top of page
Writer's pictureJust Another Bangladeshi

জীবন নকশা

―পাত্র কী পাস? ―মাস্টার্স করা। ―পাত্র কী করে? ―তার একটা গরুর খামার আছে। ―তার মানে ছেলে গরু পালে? হবে না।

―পাত্র কী পাস? ―মাস্টার্স করা। ―পাত্র কী করে? ―বিদেশে থাকে। ―ঠিক আছে, চলবে।

অথচ বিদেশে হয়তো ছেলেটা গরুর খামারই করে। মালিক নয়, কর্মচারী। অথবা কাজ করে কোনো রেস্টুরেন্টে বা চেইন শপে, কিংবা ট্যাক্সি চালায়।

বিদেশে সব কাজই করা যায়, কারণ সেখানে সব কাজের মর্যাদা আছে, ছোট কাজ-বড় কাজ বলে কোনো ব্যাপার নেই।


দেশে সব কাজ করা যায় না। যার যত বড় পদ, তার তত বড় চেয়ার। চেয়ারের ভারে ভারাক্রান্ত আমরা অন্যদের কাজকে তুচ্ছতাচ্ছিল্য করি।

সিঙ্গাপুরের নানিয়াং পলিটেকনিকে দেখেছি, সিনিয়র সিটিজেনরা ক্লিনারের কাজ করছেন। বয়সের ভারে ন্যূব্জ হয়ে পড়েছেন তাঁরা। ওঁদের সম্পর্কে খোঁজ নিতে গিয়ে জেনেছি, তাঁরা সবাই অবসরে আছেন, সময় কাটানো আর বাড়তি কিছু আয়ের জন্য এখন পার্টটাইম ক্লিনারের কাজ করছেন। এরপর যা শুনলাম, তার জন্য আমি মোটেও প্রস্তুত ছিলাম না। এই বয়স্ক ক্লিনাররা এই পলিটেকনিক থেকেই অবসর নিয়েছেন। কেউ শিক্ষক ছিলেন, কেউবা কর্মচারী।

কীভাবে এটা সম্ভব? কারণ হচ্ছে, সকল স্তরের কর্মীকে সে দেশে সমান মর্যাদা দেওয়া হয়। নানিয়াং পলিটেকনিকের প্রধান নির্বাহী থেকে শুরু করে ক্লিনার পর্যন্ত সবার পরিচয়―স্টাফ। এই ‘স্টাফ’ নামফলক বুকে লাগিয়ে সবাই যাঁর যাঁর কাজ করে যাচ্ছেন। সবাই বসছেন একই ধরনের চেয়ারে।

আর আমাদের দেশে? নেমপ্লেট আর চেয়ারের গরমে আমরা অস্থির। সরকারি চাকরিতে তো কে কী রকম চেয়ার-টেবিল পাবেন―সেটাও ঠিক করে দেওয়া হয়। বড় সাহেবের চেয়ার হবে লাখ টাকা দামের, ছোট সাহেবের চেয়ারে হাতাও থাকবে না।

শুধু কি তা-ই? বসের সঙ্গে হাঁটতে গেলে আপনাকে তাঁর পেছনে হাঁটতে হবে। একসঙ্গে খেতে বসলে আপনার খাওয়া হয়ে গেলেও বসের জন্য আপনাকে বসে থাকতে হবে।

এই সব গোলামি নিয়মের নাগপাশ থেকে কীভাবে বের হব আমরা? আমরা কি কল্পনা করতে পারি―কলেজের কোনো অধ্যাপক অবসরের পরে সেই কলেজেই পার্টটাইম কর্মীর কাজ করছেন?

অধ্যাপক আবদুল্লাহ আবু সায়ীদ তাঁর আত্মজীবনীতে লিখেছেন, ভারতে পড়ার সময় এক মধ্যবয়স্ক লোক সাইকেল চালিয়ে তাঁর রুমে দুধ দিয়ে যেতেন। পরে তিনি খোঁজ নিয়ে জেনেছেন, সেই দুধঅলা লোকটা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক।

অবশ্য পরিবর্তন কিছু আসছে। আমাদের দেশের করপোরেট অফিসগুলোতে সবার ডেস্ক সমান। বসকে স্যার না বলে সাহেব বলছেন। প্রথম আলোর মতিউর রহমানকে সবাই বলেন মতি ভাই, কালের কণ্ঠের সবাই বলেন মিলন ভাই।

সশস্ত্রবাহিনীর একটা অনুষ্ঠানে গিয়েছিলাম একবার। সঙ্গে আমার বস। অনুষ্ঠান শেষে ঘাঁটিপ্রধান নিজহাতে সবাইকে চা-নাশতা পরিবেশন করলেন। কাপ-পিরিচ তুলে দিলেন আমাদের হাতে, সঙ্গে টিসুপেপারও। আমার বস ফিসফিস করে আমাকে বললেন, দেখেছেন কারবার! আমি বললাম, জি স্যার। আপনি পারবেন? উনি একটা ঢোঁক গিললেন।

শিক্ষা হচ্ছে আলো। শিক্ষা দিয়েই যে আপনাকে সংশ্লিষ্ট চাকরি করতে হবে―সেটা কেন? আপনি অন্ধকার চৌরাস্তায় দাঁড়িয়ে আছেন, আপনার হাতে আলো আছে; তাহলে তো আপনি যেকোনো রাস্তায় যেতে পারেন। আপনি কেন শুধু একটা পথ চোখে দেখবেন?

শিক্ষা আপনাকে আলোকিত করবে। আপনি আলোকিত করবেন পরিবার, সমাজ, রাষ্ট্রকে। জীবিকা নির্বাহের জন্য আপনার ডিগ্রিকেই কাজে লাগাতে হবে―এমন তো নয়।

শুরুর কথায় ফিরে আসি। ছেলেটার গরুর খামারে দশটা গরু আছে। দৈনিক এক শ লিটার দুধ বিক্রি করে সে। খরচ বাদ দিয়ে তার মাসিক আয় এক লাখ টাকা।

চট্টগ্রাম শহরের ঝালমুড়িঅলাদের রোজগার মাসে তিরিশ হাজারের ওপরে। আজ বিকেলে ভ্রাম্যমাণ পেঁয়াজু বিক্রেতাকে জিজ্ঞেস করলাম―কত আয় হয়? পঁয়ত্রিশ হাজার। বললেন তিনি।

আপনি কি ভাবতে পারছেন―এই সব পেশার সঙ্গে যদি শিক্ষার আলোটা যুক্ত হয়, তাহলে জীবনযাত্রার মান কোথায় উঠিয়ে নিয়ে যেতে পারবেন আপনি?

তাহলে আর বেকার থাকা কেন? কারণ, কাজের ক্ষেত্রে আমরা ছোট-বড় বিভাজন করি। আত্মঘাতী বিভাজন।

5 comments

5 comentarios


Moni00
Moni00
16 ago 2020

অসাধারণ লিখেছেন দাদা। খুবই ভালো লাগলো পোস্টটি পড়ে।

Me gusta

Arna Rhai
Arna Rhai
16 ago 2020

আপনি যথার্থই লিখেছেন..........

Me gusta

Aradha Basak
Aradha Basak
15 ago 2020

আজকের যুগে অধিকাংশ মানুষই মনে করেন অর্থ উপার্জনের জন্য শিক্ষা একটি পথ শুধুমাত্র । এ কারণে শিক্ষার প্রকৃত গুনাগুণ না বিচার করে মানুষ লেখাপড়া শিখে । যার ফলে তারা জীবন আলোকিত করার বদলে অন্ধকারের দিকে নিয়ে যায় । আপনার ব্লগ পড়ে অনেক ভালো লাগলো । এখানে আপনি শিক্ষার গুরুত্ব প্রকৃতির রূপে তুলে ধরেছেন......

Me gusta

Faria57
Faria57
15 ago 2020

আমরা শিক্ষার প্রকৃত উদ্দেশ্য প্রকৃত উদ্দেশ্য না বুঝে শুধুমাত্র অর্থ উপার্জনের জন্য শিক্ষা গ্রহণ করে থাকি । এর জন্য আমরা প্রকৃত জ্ঞানের নিজেদেরকে আলোকিত করতে অক্ষম । আপনার লেখাগুলো পড়ে অনেকেই শিক্ষার প্রকৃত মানে সম্পর্কে বুঝতে পারবে । ধন্যবাদ,....

Me gusta

Prothoma
Prothoma
15 ago 2020

দারুন লিখেছেন । লিখাটি পড়ে খুব ভাল লাগলো।

Me gusta
Enjoy
Free
E-Books
on
Just Another Bangladeshi
By
Famous Writers, Scientists, and Philosophers 
click here.gif
click here.gif

Click Here to Get  E-Books

lgbt-bangladesh.png
bottom of page