top of page
Writer's pictureJust Another Bangladeshi

এক ডাক্তার জ্বিনের বাস্তব ঘটনাঃ ৪র্থ

মাহদী হাসতে হাসতে বলে, দারুণ প্রশ্ন করেছো কিন্তু। সঁন্ধ্যা হয়ে যাচ্ছে। তুমি বাসায় যাবেনা? তোমার বাসায় চিন্তা করা শুরু করবে তো?

আমি ছেলেমানুষী বরাবরই। তাই ওকে বলি আমার বাসায় গিয়ে দেখে আসো সেখানে কি হচ্ছে। মাহদী এই কথা শুনে আবারো হাসে। আমি অবাক চোখে ওর সেই ভুবনভুলানো হাসির দিকে চেয়ে থাকি! ও বলে, নাহ! আমি সেটা পারিনা। তোমরা ভাবো যে আমরা ইচ্ছে করলেই হয়তো মানুষের বাসায় যেতে পারি, থাকতে পারি। হ্যাঁ, অনেকেই সেটা করে। আমাদের মধ্যে একটা জাতি এমন আছে। ওরা মানুষের ঘরেই কাটায়। নিজেদের মত করে। ভুলেও টের পেতে দেবেনা যে তারা আছে। দেখার চেষ্টাও করবেনা তোমরা কি করছো। আমাদের ঘ্রাণশক্তি অনেক প্রখর। সেটা দিয়েই আমরা মানবদেহ শনাক্ত পারি অনেক দূর থেকে। শয়তান গুলো মানুষের টয়লেটে গিয়ে হাসি-তামাশা করে। কারণ, দিনশেষে ওরা তোমাদের দেখতে পায় আর তোমরা পারোনা।

জিজ্ঞেস করি, তবে কি তোমরা ট্রান্সপারেন্ট? – হ্যাঁ, আমরা ট্রান্সপারেন্ট। আমাদেরকে সৃষ্টিকর্তা এমন ক্ষমতাও দিয়েছেন যে আমরা তোমাদের শরীরে চলাফেরা করতে পারি। তবে এটা শয়তানেরা করে থাকে। ভালো জ্বীনেরা ভালো মন্ত্রণা দিবে তোমাকে। যাইহোক, আরেকটা মজার কথা বলে রাখি। তোমাদের মানুষের শরীরে সুগার লেভেল নিয়ে অনেক সমস্যা। সেটার কারণে ডায়াবেটিস। আর একটাবার এই ডায়াবেটিস হলে সেটাকে কন্ট্রোল করে বেচেঁ থাকাটা একটা যুদ্ধ। কিন্তু আমাদের আবার সেসব সমস্যা নেই।

আমি কিছুটা অবাক হই, কিসের মধ্যে কি? বলি, এই, তুমি এখন ডায়াবেটিস এর কথা নিয়ে এলে কেন? – কারণ, আমরা আসলেই মিষ্টি খেতে ভালোবাসি। মানুষদের মধ্যে আমাদের নিয়ে এই কথা খুব প্রচলিত। আর এটা সত্য। বাস্তবে আমরা অনেক ভালো মিষ্টিও বানাতে পারি। তবে আমাদের তৈরী মিষ্টি খেলে তুমি হয়তো হুঁশ হারিয়ে ফেলবে। মানুষের চাইতে আমরা ভালো মিষ্টি বানাতে পারি। আর অনেক মজার মজার কথা শুনে থাকতে পারো যে মিষ্টির দোকান থেকে নাকি মিষ্টি চুরি হয়ে যায়। জ্বীনে এসে নাকি মিষ্টি চুরি করে নিয়ে যায়। কতকিছু। কিন্তু এর শতভাগ মিথ্যে কথা। আমরা কখনোই মানুষের কিছু চুরি করতে পারিনা বা জ্বীন হিসেবে ব্যবহারও করতে পারিনা। কোনো কিছু হারিয়ে গেলেও মাঝেমাঝে আমাদের নামে দোষ দেয়া হয় যে জ্বীন নিয়ে গিয়েছে। আরো কত কি! এখন বলি, কেন আমরা মানুষের কোনো কিছু চুরি করতে পারিনা। কারণ, জ্বীনরূপে কোনো সলিড কিছু আমরা স্পর্শ করতে পারিনা। মানুষরূপেই সেটা কেবল সম্ভব। আর মানুষরূপে এসে সেটাকে অদৃশ্য করতে না পারার বৈজ্ঞানিক কারণ হলো, আমরা ভিন্ন ডাইমেনশনে বসবাসকারী। যখন ঐ দ্রব্যকে আমাদের ডাইমেনশনে নিয়ে যাবার চেষ্টা করবো, ঠিক তখনই সেটা ভেঙ্গে যাবে। মানুষের কিছু পছন্দ হলে সেটা আমরা বানিয়ে নিই। যদিও মানুষ যা কিছু ব্যবহার করে সে ধরণের জিনিস আমরা ব্যবহার করিনা। কারণ হলো, আমাদের নিজেদেরও তো একটা সংস্কৃতি আছে তাইনা? আমরা সেটা মেনে চলার চেষ্টা করি। আর যেটা জিজ্ঞেস করছিলে সে সময় যে আমাদের খাবার দাবার আমরা কিভাবে সংগ্রহ করি। আমরা খুব বেশি ফল-মূল খাই। সবজি খাই। আর মাছ-মাংসও অনেক প্রিয়। জ্বীনদের খাবারের তালিকা বেশ লম্বা। তবে এর মধ্যে ফল, মিষ্টি, মাংসের হাড়, আর মাছ সবচাইতে বেশি প্রিয়। কিছু জ্বীন আছে যারা সারাজীবন মাছ খেয়েই কাটিয়ে দেয়। তবে আমাদের মধ্যে ভেজিটারিয়ান নেই। আমরা কোনো জাতিই সবজি খেয়ে টিকে থাকতে পারিনা। এখন কথা হলো, কিভাবে সংগ্রহ করি। খুব সহজ। সমুদ্র বা নদীতে ডুব দিয়ে মাছ, শাক-সবজি আমরা জঙ্গলের মধ্যে নিজেরাই চাষ করি কিংবা সেখান থেকেই সংগ্রহ করি। আর মাংসের ক্ষেত্রে আমরা বন্য পশু খাই। এখন আমরা যেহেতু ভিন্ন ডাইমেনশনের। প্রশ্ন আসবে, কি করে জ্বীন রূপে তবে প্রাণী ধরি। আমাদের ডাইমেনশনে নিয়ে যাচ্ছি কিভাবে। খুব সহজ। তোমাকে বললাম তো, আমাদের ডাইমেনশনে কোনো দ্রব্য নিয়ে গেলে সেটা ভেঙ্গে যায়। আর প্রাণীকে নিয়ে গেলে সে প্রথমে মরে যাবে, তারপরেই তাকে নিতে পারবো। হালাল হারামের ব্যাপার-সেপার আমাদের মধ্যেও আছে। ধরো, যদি কোনো বন্য মহিষ ধরতে যাই বনের মধ্যে। সেক্ষেত্রে মানুষ রূপেই যাবো। সেটাকে জবাই দেব। তবে আজকাল আমরা মানুষের সাথে মিশে যাচ্ছি। কাজ করছি তাদের সাথেই। একই কর্মক্ষেত্রে। টাকা কামাচ্ছি। সেটা দিয়েই আমরা কেনাকাটা করে থাকি। আমাদের খাবারের জন্য ফ্রিজ দরকার হয়না। ওভেন দরকার হয়না। রান্নার জন্য কুকারের দরকার হয়না। কারণ সৃষ্টিকর্তা আমাদেরকে তাপ নিয়ন্ত্রণ করার একটা বিশেষ ক্ষমতা দান করেছেন। সেটা দিয়েই সব করে নিতে পারি।

ঠিক এরই মধ্যে আমার বাবার ফোন আসে। আমাকে বাসায় যেতে বলেন সঁন্ধ্যা হয়ে যাচ্ছে তাই। আমার একদমই যেতে ইচ্ছা করছিল না। কিন্তু যেতে হবে। অনেক প্রশ্ন ও আগ্রহকে সেসময় মাটি চাপা দিয়েই বাসায় আসতে হলো। হেটেঁ হেটেঁ বাসায় এলাম। আসার পথে ফোন কোম্পানির নেটওয়ার্কিং সিগন্যালের ব্যাপারটা আমায় বলেছিল। সেটা ছিল এমন যে মাহদী বা জ্বীনেরা একটা নির্দিষ্টি ফ্রিকোয়েন্সি তৈরী করতে পারে শব্দের মাধ্যমে ও দৃষ্টির মাধ্যমে। তো নিজের ফ্রিকোয়েন্সিকে ফোনের ফ্রিকোয়েন্সির সাথে মিশিয়ে দিয়েই আমার সাথে কথা বলতো। কিন্তু সিগন্যাল ঠিকই কোম্পানি টের পেত।

সেদিন রাতে ওকে ভাবতেই ভাবতেই ঘুমিয়ে পরি। মনের মধ্যে কত শত জল্পনা কল্পনা। ও দেখতে কেমন? বয়স এত, দেখতে বুড়া কিনা। কি খায় না খায়। ভালো কথা মনে পড়ে। ওকে জিজ্ঞেস করতে হবে ও কোথায় থাকে! এসব ভাবতে ভাবতেই ঘুমিয়ে পড়ি। ঘুমের ঘোরেও সে আসে যায়। স্বপ্নে।

সকাল থেকে বিকেল অব্দি টানা অপেক্ষা করতে থাকি। আমার অপেক্ষা যেন শেষই হয়না!

বিকেলে দেখা হওয়া মাত্রই জিজ্ঞেস করি, তুমি থাকো কোথায়? ও বলে, ও ওর নিজের বাসাতেই থাকে। পরিবারের সাথে থাকে।

তো রূপ বদলাও কি করে আর কখন? এই প্রশ্ন শুনে ও হাসে। বলে, অন্ধঁকার মানব শুন্য কোথাও যেতে হয় এর জন্য। এর পরে মিশে যাই।

অন্ধঁকার কেন? – মানুষের চোখ ফাঁকি দিতে। কিংবা মাঝে মধ্যে কলেজের টয়লেট থেকেও উধাও হই। বলেই ও আবার হাসতে থাকে। আবার প্রশ্ন ছোটাই, তুমি টাকা পয়সা পাও কি করে? – আমার মা চাকরি করেন এই ঢাকা শহরেরই একটা নামকরা ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে। মোটা অংকের স্যালারি পান। সেখান থেকে।

আমি এসব শুনি আর অবাক হই। বলি, তোমাদের নিজস্ব কোনো অর্থ নেই? জবাবে ও আমাকে কোনো তথ্য দিতে রাজি হয়না। শুধু এটুকু বলে, এসব প্রশ্ন করোনা। আসলে অনেক পরে এসে জেনেছিলাম যে, সেদিন শয়তান এর কথা কেন ও স্কিপ করেছিল, তারপরে মূদ্রার ব্যাপারটা। তার কারণ, আমাদের আশেপাশে অনেক জ্বীনের চলাফেরা। কিছু খবর বা তথ্য জ্বীন কখনোই মানুষের কাছে বলবেনা। এটাই নিয়ম। কিন্ত সাধারণ তথ্য বা ব্যক্তিগত তথ্য দেয়ার ক্ষেত্রে সমস্যা নেই নাকি! তো এই তথ্য দেয়ার ব্যাপারটা অন্য জ্বীন ধরতে পারলে সমস্যা আছে।

এইবার ওকে বড় একটা ব্যাপার নিয়ে প্রশ্ন করি। সেটা হলো, স্বপ্ন। ও স্বপ্নের ব্যাপারটা আমাকে ব্যাখ্যা করে,

আসলে স্বপ্ন মূলত মস্তিষ্ক নির্ভর। আমরা জ্বীনেরাও স্বপ্ন দেখি। স্বপ্নকে আমরা তিনভাগে ভাগ করি।

১। সৃষ্টিকর্তা প্রদত্ত

২। মস্তিষ্ক কতৃক সৃষ্ট

৩। শয়তান প্রদত্ত

শয়তান প্রদত্ত বলতে আমাদের মহান আদি-পিতা ও তার বিশেষ চ্যালা-প্যালা গণের কাজ বোঝায়। তবে ভোরের আজান হবার পরে শয়তানের এই ক্ষমতা চলে যায়।

আমি প্রথম বারের মত মাহদীকে তার ধর্ম সম্পর্কে জানতে চাই। ও বলে ও ঈসা (আঃ) এর অনুসারী। তবে মোহাম্মদ (সাঃ) কেও মানে। ও আমাকে এটাও জানায় যে বর্তমানে এখনো ওদের কাছে সেই সত্য বাইবেল আছে। মানুষের কাছে যা নেই আর। কারণ মানুষ শয়তানের সাথে চুক্তি করে তার পরিবর্তন ঘটিয়েছে। নিজে ঠিক থেকেছে কিন্তু মানুষকে ঠিক থাকতে দেয়নি। আর মানুষও ক্ষমতার লোভে শয়তানের কাছে নিজেকে সপেঁ দিয়েছে।

এত কথার পরে আমি আমার আর তার সম্পর্ক নিয়ে কথা বলা শুরু করি। ওকে বলি, আমি মানুষ, তুমি জ্বীন। আমাদের বিয়ে কি করে হবে? এটা কি আসলে সম্ভব। আমার এই প্রশ্নের পরে মাহদীকে খুব চিন্তিত দেখায়। ও বলে, আসলে আমি এখানে এসেছিলাম পড়াশুনা করতে। আমার জীবনে যা কখনো হয়নি তাই হলো। কতবার নিজের মনকে বুঝ দিয়েছি তোমার প্রেমে পড়া যাবেনা। পড়লে আমার বিপদ। কিন্তু আমার মন বাধঁ মানেনি। জ্বীন হিসেবে আমার বয়স অনেক হলেও মানুষের বয়স অনুপাতে আমি তোমার চাইতে বছর চারেক বড় হবো। আসলে মানুষ আর জ্বীনের বিয়ে হওয়াটা সম্ভব না। কেননা সন্তান উৎপাদনের ক্ষেত্রে সেটা একটা বড় সমস্যা হয়ে দাড়াঁয়। আমি মানুষ হিসেবেও যদি তোমার সাথে বিয়ে করি, করলাম, তোমার কোনো সমস্যা হবেনা। কিন্তু আমার জাতিতে আমাকে নিয়ে যুদ্ধ বেধেঁ যাবে। আমাদের ব্যক্তি স্বাধীনতা অনেক কম। ব্যক্তি স্বাধীনতা বন্দি থাকে জাতির কাছে। আমাদের বিয়ে হয় এক জাতির মধ্যে। ইসলাম ধর্ম আসার পরে যদিও গোড়াঁমি নেই বললেই চলে কিন্তু জ্বীন জাতিস্বত্ত্বায় বিশ্বাসী। এইখানেই সমস্যা। আমি যদি তোমাকে বিয়ে করি, আমাকে সারাজীবন মানুষ হয়েই বাচঁতে হবে। জ্বীন-রূপে আমাকে পেলে শাস্তি দেয়া হতে পারে। আর আমাদের বিয়ে হলে তোমার মা হবার কথা ভুলে যেতে হবে। আমি এখানে এসেছি জাতির সেবা করতে। কিন্তু এভাবে তুমি জড়িয়ে যাবে। আমি ভাবতেও পারিনি। যদিও সবকিছুর শেষ আমি এখানেই দেখছিনা। কিন্তু আমাকে যেকোনো একটা পথ বেছে নিতে হবে। হয় তুমি নয়তো আমার জাতি।

মাহদীর এসব কথা শুনে আমার চোখের কোণে পানি টলমল করতে থাকে। আমার হৃদয়ে ফোঁটা প্রেমের সমস্ত গোলাপ যেন এক নিমিষে ঝরে পড়তে থাকে। আমি প্রশ্ন করি ওকে, তাহলে তুমি কি বেছে নেবে বলো?

মাহদী কোনো জবাব দেয়না। আমারও আর কিছু বলার থাকেনা। আমি বাসায় চলে আসি। মায়ের চোখ লুকিয়ে ঘরে ঢুকে শুয়ে পড়ি। রাতে খাওয়া হয়না আমার। মাহদীর কাছ থেকে ওসব শোনার পর আসলে আমি পুরোটাই এলোমেলো হয়ে যাই।

দুইদিন পরে ওর সাথে দেখা হয়, ও নিজের থেকেই আমাকে কল দিয়ে ডেকে দেখা করতে চেয়েছে। দেখা করতে গিয়ে দেখি ও একা না। সাথে একজন মহিলা। আমার সাথে উনাকে পরিচয় করিয়ে দেয় মাহদী। ওর মা! অপূর্বা সুন্দরী। গল্পে গল্পে যেমন শুনতাম আরকি! পরীরা নাকি অনেক সুন্দর হয়। উনিও তাই। আমাকে দেখে উনি জড়িয়ে ধরেন। গাড়িতে করে উনার বাসাতে নিয়ে যান। যে এপার্টমেন্ট ভাড়া করে থাকেন সেখানে। আমার ভয় ভয় লাগছিল অনেক স্বীকার করতেই হবে। আর বাসায় ঢোকার পরে যে ঘ্রাণ আমি পেতে থাকি তা যেন আর কোথাও পাইনি। আসলে ওর মাকে দেখার পর থেকে এক্সাইটমেন্টে আমি ঘামছিলাম। ওর মা সেটা খেয়াল করে। আমি কি বলবো বা কি বলা উচিত সেটা আমি খুজেঁ পাচ্ছিলাম না।

আমাকে নিয়ে ওরা দুজন খাবার টেবিলে বসে। এক গামলা মিষ্টি রাখা ছিল। আর মাহদী ফ্রিজ থেকে আরো এক বাটি বের করে নিয়ে আসে। চেয়ারে বসতে বসতে বলে, এই মিষ্টি আমাদের না। তোমাদের মানুষের তৈরী। দোকান থেকে কিনে নেয়া আসা। ফ্রিজে না রাখলে তো নষ্ট হয়ে যাবে। আর ঐ যে এক গামলা মিষ্টি দেখছো ঐটা আমাদের। মাহদীর কথা শেষ হতে না হতেই ওর মা একটা প্রিচে আমার সামনে দোকানের মিষ্টি তুলে দিয়ে বলেন, আজ তুমি পার্থক্য করে দেখবে। কারা ভালো মিষ্টি বানাতে পারে। তোমরা নাকি আমরা। আমার খুবই লজ্জা লাগছিল বলতে হবে।


প্রথমে দোকানেরটা খাই। পরিচিত স্বাদ। এরপরে চোখটা বন্ধ করে মুখের মধ্যে ওদের মিষ্টি পুরে নিই। আমি জানিনা আমি কতক্ষণ আমার চোখ বন্ধ করে ছিলাম। স্বাদে মনে হচ্ছিলো আমি অজ্ঞান হয়ে যাবো। একটা বিশাল বড় মিষ্টি মিষ্টি খাবার পরে আমার পেটে জায়গা ছিলনা। কিন্তু সেই স্বাদ। আমি কখনোই ভুলবোনা! মিষ্টি খাওয়া শেষ হলে, মাহদীর মা আমাকে বলেন, দেখ মিথিলা, আমি সব শুনেছি। আমি এটাও জানি তোমার ভেতরে কি রকম অস্থিরতা চলছে। মাহদীর কাছ থেকে এসব শোনার পরে আমি নিজের থেকেই তোমার সাথে দেখা করতে রাজি হই। আর এই দুনিয়াতে তুমিই একমাত্র নারী যে কিনা আমাদের কথা জানলে। যে আমরা আসলে মানুষ না। আরেকজন যে জানতো সে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের সময় মারা গিয়েছেন। আমি খুব বেশী সময় তোমাকে আটকাবোনা। জানি তোমার বাসায় চিন্তা করবে! আমি আমার সন্তানকে তোমার জন্য দিয়ে দিলাম। সে তোমাকে প্রচন্ড ভালোবাসে। তুমিও তাই। কিন্তু সৃষ্টির বেড়াজালে আমরা বন্দি। হাজার বছরের ইতিহাসে কোনো জ্বীন কখনো কোনো মানুষকে বিয়ে করে সংসার করতে পারেনি। তোমরা বিয়ে করলে নাহয়, কিন্তু সংসার কখনোই সুখের হবেনা। আমার ছেলে যদি তোমাকে বিয়ে করতে চায়, আমাদের ভেতরের দিকটা আমি সামলাবো নাহয়। কিন্তু সুখী কি করে হবে সেটা জানিনা। বাচ্চার মা হতে পারবেনা। কারণ তোমাদের ডিম্বাণুতে কখনোই জ্বীন নিষিক্ত হবেনা। আমরা কিছুই করতে পারবো না দিনশেষে। সৃষ্টিকর্তার বিধানের বাইরে গেলে তার ভয়াবহতা ভিন্ন। আর আজ অব্দি কখনো কোনো জ্বীনের সাথে মানুষের বিয়ে সম্ভব হয়নি। কারণ, মানব-জ্বীন এক হতে পারেনা। আমাদের মাঝে সৃষ্টিকর্তা দেয়াল তুলে রেখেছেন।

মাহদীর মায়ের কথার মধ্যে একটা কথা ছিল – “আমি আমার সন্তানকে তোমার জন্য দিয়ে দিলাম“ – এটা শোনার পরে যে আশার আলো দেখতে পাচ্ছিলাম, সেটাও নিভে গেল। কিন্তু দুইদিনে কষ্ট অনেক সামলে নিয়েছি। তাই নতুন করে সেভাবে আর কষ্ট হয়নি। এতশত কথার পরে বললাম, থাক, আপনি আমাকে বা আমাদের নিয়ে চিন্তিত হবেন না প্লিজ।

ঐ বাসা ছেড়ে আসার আগে মাহদীর মাকে বলি, ছোটবেলা থেকেই পরীদের গল্প শুনে আসছি। আমি কি আপনাকে আপন রূপে একটু দেখতে পারি?

মাহদীর মা তার হাতের ফুল হাতা জামাটা একটু উপরে উচিঁয়ে ধরেন। আমি যা দেখি, তা দেখে আতঁকে উঠি। শক্ত হৃদয়ের না হলে হয়তো নিশ্চিত সে সময় যেকেউ অজ্ঞান হয়ে যেত।

0 comments

Recent Posts

See All

Komentáře


Enjoy
Free
E-Books
on
Just Another Bangladeshi
By
Famous Writers, Scientists, and Philosophers 
click here.gif
click here.gif

Click Here to Get  E-Books

lgbt-bangladesh.png
bottom of page