এ পরিস্থিতি থেকে পরিত্রাণ পেয়ে প্রাণ বাঁচানোর কোনো উপায় আছে?
করোনাভাইরাস বাংলাদেশে আসেনি বলে সেটার জন্য এখনো মাস্ক কেনার তাড়া নেই। তবে আমার ক্রনিক রাইনোসাইনাসাইটিস ও সিভিয়ার ডাস্ট অ্যালার্জি আছে আছে বলে, ধুলোবালিতে ইনফেকশন হয়ে সিরিয়াস হয়ে যায়, তাই আমাকে রাস্তায় গেলে নিয়মিত মাস্ক ব্যবহার করতে হয়।
গত ৭/৮ বছর ধরেই প্রেসক্লাবের উল্টোদিকে সার্জিক্যাল মার্কেট থেকে প্রতিবার ২/৩টা করে সার্জিক্যাল মাস্কের বক্স কিনি। এক বক্সে ৫০টা করে থাকে, ২ বক্সে পরিবারের মাস ছয়েক চলে যায়।
তো বাসায় মাস্ক শেষ হয়ে যাওয়ায় পরশু ওখানে মাস্ক কিনতে গেলাম। দোকানে দোকানে মাস্ক চাইলাম, সবাই বললো, মাস্ক নেই। প্রায় সব বিক্রেতার মানা করার ধরনে এক ধরনের তাচ্ছিল্য, অনীহা, উগ্রতা এবং, যদি ভুল করে না থাকি, এক ধরনের সূক্ষ্ম/প্রচ্ছন্ন হাসি ছিলো, একটা পাওয়ার এক্সারসাইজের তৃপ্তি, যেন সে পাওয়ারফুল লোক এবং আমি দুর্বল, তার অনুগ্রহের উপর আমি নির্ভর করছি।
৩০টার বেশি দোকান ঘুরে শুধুমাত্র একটা দোকানে ভদ্রলোক দয়া করে একটি বাক্স দিতে রাজী হলেন, স্মিত হেসে দাম চাইলেন ৬০০টাকা, যেটার সচরাচর দাম ৭০-৭৫ টাকা। আমি হতাশ হয়ে করোনাভাইরাসের জন্য প্রেসক্রাইবড N95 মাস্কের দাম জিজ্ঞেস করলাম, সেটার বক্স চাইলেন ১২,৫০০/- (বারো হাজার পাঁচ শত) টাকা। মনটা খারাপ হয়ে গেলো। কিছু না কিনেই ফিরে এলাম।
মানুষ বাটে পড়লে তাদেরকে জিম্মি করে ব্যবসায়ীদেরকে লাভের প্রবণতা এদেশে নতুন নয়। খাবারে-ফলে-সবজিতে বিষ/ভেজাল/কার্বাইড/ফরমালিন মিশিয়ে ধীরে ধীরে আমাদেরকে মেরে ফেলার বন্দোবস্ত ব্যবসায়ীরা করেই রেখেছেন। এবার শুরু হয়েছে দ্রুত মৃত্যুর জন্য ডিরেক্ট একশন। করোনাভাইরাস দূরে থাক, ধুলোবালির এলার্জি থেকে বাঁচার জন্যও মাস্ক পাচ্ছি না। তারা স্টক করে লুকিয়ে রেখে দিয়েছে, দিচ্ছে, সময়মতো অতিচড়া দামে ছাড়ার জন্য।
যদি করোনাভাইরাস দেশে আসে, আপনি দোকানের সামনে মরে পড়ে থাকলেও তাদের কিচ্ছু যায়-আসে না, তাদের চাই কাঁড়ি কাঁড়ি টাকা। সেটা আপনার প্রাণের বিনিময়ে হলেও। প্রতি বক্স ১২,৫০০/- টাকা করে প্রতি বার কিনতে থাকার সামর্থ্য কতজনের আছে? নিকৃষ্টতার লেভেল নামাতে নামাতে তারা এখন মানুষের প্রাণ নিয়ে ব্যবসা করছে। আর কত নিচে নামবে? কাকের মাংস কাক খায় না, কিন্তু মানুষের মাংস মানুষ খাবে। মানুষকে কিডন্যাপ করে মেরে ফেলে, গরু/খাসীর মাংসের মধ্যে মানুষের মাংস মিশিয়ে বিক্রি করাই শুধু বাকি আছে এখন।
নৈতিকতার ধ্বংস হয়ে জাতিগতভাবে নিকৃষ্ট হতে থাকলে কে কাকে দোষ দিবে? শুধু ব্যবসায়ীদের দোষারোপ করেই বা কী হবে? রাজনীতিবিদ, আমলা, সরকারী অফিস, ডাক্তার, ইঞ্জিনিয়ার, আইনজীবী, সাংবাদিক, শিক্ষক, পরিবহন শ্রমিক, প্রাইভেট কার ড্রাইভার, সিএনজি/রিকশা ড্রাইভার, দারোয়ান, কাজের লোক ইত্যাদি কোন্ শ্রেণীপেশার মানুষের অধিকাংশের সার্ভিসে খুব খুশি আপনি? কোথায় কার কাছে গিয়ে একটু স্বস্তি পাবেন? স্বস্তি তো অনেক পরের ব্যাপার। ব্যবসায়ীরা তো এবার আর আপনাকে বাঁচতেই দিবে না।
コメント