পরের দিন সকালে আমি মামার বাসায় গেলাম। মামা উনার এক বন্ধুর সাথে কথা বলছিলেন, আমি একটু দূরে দাঁড়িয়ে ছিলাম যেহেতু উনারা কথা বলছিলেন।
মামা আমায় দেখে বললেন তুমি আমার খানকায় গিয়ে বসো, আমি 5 মিনিট পর আসছি ।আমি খানকায় ঢুকে দেখি ভিতরে কেমন ঠান্ডা হাওয়া, চার পাশে শত শত কিতাব সাজানো। আর সুঘ্রাণ চার পাশে।
মামা চলে আসলেন এবং বললেন তোমার মামী আমাকে ততবির তো দূরের কথা কোন পরামর্শ দিতে ও মানা করছেন তাই তোমায় এখানে এনে বসালাম। আমি চুপ করে রইলাম।
মামা বললেন তুমি আজ তোমার খালার বাসায় যাবে আর আগামী কাল তাদের গ্রামের বাড়ি যাবে। তাদের বাড়ির উত্তর পাশে একটা বড় পুকুর আছে, আর সে পুকুরে 2 পাশে 2 টি ঘাট আছে।
তুমি সন্ধ্যার পর ঘাটের শেষ সিঁড়িতে নামবে যার পরের সিড়ি পানির নিচে থাকবে। আসাদ কে বলবে তোমার বাম হাত ধরে দাঁড়িয়ে থাকতে, তুমি বসে ডান হাত পানির নিচে রেখে এই এই দুআ পড়বে। আর আগেই ডান হাতে এই এই দুআ লিখে নিবে।
আমি বললাম তারপর......?
মামা বললেন তোমার হাত পানির নিচে আকর্ষণ এ টেনে নিতে চাইবে। তুমি যদি ভয় পেয়ে দুআ ভুল পড়, তাহলে তোমায় পানির ভিতরে টেনে নিয়ে যাবে সে কুফুরী শক্তি। আর যদি সব কাজ ঠিক মত করতে পারো, তাহলে তোমার হাতে ওই তাবীজ পানির নিচ থেকে নিজে নিজে চলে আসবে, যে তাবীজ পানিতে আসাদ এর চাচী ফেলেছিল।
আমি বললাম ইনশাল্লাহ আমি সব ঠিকমতো করতে পারবো, আপনি শুধু দুআ করবেন। মামা বললেন শোন তাবিজ উঠানোর পর সেখানে তোমারা একটুও অবস্থান করবে না,সাথে সাথে চলে আসবে।তা না হলে খুব বিপদে পড়বে।
আমি সব কিছু মনোযোগ দিয়ে শুনে বিদায় নিয়ে চলে আসলাম বাসায়।
দুপুরে রওনা দিলাম আসাদের বাসায়।
রাতে পৌঁছে সব কথা সবাই কে খুলে বললাম, কিন্তু খালু আমার কথা তেমন বিশ্বাস করতে চাইলো না। খালু বললেন আমার ভাই আর ভাবি এত টা খারাপ হতে পারে না। তখন খালা বললেন আগামী কাল ই প্রমাণ হবে ইনশাল্লাহ....।
পরের দিন আমি আর আসাদ বিকেলে পৌঁছে গেলাম আসাদের দাদুর বাড়ি। আমাদেরকে আসাদের চাচাতো ভাই দেখে বলল তোমরা কখন এলে? একবার ও জানালে না যে তোমরা আসতেছো।
আসাদ বলল সারপ্রাইজ দিলাম, আর এ হলো আমার খালাতো ভাই মাসুদ।
মাসুদ আমাদের বাসায় বেড়াতে এসেছে, আজ হঠাৎ করে বলল গ্রাম দেখবে,
তাই চলে আসলাম।
তখন আসাদের চাচা এলো মুখ টা ভার করে বলল কেমন আছ? আসাদ বলল ভালো। আর কিছু না বলে ওর চাচা চলে গেল।
আমার খুব ইচ্ছে হচ্ছিল আসাদের ডাইনি চাচী টা কে দেখতে ।কিন্তু তিনি একবারও আমাদের সাথে দেখা করলেন না। আমরা এক রুমে বসে আছি 10 মিনিট হলো এক গ্লাস শরবত কেউ দিল না। আমি বুঝলাম আমরা আসাতে উনারা খুশী নন।
আমি মাসুদ কে বললাম মাগরিব এর নামাজের আর মাত্র 10 মিনিট আছে এর মধ্যেই আমার দুআ গুলো হাতে লিখে ফেলতে হবে। কিন্তু রুমে বসে লিখলে কেউ দেখে ফেলবে চল আমরা বাহিরে ঘুরতে যাওয়ার কথা বলে বের হই। আমরা তাই বলে বাড়ির বাহিরে বের হয়ে একটা ধান ক্ষেতের পাশে গিয়ে তাড়াতাড়ি সব দুআ গুলো হাতে লিখে নামাজে চলে গেলাম।
ফরজ নামাজ শেষ করেই আমরা বেরিয়ে পড়লাম, বাকি মুসুললিরা সুননত নামাজ পড়ছিল ।এর ফাঁকে আমরা তাড়াতাড়ি ওই পুকুরের ঘাটে যাই। পুকুরের চার পাশে বড় বড় গাছ পালা ভরা। চারদিকে বেশ অন্ধকার হয়ে আসছে। আমি শেষ শিড়িতে
নেমে হাঁটু ভাজ করে বসে ডান হাত পানির নিচে রেখে দুআ পড়তে লাগলাম। আর আসাদ আমার বাম হাত তার দুই হাত দিয়ে চেপে ধরে দাঁড়িয়ে ছিল। প্রায় 2 মিনিট এর মধ্যেই আমি বুঝতে পারলাম আমার হাত ধরে কেউ জোরে টেনে পানির নিচে নিয়ে যেতে চাইছে। আসাদ ও টান খেয়ে কেঁপে উঠলো আর আমায় টেনে ধরে রেখে একটু জোরে জোরে আয়াতুল কুরসি পড়তে লাগলো।
আমি দুআ পড়তে লাগলাম কিন্তু আমার মনে হলো আমি নিজেকে ধরে রাখতে পারছিনা, হাত টা যেন ছিড়ে যাচ্ছে ।
আসাদ কান্না শুরু করে দিল..।
প্রায় 5 মিনিট এই ভাবে থাকার পর আমি বুঝতে পারলাম আমার হাতে কি যেন এসে লেগে গেল। আর সাথে সাথে সব আকর্ষন এর শক্তি কমে গেল। আমি সেই জিনিস টা হাত দিয়ে ধরে উপরে নিয়ে আসলাম।
আসাদ আমায় জড়িয়ে ধরে দাঁড় করানো চেষ্টা করছিল কিন্তু আমি কোন শক্তি পাচ্ছিলাম। আমার দুই চোখ বন্ধ হয়ে আসছিল, শুধু এই টুকু মনে আছে যে আমি আমার হাতের মুসঠি থেকে একটা তাবিজ আসাদ এর হাতে দিলাম আর সাথে সাথে সেন্স হারিয়ে ফেললাম। (তার পরের ঘটনা আসাদ এর মুখে শুনা)
আমি মাটিতে ঢলে পড়লাম। আসাদ আমায় টেনে ঘাটের উপরে উঠিয়ে পাশের এক বাড়ির দরজার সামনে নিয়ে গেল। দরজায় নক করে বললো কেউ আছেন ? আমার ভাই সেন্স হারিয়ে ফেলেছে একটু সাহায্য করুন। তখন এক মহিলা দরজা খুলে এলো আমাদের দেখে তার ঘরের পুরুষদের ডাক দিল, আর তারা সবাই মিলে আমায় তাদের রুমে নিয়ে খাটে শুইয়ে দিয়ে মাথায় পানি ঢালতে লাগলো।
এর মাঝে আসাদের চাচার বাড়িতে খবর চলে গেলো। আসাদের চাচী আর চাচাতো দুই ভাই আর এক বোন চলে এলো। তাঁরা আসাদ কে বলল তোমরা এই পুকুর ঘাটে কি করছিলে? আসাদ বলল এমনি হাঁটতে হাঁটতে চলে এসেছিলাম এর ই মধ্যে ওর মাথা ঘুরে গেল।
আসাদের চাচী সাথে সাথে রুম থেকে বের হয়ে গেল। আসাদ চিন্তায় পড়ে গেল যে মামা তো বলেছিলেন কাজ শেষ করে সে জায়গায় অবস্থান না করতে, কিন্তু মাসুদের সেন্স না ফিরলে বাড়ি ফিরব কি করে।
এর মধ্যেই আমার সেন্স ফিরে এলো আমি চোখ খুলে দেখি আমার মাথার পাশে আসাদ এবং বেশ কিছু পুরুষ আর মহিলা দাঁড়িয়ে আছে আর কে যেন মাথায় পানি দিচ্ছে।
আমি সাথে সাথে বসে গেলাম, আসাদ বলল তুমি ঠিক আছ মাসুদ?
আমি কিছু বলতে চেষ্টা করলাম কিন্তু মুখ দিয়ে কোন শব্দ বের হচ্ছিল না।
মনে হচ্ছিল আমি বোবা হয়ে গেছি। বার বার চেষ্টা করছি কিন্তু পারছিনা। সবাই খুব ভয় পেয়ে গেলো। এমন সময়ে খালা ফোন দিল আসাদের নাম্বার এ। আসাদ সবার সামনে বললো আম্মু... মাসুদ অসুস্থ হয়ে গেছে। তখন খালা বললেন এখনই সিএনজি ভাড়া করে ওঁকে বাসায় নিয়ে আয়। আসাদ ফোন রেখে দিয়ে ওর চাচাতো ভাই কে বলল আমাদের একটা সিএনজি ভাড়া করে দাও, এখনই বাসায় যেতে হবে। এ সময়ে আসাদের বোন বলল এখন রাত হয়ে গেছে আর আমরা ডাক্তার ডেকে আনবো, আগামী যেও ।
আসাদ বলল আম্মু এখন ই যেতে বলেছে।
এমন সময়ে বাহিরে বর্জপাত শুরু হলো আর সাথে সাথে তুমুল বৃষ্টি পড়তে লাগলো।
আমি এই গল্পটি পড়ে খুব খুশি এবং আমি আশা করি আপনি পরের বার এই ধরণের গল্প পোস্ট করবেন।
গল্পটি খুব সুন্দর। আমার এই গল্পটি খুব পছন্দ হয়েছে।
গল্পটি অত্যন্ত অসাধারণ
আপনার লেখার অভিজ্ঞতার জন্য আমি সত্যিই আপনার প্রশংসা করি।
আপনার উপস্থাপনা খুব সুন্দর।