top of page
Writer's pictureJust Another Bangladeshi

কীভাবে হয়েছে, অসম্ভবটুকু সব সময় কীভাবে সম্ভব হয়?


পরপর পাঁচদিন দরজা বন্ধ করে শুধু লিখল একটামানুষ। বদলে গেল পৃথিবী। আমূল বদলে গেল। অথচ পাঁচদিন লেখার পর দরজা খুলে সে একজন বোদ্ধার কাছ থেকে কী শুনেছিল?



তুমি এ লেখা লুকিয়ে ফেলো। নাহলে মানুষ জোর করে তোমাকে পাগলা গারদে পুরে দিবে। মানুষ বিশ্বাস করবে না, তুমি সুস্থ আছ।


এই পাঁচদিন মানুষটা কী লিখেছে?

ইহুদিবাদী জাতিরাষ্ট্রের ছক লিখেছে।


অথচ এই হার্টজেলই সেই ব্যক্তি, যে এর আগে একদিন বলেছিল, চলো, আমাদের সব ইহুদি শিশুকে একসাথে ব্যাপ্টাইজ করে ফেলি! অর্থাৎ আমরা বড়রা তো পারবো না খ্রিস্টান হয়ে যেতে, শিশুরা তো বোঝে না। তাদের সবাইকে খ্রিস্টান করে ফেলি! ওরা অন্তত ‘সম্মানের’ সাথে বাঁচুক। সমাজের সাথে একাত্ম্য হোক!


না সে ধার্মিক ইহুদি ছিল, না তার পরিবার ধার্মিক ইহুদি ছিল। এমনকি তার পরিবার হানুকা’র মত গুরুত্বপূর্ণ ইহুদি ধর্মীয় অনুষ্ঠানও পালন করত না। কেয়ারও করত না।


হার্টজেল শিশু অবস্থায়ও পায়নি ইহুদি শিক্ষাদীক্ষার দেখা।

পড়ালেখা তো করেছে খ্রিস্টান মিশনারি স্কুলে।


এমনকি এই লোকটা মারাও গিয়েছিল হার্টফেইল করে। কেন হার্টফেইল করেছিল? স্রেফ এজন্য যে তার পরিকল্পনার সাথে তার পক্ষের লোকরা একত্র হয়নি। একমত হয়নি। তার বিরুদ্ধে গেছে।


অথচ এই লোকটার কথিত ‘কবর’ আজকে জেরুজালেমের পাহাড়চূড়ায়। ইজরায়েলের ‘জাতীয় কবরভূমি’ তে মার্কিন প্রেসিডেন্টরা পর্যন্ত হার্টজেলের কবরে ফুল চড়িয়ে আসে। তার মৃত্যু কিন্তু ফিলিস্তিন/ইজরায়েলে হয়নি। কবরও এখানে হয়নি।


এটাই বড় কথা না, বড় কথা হল, থিওডোর হার্টজেল প্রকৃতপক্ষে ইজরায়েল রাষ্ট্রের যে রাষ্ট্রচেতনা এবং জাতিচেতনা, সেই রাষ্ট্রের পিতা এবং জাতির পিতা। তার মৃত্যুর দিনেই জায়নবাদিরা চিৎকার করে উঠেছিল, ইহুদিদের রাজাধিরাজ! ইহুদিদের রাজপিতা!


এই রাষ্ট্রচেতনা ও জাতিচেতনা কিন্তু ঐতিহ্যবাহী ইহুদি (অর্থোডক্স জিউ) থেকে সম্পূর্ণ ভিন্ন। এই চেতনা হল জায়নিজমের চেতনা।


কিন্তু যে লোকটা কোনদিন ইহুদি বিদ্যালয়ে পড়েনি, বরং পড়েছে খ্রিস্টান মিশনারি বিদ্যালয়ে, যার বাসায় কখনো ইহুদি হানুকার মত বড় ঈদ টাইপ অনুষ্ঠানও করা হয়নি, যে নিজেদের শিশুদের খ্রিস্টান করে ফেলার মত নিয়েছিল, সেই লোকটা কেন দরজা বন্ধ করে ইহুদিরাষ্ট্র গঠনের ছক লিখল পাঁচদিন? কেন খেতাব পেলো পাগলের?


মাত্র একটা ঘটনা।

তখন সে সাংবাদিকের দায়িত্বে প্যারিসে ছিল। দেখলো, ফ্রান্সের এক ইহুদি সেনা অফিসারকে বিচারের মুখোমুখি করা হয়েছে। সে ইহুদিবাদের গুপ্তচর। তার নাক কেটে নেয়া হয়েছে।


ঠিক সেদিনই প্যারিসের পথে নেমেছে বিরাট জনতার ঢল।

ইহুদিদের বিতারণ করো। ইহুদিদের প্রতিরোধ করো।


ব্যস।

এই একটা ঘটনা।

যে লোকটা কখনো ইহুদি ধর্মের বা জাতীয়তাবাদের ধারও ধারেনি (যদিও নিজের জাতির বিষয়ে সচেতন ছিল), যার পরিবারে ধর্মীয় কালচারই নেই- সেই লোকটা দরজা বন্ধ করল। পরপর পাঁচদিন মাত্র।


এমনি একটা রাষ্ট্রপরিকল্পনা বের করে আনলো, যে পরিকল্পনা দেখে মানুষ তাকে পাগলই ভাববে।


হলোও তাই।

সেও পাগলের মত চেষ্টা করতে থাকলো। মানুষও তাকে পাগলের মত প্রতিরোধ করতে থাকলো।

সবার প্রথমে তাকে কাফের ফতোয়া দিল প্রথাগত ধার্মিক ইহুদি সমাজ। কারণ ইহুদিদের স্পষ্ট বারণ করা আছে জোর করে বা চেষ্টা করে ইহুদিরাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা করার। এই রাষ্ট্র অকল্যানের রাষ্ট্র হবে, এই প্রচেষ্টা অকল্যানের প্রচেষ্টা হবে- এই ভবিষ্যতবাণী তো করাই আছে ইহুদি ধর্মে।


হার্টজেল কি কাফের ফতোয়ার তোয়াক্কা করে?

সে সারা পৃথিবীর প্রভাবশালী ইহুদিদের নিয়ে সম্মেলন করার জন্য একত্র হল। ১৭ টা দেশ থেকে ২০০ জনের বেশি ডেলিগেট। সেখানে হার্টজেল পতাকা দেখালো, স্টার অভ ডেভিডের দু পাশে দুটা নীল দাগ- একটা দাগ নাইল (নীল) নদের প্রতীক, আরেকটা ইউফ্রেটিস (ফোরাত) নদী। মাঝখানে ইহুদিরাষ্ট্র।


সেদিন রাতে সে ডায়েরি লিখল, এ স্বপ্ন পূরণ হবে। ৫ বছর পরে হলেও হবে। ৫০ বছরে তো অবশ্যই হবে।


তাই হয়েছিল।

১৮৯৭ সালে সে সম্মেলন করে, ১৯৪৭ সালে ৫০ বছর পুরো হয়, ৫০ বছরের পর গিয়ে ইহুদি রাষ্ট্র ইজরায়েলের স্বীকৃতি দেয় জাতিসংঘ। তার ৯ মাস পর তাদের দেশ গঠন হয়।


এটা কি কোন রুহানি ব্যাপার? মোটেও না। সে তো ধর্ম পালন শুরু করে ওই সম্মেলনের পর। তার পরিবার প্রথম হানুকা করে ওই সম্মেলনের পর। বরং সে মোটেও ধার্মিক ছিল না এবং ধার্মিক ইহুদিদের বেশিরভাগই তাকে, তার জায়নবাদকে এবং জায়নবাদী রাষ্ট্র ইজরায়েলকে না আজকে পছন্দ করে, না কোনকালে পছন্দ করতো।


হার্টজেল ওই জাদুকর- যে ধার্মিক ইহুদি, অধার্মিক ইহুদি, বস্তুবাদি ইহুদি, নাস্তিক ইহুদি, সংশয়বাদি ইহুদি, বিজ্ঞানবাদী ইহুদি, জ্বিন পূজারী ইহুদি, শয়তান পূজারী ইহুদি, কাব্বালিস্ট ইহুদি, খ্রিস্টানবাদি ইহুদি এবং এমনকি ইহুদি-মমত্ববাদি খ্রিস্টান ও ইহুদি-মমত্ববাদি নাস্তিককে পর্যন্ত এক ছাতা ও এক কাঁথার নিচে নিয়ে এসেছে।


এই ছাতা ও কাঁথার নাম জায়নবাদ। জায়নিজম। ইহুদিবাদী উগ্র জাতীয়তাবাদ।


কোন্ জাদু করে? কোন্ মন্ত্র পড়ে?


এটা পরিকল্পনার ব্যাপার। এটা জেদের ব্যাপার। এটা দৃঢ়তার ব্যাপার। এটা ছলে বলে কলে কৌশলে লক্ষ্য অর্জন করার ব্যাপার। এটা প্রয়োজনে যত ধরনের যা লাগে, সব ব্যবহার করার ব্যাপার। এটা পাগল এবং কাফের টাইটেল পাবার ব্যাপার।


এটা ওই সাহসের ব্যাপার, যে সাহস থাকলে হার্টজেলের মত একজন নাট্যকার ও লেখক বলতে পারে, আমরা সারা পৃথিবীর সব ইহুদি ধনীর সমস্ত সম্পদের অর্ধেক দিয়ে হলেও ফিলিস্তিন কিনে ফেলব- কয়জন ইহুদি ধনী নিজের সম্পদের অর্ধেক দিতে রাজি আছে সে খবরের সে তোয়াক্কাও করে না। এটা সেই পাগলামির ব্যাপার, যে পরিমাণ দৃঢ় পাগলামি থাকলে সে তুর্কি খলিফা সুলতান দ্বিতীয় আবদুল হামিদের সামনে গিয়ে বলতে পারে, আমাদের জেরুজালেমে একটু থাকার জায়গা দিন। আমাদের কাছে বিক্রি করে দিন।


হ্যা, ইহুদিরাষ্ট্রটা আর যাই হোক, কল্যাণরাষ্ট্র নয়। সেই হিসাবে মূল ক্ষেত্রেই ব্যর্থরাষ্ট্র। জায়নবাদ অকল্যাণবাদ। উগ্র জাতীয়তাবাদ ও বর্ণবাদ।


কথা এসব না। কথা হল, কখন পরিবর্তন হয়, কীভাবে পরিবর্তন হয়, কতটুকু চেষ্টা ও দৃঢ়তা থাকলে অন্যান্য পরিস্থিতি পরিবর্তনের অনুকূলে চলে আসে.....

0 comments

Kommentare


Enjoy
Free
E-Books
on
Just Another Bangladeshi
By
Famous Writers, Scientists, and Philosophers 
click here.gif
lgbt-bangladesh.png
click here.gif

Click Here to Get  E-Books

bottom of page