কিছুই তো হলো না
মা বলতেন স্কুল কলেজ জীবনে তিনি বেশ ভালো অভিনয় করতেন।অনেক নাটকে অভিনয় করেছেন।যেদিন ডাক্তারি রিপোর্টে ধরা পড়লো আমার ব্রেইন টিউমার,আমি সেদিন বুঝে গেলাম মা মিথ্যে বলেছেন,তিনি আসলে জঘন্য অভিনেত্রী। ডাক্তার সাহেব ঘুমিয়ে পড়ার সময় বেধে দিলেন,এই আর অল্প কয়টা মাস,তারপর এইসব ক্লান্তি ভুলে ঘুম আর ঘুম।এই খবর শোনার পর সবাই এমন স্বাভাবিক ভাবে আমার সাথে ব্যবহার করতে লাগলো যে মৃত্যু অতি আনন্দময় পিকনিক টাইপ ব্যাপার।আগেই বলেছি মা জননী খারাপ অভিনেত্রী,তিনিই একমাত্র মুখভঙ্গি স্বাভাবিক রাখতে পারছেন না,সেই রিপোর্ট দেবার দিন থেকে চোখের একুয়াস হিউমারের সুইচ গেট খুলে দিয়েছেন।
আমি বেশ আনন্দেই কাটাচ্ছি,কেন জানি পিকনিক পিকনিকই লাগছে।চারপাশটা একটু বদলে গিয়েছে।যে ছোটভাই কখনো ওর ব্যাটবল ধরতে দিতো না সে বললো তুই চাইলে নিতে পারিস।বদের বদ বড় আপুটা তার গল্পের বই ধরলেই গাট্টা দিতো,বেচারী এখন বইয়ের উপর থেকেও অধিকার ছেড়ে দিয়েছে। আমি সত্যিই বুঝে গেলাম চারপাশটা বদলে গিয়েছে যেদিন দেখলাম কিপটার কিপটা বন্ধুটাও খাওয়ালো আমাকে। মারা যেতে আমার কষ্ট নেই,কিন্তু বোকা মহিলাটা আমায় ছাড়া কীভাবে থাকবেন এটাই একটু কষ্ট দেয়।এক রাতে আমি না খেয়ে ঘুমিয়েছি,রাত চারটার দিকে ক্ষুধা লেগেছে তো উঠে বিস্কুট খুজছি তখন মা উঠে গরম ভাত রেধে ডিম আর আলু ভেজে খাওয়ায় দিলেন।আমি না থাকলে এই পাগলামি কার সাথে করবেন?তাই আর কিছুদিন বাচতে মন চায়।মাকে ডুপ্লেক্স বাড়ি দামি গাড়ি কিনে দেবো বলেছিলাম,কোনো একটা আসরে বন্ধুদের অবাক করে সব বিল আমিই দেবো ভেবেছিলাম,কিছুই তো হলো না।আহারে,আর কটা দিন থাকলে মন্দ হতো না। মাঝে মাঝে একটু রাগ হয়,একটা কচ্ছপ কেনো পাঁচশো বছর বাঁচবে?আমাকে কেন এখনই চলে যেতে হবে?
মাঝে মাঝে একটু রাগ হয়,একটা কচ্ছপ কেনো পাঁচশো বছর বাঁচবে?আমাকে কেন এখনই চলে যেতে হবে?মাঝে মাঝে একটু আফছোছ হয়,চাঁদের আলোর ফিনকীফোটা জোছনা জানালা দিয়ে আসবে,ঝুম বর্ষা হবে,সন্ধ্যে বেলায় গীটারের আসর জমবে নদীর পাড়ে,টং দোকানে ধুমচে আড্ডা হবে,তাসের আসর বসবে...আর আমি থাকবো না!কোন মানে হয়? মাথা ব্যাথা করছে,আর লিখবো না।মা আমাকে শক্ত করে জড়িয়ে ধরে আছেন,কাঁদছেন।এ অবস্থায় মিস্টার আজরাঈল এলেও সিওর ভাববেন,নাহ বড্ড যন্ত্রণা হলো তো,একে ক্যামনে নিয়ে যাবো?
Comments