আরব ইসরায়েল প্রশ্নে বাংলাদেশের অবস্থান
যুদ্ধের সময় ইসরায়েলের কি ভূমিকা ছিলো, বাংলাদেশকে স্বীকৃতি এবং দুই দেশের মধ্যে কূটনৈতিক বিচ্ছিন্নতার বিষয়েও জিজ্ঞাসা ছিলো তার। সংক্ষেপে বিষয়টা তুলে ধরছি।
মুক্তিযুদ্ধকালীন বাংলাদেশ সরকার, যা মূলত আওয়ামী লীগের সরকার ছিলো, শুরু থেকেই আরব ইসরায়েল প্রশ্নে আরবদের পক্ষে অবস্থান নেয় এবং তা অব্যহত রাখে। ১৯৬৭ সালের ‘ছয়দিনের যুদ্ধ’ শেষে খার্তুম সম্মেলনে গৃহীত 'ইসরায়েলের সঙ্গে কোনো চুক্তি নয়, কোনো আলোচনা নয়, তাদের স্বীকৃতি নয়' নীতিটা মেনে চলে স্বাধীনতাযুদ্ধকালীন এবং এর পরবর্তী সরকার। প্রসঙ্গত বলতে হয় ১৯৬৯ সালের শুরুর দিকে আল আকসা মসজিদে আগুনে দেওয়ার প্রতিবাদে বিশ্বের সবচেয়ে বড় প্রতিবাদ সমাবেশটি হয়েছিলো পূর্ব পাকিস্তানে বা বাংলাদেশে এবং তা হয়েছিলো আওয়ামী লীগের নেতৃত্বে (মুসলিম ওয়ার্ল্ড বুলেটিন, মার্চ ১৯৬৯, পুনরুক্ত বৈরুতের দৈনিক সোয়াত আল উরুবায় ৬ নভেম্বর ১৯৭১)। সেসময় নির্বাচনকালীন তহবিল সংগ্রহের পাশাপাশি পালেস্টাইনের মুক্তিযোদ্ধাদের জন্যেও (পিএলও) অর্থ সাহায্য তোলে আওয়ামী লীগ এবং তা পাঠিয়ে দেয়া হয় ইয়াসির আরাফাতের কাছে।
১৯৭১ সালের ৭ জুলাই কায়রো থেকে প্রকাশিত আল আহরাম পত্রিকায় দেওয়া এক সাক্ষাতকারে পিএলও প্রধান আরাফাত বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের প্রতি সমর্থন জানিয়ে বলেন বাঙালীরা ফিলিস্তিনীদের মতোই তাদের মাতৃভূমির জন্য লড়ছে। একইসময় জর্দান সেনাবাহিনীর সহযোগিতায় থাকা পাকিস্তানী সেনা অফিসারদের বিরুদ্ধে তিনি পিএলও যোদ্ধাদের গুলি করে হত্যার অভিযোগ আনেন। ইসরায়েল প্রশ্নে বাংলাদেশ সরকারের অনড় অবস্থানের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ দলিলটির হদিস মেলে সেপ্টেম্বরে। ভারতীয় পত্রপত্রিকা গুলোয় খবর বের হয় ইসরায়েল সরকারের কাছে অস্ত্র সাহায্য চেয়েছে বাংলাদেশ এবং মাহমুদ কাশেম নামে এক ব্যক্তি বাংলাদেশ সরকারের পক্ষ থেকে ইসরায়েলের সঙ্গে যোগাযোগ করেছেন। ১৮ সেপ্টেম্বর এক প্রেসনোটে খবরটি অস্বীকার করে বাংলাদেশ সরকার। বিবৃতিতে বলা হয় ইসরায়েলের কাছে বাংলাদেশ কোনো প্রতিনিধি পাঠায়নি, কেউ যদি গিয়ে থাকেন তাহলে সেটা তার ব্যক্তিগত স্বার্থে এবং উদ্যোগে যার সঙ্গে সরকারের কোনো সম্পর্ক নেই এবং এই বিষয়ের কোনো দায়ও সরকার নেবে না।
আমাদের মুক্তিযুদ্ধকে আরব বিশ্ব পাকিস্তানের আভ্যন্তরিন সমস্যা বলে এড়িয়ে গেছে। একমাত্র পালেস্টাইন ছাড়া। ডিসেম্বরের মাঝামাঝি পাকিস্তান বিমান বাহিনীর শক্তি বাড়াতে যুক্তরাষ্ট্রের অনুরোধে এফ সিক্সটিন জঙ্গি বিমান পাঠায় জর্ডান। বিনিময়ে তাদের প্রতিশ্রুতি দেওয়া হয় এই অরক্ষিত সময়কালে তাদের ওপর ইসরায়েল কোনো হামলা চালাবে না। এই সমঝোতা আমাদের মুক্তিযুদ্ধের বিপক্ষে ছিলো।
১৯৭২ সালের ৪ ফেব্রুয়ারি বাংলাদেশকে আনুষ্ঠানিকভাবে স্বীকৃতি জানিয়ে একটি চিঠি পাঠায় ইসরায়েল। সেখানে তাদের পাল্টা স্বীকৃতির অনুরোধ ছিলো। বাংলাদেশ সরকার পুরো বিষয়টি উপেক্ষা করে এমনকি ধন্যবাদ জানিয়ে কোনো চিঠিও পাঠায়নি। বরং পাসপোর্টে "ALL COUNTRIES OF THE WORLD EXCEPT ISRAEL". শর্ত দিয়ে ইসরায়েল রাষ্ট্রের স্বীকৃতি এবং কোনোরকম কূটনৈতিক সম্পর্ক স্থাপনের রাস্তাটাও বন্ধ করে দেয়। ওয়ার্ল্ড ট্রেড অর্গানাইজেশনে দুদেশ থাকলেও তাদের মধ্যে কোনো বানিজ্য চুক্তি নেই কারণ ইসরায়েলকে বাংলাদেশ স্বীকৃতি দেয়নি।
পুনশ্চ: আমাদের মুক্তিযুদ্ধে ইসরায়েলের অবস্থান যাই থাক, প্রচুর ইহুদি আমাদের পক্ষে কাজ করেছেন, অর্থ সাহায্য তুলেছেন, শরণার্থী শিবিরে ত্রান দিয়েছেন সেবা করেছেন, যুদ্ধ পর্যন্ত করেছেন। আমাদের একমাত্র বিদেশী বীরপ্রতীক উইলিয়াম এ এস ওডারল্যান্ড তাদের একজন.
Comments