এটা কোন হিরোদের ও কাজ না
আমি আর আম্মা সারারাত হাসপাতালের বারান্দায় বসে ছিলাম। ঘুম আসছিল না। কারন আজ সকাল পর্যন্ত আব্বা ভালো ছিল। দুজনে একসাথে হেসে হেসে গল্প করছিলাম। হঠাৎ এক অজানা ঝড়ের মতো কখন এসে সব উলট পালট করে দিয়ে চলে গেল।
হাসপাতালের বেডে আব্বা বার বার প্রসাব করে দিচ্ছিল। রাতে আব্বার লুঙ্গি দুইটা নষ্ট হয়েছে । শেষে ক্যাথেটার লাগানো হয়েছে। এখনো একটা লুঙ্গি ব্যাগে পড়ে আছে। সারা শরীরে ইসিজির পোর্ট লাগানো তাই শার্টটাও খুলে রাখছি।
সকালে ঘুমের ভাবটা দূর করার জন্য বাইরে থেকে চা আনতে গেছিলাম। দেখলাম এক পাগল উলঙ্গ অবস্থায় রাস্তার মাঝখানে বসে আছে। রাস্তার পাশেই মহিলা হোস্টেলের গেহট। পাগলটার শরীর বেশ নোংরা। আশেপাশে লোকজন তাকে পাশ কেটে চলে যাচ্ছে। কেউ দেখেও না দেখার ভান করছে। দৃশ্যটা দেখে আমার নিজের কাছে কেমন লজ্জা লাগছে।
আমি আবার হাসপাতালের দুতলায় ফিরে গেলাম। আম্মার কাছ থেকে বাবার শেষ লুঙ্গিটা চেয়ে নিলাম সাথে শার্টটাও নিয়ে নিলাম। আম্মা কোন প্রশ্ন করলো না। আমি ভাবছি বাসায় গিয়ে পরে নিয়ে আসবো আব্বার জন্য।
প্রথমে ভয় পাচ্ছিলাম পাগলটা মারবে না তো। তবুও সাহস করে এগিয়ে গেলাম। রাস্তা পাড় হয়ে পাগলটাকে নিজ হাতে লুঙ্গি আর শার্টটা পরিয়ে দিলাম। দেখলাম সে চুপচাপ দাঁড়িয়ে আছে। হাত দিয়ে ইশারা দিচ্ছে কিছু খাবে আর হাসছে। তারপর তাকে ডেকে পাশের চায়ের দোকানে নিয়ে গেলাম। হাতে একটা বনরুটি দিলাম। সে মুখে পুরো বনরুটি চিবিয়ে দিল। পানির বোতলটা এগিয়ে দিলাম। এবারও আশেপাশে মানুষ তাকিয়ে আছে। এক সিএনজি ড্রাইভার বললো, ভাইজান এদের কিছু পরিয়ে লাভ নাই একটুপর আবার খুলে ফেলে দিবে। উত্তরে বললাম, ফেলে দিলে আবার পরিয়ে দিবো দরকার হলে সূতা দিয়ে বেঁধে দিবো লুঙ্গিটা। তবুও এভাবে রাস্তায় মাঝখানে! না,
মনে মনে বললাম, আমি তো কোন হিরো না। এটা কোন হিরোদের ও কাজ না। এটা আমাদের সবার দায়িত্ব।
আব্বার আর এক্সট্রা লুঙ্গীর প্রয়োজন পড়েনি। বিকেলে আব্বা মারা গেলেন। আব্বাকে এম্বুলেন্সে করে নিয়ে যাচ্ছিলাম। দেখলাম রাস্তার পাশে আব্বার শার্ট আর লুঙ্গি পরা পাগলটা দাঁড়িয়ে আছে। আর হাসছে। তার মুখের হাসিটা অনবদ্য!
Comments