এভাবেই না হয় ভালোবাসা গুলোর নতুন করে জন্ম হোক
রিয়া ঢাকার একটা ইউনিভার্সিটিতে পড়ে। বন্ধুদের সাথে মেসে থাকে সে। ক্লাস শেষ করে ৫টা টিউশানি করে বাসায় ফিরতে ফিরতে রাত ১১টা হয়ে যায় প্রায়। বন্ধুরা যখন ক্লাস শেষ করে আড্ডা দেয় বা কোথায় দলবেঁধে খেতে যায় তখন রিয়া ব্যাগ কাধে নিয়ে লোকাল বাসে ঝুলে ঝুলে টিউশানি করতে যায়। সাপ্তাহিক ছুটিতে সবাই যখন সিনেমা দেখতে যায় বা কোথাও ঘুরতে যায় তখন রিয়া ঘরের জমে থাকা কাজ শেষ করে লিখতে বসে। বিভিন্ন অনলাইন পোর্টালে ফিচার লিখতে হয়। খুব বেশি হয়ত টাকা পাওয়া যায়না তবে যা পাওয়া যায় খারাপ না। আর লিখতে যেহেতু ভালো লাগে তাই ছুটির দিনে রিয়া মনে ভরে লিখে। আজকে টিউশন শেষ করে বের হতে হতে একটু বেশি দেরি হয়ে গেছে। স্টুডেন্টের এক্সাম সামনে তাই অনেকক্ষণ পড়াতে হল। রাস্তায় নেমে খুব ক্লান্ত লাগছিলো রিয়ার। ঘড়িতে সময় বলছে এখন ১০ টা ২৩ মিনিট। গলি থেকে বের হয়ে মুল রাস্তায় এসে ১০ মিনিট দাঁড়ানোর পর একটা ডাবল ডেকার বাস পেলো। মোটামুটি ফাঁকা ছিলো তাই পেছনের দিকে একটা সিটে বসে কানে হেডফোন দিয়ে বাইরে তাকালো। রাতের শহরটা আসলেই একেবারে আলাদা। দিনের শহরের সাথে একদম মিল নেই। ভাবতে ভাবতে জানলায় মাথা রেখে ঘুমিয়ে পড়ে।
রাসেল, তারেক, অর্ক, ইমু, সোহান ও ইমরান অফিস শেষ করে প্রতিদিন মধ্য রাত অব্ধি আড্ডা দেয় পেট্রোল পাম্পের কাছে খালেক মামার টং দোকানে। সবার বাসা কাছাকাছি তাই এত রাত পর্যন্ত আড্ডা দেয়। আজকে ইমুর জন্মদিন তাই সবাই মিলে কেক কাটবে কিন্তু ইমু জানেনা যে কেকে এনেছে। তারেক ঘড়িতে সময় দেখে রাত ১১ টা ৪৫ মিনিট। ইমুকে চমকে দিতেই এই আয়োজনের আইডিয়া করেছে ইমরান।
সোহান কেক আর মোমবাতি রেডি করবে তাই ইমুকে নিয়ে সবাই টং ছেড়ে রাস্তার দিকে যায় যাতে ইমু বুঝতে না পারে। ঠিক ওই সময় রাস্তা দিয়ে একটা ডাবল ডেকার বাস যাচ্ছিলো। বাসের দিকে চোখ যেতেই ইমরানের বুকটা কেঁপে উঠে আর মাথাটা ফাঁকা হয়ে যায়।
কোমরের নিচে একটা শক্ত হাতের স্পর্শে রিয়ার ঘুম ভেঙ্গে যায়। চিৎকার করতে গেলে আরেকটা হাত মুখের উপর চেপে বসে। রিয়া চিন্তা করার চেষ্টা করে কি হচ্ছে? সে কি ঘুমের মধ্যে এটা দেখছে? নাকি আসলেই হচ্ছে! খুব ক্লান্ত থাকার কারনে বাসে উঠেই ঘুমিয়ে পড়ে আর সব যাত্রিরা নেমে যাওয়ার কারনে সে একা হয়ে যায় বাসে। আর এই সুযোগে বাসের হেল্পার কন্ডাক্টার তার উপর আক্রমণ করেছে। এখন রিয়ার কাছে সব ক্লিয়ার কিন্তু সে কি করবে এখন। রাস্তায় তেমন মানুষ নেই। চিৎকার করতেও পারছেনা।
............... ওই বাস থামা ... পুলিশ আসতেছে ......... রিয়া কয়েকটা ছেলের গলা শুনে একটু বেঁচে থাকার আশা পেলো কিন্তু ভয় পেলো যদি তাকে জানালা দিয়ে ফেলে দেয়। বাসের হেল্পার কন্ডাক্টার তো প্রায় এই কাজ করে নিউজে পড়েছে! ভয়ের একটা শীতল স্রোত ভয়ে গেলো। তীব্র ভয়ে হেলুসিনেশান হতে থাকে, সবকিছু কেমন জানি ঝাপসা হয়ে যাচ্চবে! আচ্ছা আমি কি মারা যাচ্ছি? অজ্ঞান হয়ে যায় রিয়া।
ইমরানের চোখ বাসের দিকে যেতেই সে দেখে বাসের একেবারে পেছনের দিকে একটা মেয়ের সামনে দুজন লোক কিছু করার চেষ্টা করছে। ইমরানের বুঝতে কষ্ট হয়না আসলে কি হতে যাচ্ছে। আজকাল প্রায় এসব হচ্ছে। ইমরান ঠান্ডা মাথায় ভাবে কি করা যায়। বাসের নাম্বার দেখতে পারেনি তাই পুলিশকে বলে হয়ত তেমন কিছু হবেনা তবুও মুহূর্তেই ৯৯৯ এ ফোন দিয়ে বিস্তারিত বলে। তারপর তাদের কাছে থাকা ২টা বাইক নিয়ে ৪জন মিলে বাসের পিছু নেয় আর ইমুকে বলে সোহানকে নিয়ে কোন একটা পুলিশ বক্সে গিয়ে জানাতে।
কিছুদূর যেতেই বাস পেয়ে যায়। বাসের ড্রাইভারকে বাস থামাতে বলায় সে আরো জোরে বাস চালাতে থাকে। ইমরান আবার ৯৯৯ এ ফোন দিয়ে তাদের লোকেশান বলে। কয়েক মিনিট পরেই সামনে পেছন থেকে পুলিশের সাইরেন শোনা যায়। সোহান আর ইমু একটা পুলিশকে ঘটনা খুলে বলায় তারা সাথে সাথেই চলে আসে। পুলিশের গাড়ি আসাতে গাড়ি আরো দ্রুট চালিয়ে তারা পালাতে চায় কিন্তু সামনেই আরেকটা পুলিশের গাড়ি ব্যারিকেড দেয়াতে বাস থামাতে বাধ্য হয়।
রিয়াকে হাসপাতালে নেয়া হয় পুলিশের গাড়িতে করেই। ইমরানরা সবাই মিলে হাসপাতালে অপেক্ষা করতে থাকে। ডাক্তার একটুপর এসে জানায় যে তেমন কিছু হয়নি। প্যানিক অ্যাটাকের কারনে অজ্ঞান হয়েছিলো।
সবাই চিৎকার দিয়ে ওঠে খুশিতে।
ইমরান ঘড়ির দিকে তাকিয়ে দেখে রাত ২টা। সবাই মিলে ইমুকে বলে শুভ জন্মদিন বন্ধু। দুঃখিত যে তোর কেক কাটা হলনা। ইমু বলে – আমার জীবনের সেরা জন্মদিন আজকেই। মনে হল নতুন করে আবার জন্ম নিলাম।
Comments