কর্ণ এবং পঞ্চ পাণ্ডবের জন্মবৃত্তান্ত
বসুদেবের পিতা যদুশ্রেষ্ঠ শূরের পৃথা( শ্রীকৃষ্ণের পিসী) নামে এক কন্যা ছিল।শূর তার পিতৃপরিচিত নিঃসন্তান কুন্তিভোজকে সেই কন্যা দান করেন।পালক পিতার নামানুসারে পৃথার অপর নাম হয় কুন্তী।একদিন ঋষি দুর্বাসা অতিথিরূপে গৃহে এলে কুন্তী তার পরিচর্যা করলেন,তাতে দুর্বাসা তুষ্ট হয়ে একটি মন্ত্র শিখিয়ে বললেন,এই মন্ত্র দ্বারা তুমি যে যে দেবতাকে আহবান করবে তাঁদের প্রসাদে(কৃপায়) তোমার পুত্রলাভ হবে।কৌতুহলবশত কুন্তী সূর্যকে ডাকলেন।সূর্য আবির্ভূত হয়ে বললেন,অসিতনয়না,তুমি কি চাও? দুর্বাসার বরের কথা কুন্তী জানিয়ে সূর্যের কাছে নতমস্তকে ক্ষমা চাইলেন।সূর্য বললেন,তোমার আহবান বৃথা যাবে না,তুমি পুত্রলাভ করবে।কুন্তীর দেবতুল্য এক পুত্র হল।এই পুত্র স্বাভাবিক কবচ(বর্ম) ও কুন্ডল ধারণ করেই ভূমিষ্ট হয়েছিলেন,ইনিই পরে কর্ণ নামে খ্যাত হন।
পান্ডুর সহিত কুন্তী ও মাদ্রীর বিবাহের কিছুকাল পর...
একদিন পান্ডু অরন্যে বিচরণ করতে করতে একটি হরিণমিথুনকে শরবিদ্ধ করলেন।আহত হরিণ ভূপতিত হয়ে বলল,কামক্রোধের বশবর্তী মূঢ় ও পাপাসক্ত লোকেও এমন নৃশংস কর্ম করে না।কোন জ্ঞানবান পুরুষ মৈথুনে রত মৃগ দম্পতিকে বধ করে? মূলত ওই হরিণ দম্পতি ছিল কিমিন্দম মুনি ও তার পত্নি।পুত্র কামনায় তারা এভাবে মিলিত হয়েছিলেন।যেহেতু পান্ডু জানতেন না উনাদের পরিচয়,তাই পান্ডুর উপরে ব্রহ্মহত্যার পাপ হয়নি,কিন্তু কিমিন্দম মুনির শাপ ছিল-পত্মীর সহিত মিলনকালে পান্ডুর মৃত্যু হবে।
শাপগ্রস্থ পান্ডু বিলাপ করে সংসার ত্যাগ করলেন।কুন্তী ও মাদ্রীও পতির অনুসারী হলেন।পান্ডু নিজের এবং দুই পত্নীর সমস্ত অলংকার ব্রাহ্মণদের দান করে অরণ্যবাসী হন।নাগশত,চৈত্ররথ,কালকূট,হিমালয়ের উত্তরস্থ গন্ধমাদন পর্বত,ইন্দ্রদ্যুম্ন সরোবর এবং হংসকূট অতিক্রম করে শতশৃঙ্গ পর্বতের তপস্যাকালে বহু ঋষির সাথে তাদের সখ্যতা হয়।উনাদের মাধ্যমেই পান্ডু জানতে পারে তার ভাগ্যে পুত্রলাভ আছে।
পান্ডু নির্জনে কুন্তীকে ডেকে বললেন,তুমি সন্তান লাভের চেষ্টা করো।আমি যেইভাবে জন্মেছি সেইভাবে সন্তান লাভের চেষ্টা করো।কিন্তু কুন্তী পান্ডুকে তপস্যার প্রভাবে তার গর্ভে মানস সন্তান উৎপাদনের কথা বলেন।পান্ডুর তেমন তপবল ছিল না বিধায় কুন্তী পান্ডুকে দুর্বাসার বরের কথা জানায়।
পান্ডুর অনুরোধে প্রথমে ধর্মরাজকে আহবান করা হয়।দৈববাণী হয়- এই বালক ধার্মিকগণের শ্রেষ্ঠ,বিক্রান্ত,সত্যবাদী ও পৃথিবীপতি হবে এবং যুধিষ্ঠির নামে খ্যাত হবে।
তারপর পান্ডুর ইচ্ছাক্রমে বায়ু ও ইন্দ্রকে আহবান করে কুন্তী ভীম ও অর্জুনকে লাভ করেন।
একদিন মাদ্রী পান্ডুর নিকট এসে পুত্রলাভের আশা ব্যক্ত করেন এবং মাদ্রীর হয়ে কুন্তীকে অনুরোধ করতে বলেন।পান্ডুর অনুরোধে কুন্তী রাজী হলেন এবং তার উপদেশে মাদ্রী অশ্বিনীকুমারদ্বয়কে আহবান করে নকুল ও সহদেব নামে যমজ পুত্র লাভ করলেন।
মহাভারত-আদিপর্ব
Comments