডেজ করে দিল। আমি আবার তার প্রেমে পড়লাম! :’)
ভার্সিটিতে উঠার পরে আমি আশায় ছিলাম এই বুঝি পাখনা গজাইলো আর আমরা অন্যদের মত ঘুরব ফিরব। কিসের কি? মেয়ে দুম করে হালাল বাচ্চা হয়ে গেল! আগে তো হাত ধরা যাইত, তখন হাত ধরতে গেলেও দুইটা হাদীস আর তিনটা জাহান্নামের আজাবের কথা মনে করায়ে দেয়! কপাল রে কপাল!
দুইহাজার চোদ্দতে লাইফের প্যাঁড়া নিতে না পেরে আমি ব্রেকআপ করে ফেললাম। খালি ব্রেকআপ করলেও হইত, একদম আউলা হয়ে গেলাম। মেয়েটা কিছুই করল না, সে খালি ওয়েট করে গেল আমার বুদ্ধিসুদ্ধি উদয় হওয়ার জন্যে। আমি ঘুরে বেড়াই, লাইফের মজা লুটি। সে চুপচাপ আমার জন্যে ওয়েট করে। যেই অপরাধ করসি এই সময়টায়, যে কষ্ট দিসি তাকে, এর পরেও যে আমাকে নিজের লাইফের সাথে জড়ায়ে নিসে সে, এই কৃতজ্ঞতা ভাষায় প্রকাশ করার মত না। অপরাধের প্রায়শ্চিত্ত জীবনে করতে পারব কিনা আল্লাহ মালুম।
দুইহাজার ষোলর মাঝামাঝি সময়ে এক রাতের বেলা দুইজনেরই একই সময়ে মনে হইল যে একচুয়ালি একজন আরেকজনরে ছাড়া থাকা হবে না। ফোন দিয়ে সুন্দর খোশগল্প জুড়ে দিলাম। তার বাসার তরকারি বিড়াল নিনজা স্টাইলে ছিনতাই করে নিয়ে গেছে থেকে আমার পায়ে ব্যাথা পাইসি খেলতে গিয়ে। সব ঠিক ঠাক, যেন কিছু হয়ই নাই!
দুইহাজার সতেরোতে ডিসাইড করলাম ভাল একটা জব লাগবে। প্ল্যানিং হইল যে আমি ডিসেম্বরের মধ্যেই ভাল স্যালারির একটা জব পাইলে বিয়ের প্রস্তাব দিব ওর বাসায়, আর সহ্য নাহি হোতা হায়! যেহেতু নিয়তে দম ছিল, খোদা কানাডার স্টাডি পারমিট পাওয়ায়ে দিলেন! বাস, আর কে পায় আমারে। ডাইরেক্ট আন্টি-আঙ্কেল থেকে আম্মা-আব্বা ডাকার প্রস্তুতি নিয়ে পোকেমন ধরতে রওনা দিলাম।
প্লট ট্যুইস্টঃ ওর বাসায় অনেক পরে জানতে পারসে যে অতীতের রাকিব আর আজকের ইনজামুল একই বেক্তি! আসলে আমি ইনজামুল নাম দিয়ে ওরে পড়াইতে যাইতাম কেমিস্ট্রি! আমার হবু শাশুড়ি সে যে কি খেপা! কিন্তু এখন তো পানি অনেকদূর গড়ায়ে গেছে!
দুইহাজার সতেরো সালের জুলাই মাসের এক শুভক্ষণে দুম করে বিয়ে করে বসলাম। এইবেলা একটা কনফেইস করিঃ ইচ্ছা থাকা সত্ত্বেও অনেকরে দাওয়াত দিতে পারি নাই কারন আমরা দুইজনেই মিনিমালিস্ট ওয়েতে বিয়ে করসি! টেকাটুকা বাঁচাইতে চাইসি সংসারের জন্যে, হুদাই বিয়েতে একগাদা খরচ করে কি লাভ? বিয়ের রাতে বললাম “এইবার তোমাকে কে বাঁচাবে সুন্দরী?” সে বলে “চুপ থাকো! যাও বারান্দায় যাও নাইলে সোফায় ঘুমাও! একেবারে কেইস করে দিব!” পরদিন থেকে শান্তি নাই। বউ রাতে ঘুমাইলে আমি চুপে চুপে বিছানা থেকে নেমে কম্পিউটার অন করে হেডসেট লাগায়ে ফিফা খেলি আর চোখের পানি ফেলতে ফেলতে আল্লাহর কাছে বিচার দেই।
বিয়ের একমাসের মাথায় সদ্য বিবাহিতা বউকে রেখে মহাসাগর পাড়ি দিয়ে চলে আসছি। আসার টাইমেও দুইজনেই চিল, বুকের ভিতর দুইজনেই উথাল পাথাল যদিও। কিন্তু ইগোর ঠেলায় কেউ কাউরে বলতে পারতেসি না যে কেমন লাগতেসে! দিনের বেলা দুইজনেরই কাজ থাকে, রাতে একা বিছানায় শুয়ে খালি হাজার মাইল দূরে মন চলে যায়। দশ ঘন্টা টাইম ডিফারেন্সে শালার শান্তিতে একটু কথা বলাও যায় না! কি যন্ত্রনা! . এই হইসে গত দশ বছরের প্রেমকাহিনির সামারি! প্র্যাঙ্ক কল দিয়ে শুরু, কবুল বলা দিয়ে আবার নতুন করে শুরু! বিয়ের পরেও আমার মনে হয় না বিয়ে করসি। এই মনে হয় সবই তো একই রকম, খালি এখন হাত ধরতে গেলে হাদিস কোরানের রেফারেন্স টানে না!
Comments