অশরীরীর মায়াঃ পর্ব ৩
রকির অফিসে একাউন্টিং এ, নতুন একটা মেয়ে জয়েন্ট করছে! সবার মুখে একই বাক্য. যেই চেহেরা, সেই স্মার্ট! তো অফিসের বস, সবার সাথে পরিচয় করিয়ে দেয়ার জন্যে হলরুমে ডাকলেন! সবাই হাই, হ্যালো করলো.. শুধু রকি হাঁ করে তাকিয়ে থাকলো!
রকি অাজ থেকে দু'বছর অাগে হারিয়ে গেলো যেন! সেই চোখ, সেই নাক, সেই মুখ, শুধু চেহারার অাদলটা একটু পরিবর্তন। মনে হচ্ছে তুলির মাস্টার কপি! এসি রুমে থেকেও, রকির শরীর ঘামে ভিজে যাচ্ছে। তাই ওয়াশরুমের নাম করে হলরুম ত্যাগ করলো!!
ফোনটা বের করেই, প্রথমে জনিকে জানানোর জন্য কল দিতে গিয়েও থমকে গেলো কারণ "জনিতো কোমায়"! তবে অাবিদ ও রাফসান?? কিন্তু।
কিন্তু, গাড়ি এক্সিডেন্ট করার পর অাবিদকে খুঁজে পাওয়া যায়নি! ৮০০ ফুট উচু ঢাল থেকে গাড়ি নীচে পড়ে যায়, এবং গাড়ি শর্টসার্কিট হয়ে অাগুনে ঝলসে যায়। সবার ধারণা, হয়তো অাবিদ অাগুনে পোড়ে গেছে নয়তো জঙ্গলের কোথাও ছিটকে পড়ে গেছিলো শিয়াল, হায়েনাতে খেয়ে নিছে! রাফসান অবশ্য সাহস ও বুদ্ধির জোরে বেঁচে যায় কারণ গাড়ি রাস্তা থেকে ছিটকে নীচে যাবার অাগেই লাফ দিয়ে রাস্তায় পড়ে যায়! যদিও বেঁচে গেছে কিন্তু শরীরের বিভিন্ন অংশে ছিড়ে, ফেটে, কেটে, হাড় ভেঙে এবং মাথা জখম হয়ে হসপিটালে মুমূর্ষু অবস্থায় শয্যাশায়ী!!
তাই রাফসানকেও কথাটা জানানো উচিৎ নয়, মনে করলো রকি। অফিস ছুটি নিয়ে গাড়ি ড্রাইভ করে সোজা চলে যায় সেই জঙ্গলে, যেখানে তুলিকে ধর্ষণ করে মাটিচাপা দেয়া হয়েছিলো। কিন্তু অনেক খুঁজাখুঁজি করেও কোন আলামত পেলো না, যা থেকে মনে হয় তুলি বেঁচে অাছে বা তুলি সিউর মরেই গেছে!
হতাশাগ্রস্ত হয়ে, গাড়ি নিয়ে ব্যাক করতে যাচ্ছে এমন সময় দেখতে পেলো বোরকা পরা একটি মেয়ে দৌড়ে গাড়ির দিকে অাসতেছে। এ গহীন জঙ্গলের ভিতরে মেয়েটার উপস্থিতিতে, রকি যেমন চমকে গেলো তেমনি শিহরিত হলো! ঘটনা কি??
মেয়েটা দৌড়ে এসে গাড়ির সামনে দাঁড়ালো, রকি ড্রাইভিং সিটে বসেই গ্লাস ডাউন করে বলল,
-- Any problem??
মেয়েটা কোন উত্তর দিলো না শুধু হাঁপাচ্ছে! বড় বড় শ্বাসপ্রশ্বাসের শব্দ এত দূর থেকেও রকি স্পষ্ট শুনতে পেলো! মেয়েটা অারেকটু দৌড়ে গাড়ির জানালার কাছে এসে বলল,
-- please, অামাকে বাঁচান। please, please....
-- কিন্তু কি হয়েছে অাপনার, এমন করে জঙ্গলের ভিতর দৌড়াচ্ছেন কেন?? অার এখানে অাস্.....
কথা শেষ করার অাগেই মেয়েটা বলল, --- অামাকে কয়েকজন ছেলে জোর করে এখানে তোলে এনেছে, অামি ওদের নিকট থেকে পালিয় এসেছি! ওরা অামার পিছু পিছু অাসতে পারে, please অামাকে হেল্প করেন।
-- অাচ্ছা কোন বেপার না, অাসুন অাসুন গাড়ির ভিতরে এসে বসুন। অামি অাছি, অাপনার কোন ভয় নেই। এ কথা বলেই অপর পাশের দরজা দেখালো রকি। (রকি মনে মনে ভাবছে, অনেকদিন পর একটা মুরগী পেয়েছি, যে কিনা নিজেই শিয়ালের কাছে এসে নিজের জান বাঁচাতে বলছে... হু হু হু.. হা হা হা! রকির ভিতরে যেন ময়ুর পাখনা মেলে নাচতে শুরু করেছে )
মেয়েটি গাড়িতে উঠে বসার পর, রকি হালকা স্পিডে ড্রাইভ করছে অার planing করছে... কি দিয়ে, কিভাবে কি শুরু করা যায়?? কিন্তু হুট করেই রকির চিন্তাতে ভাটা পড়লো, একটা অট্রহাসির শব্দে। হতচকিত ও আতঙ্কিত হয়ে মেয়েটির দিকে তাকাতেই, রকির চোখে যেন.....
মেয়েটির দিকে তাকাতেই ভূত দেখার মত চমকে উঠলো রকি! চোখ দুটো বিস্ফোরিত হওয়ার উপক্রম! এ কাকে দেখছে সে?? কিছু সময়ের জন্যে ব্রেণ হ্যাঙ হয়ে যায়, কখন যে গাড়ির ব্রেক প্যাডালে পা দিয়ে দাঁড়িয়ে গেছে টেরই পেলো না! গলার স্বর যেন ফাটা বাঁশের মতো হয়ে গেলো! খক খক করে বলল,
--- তু-ত-তুলি..!?! (গাড়িতে উঠেই মেয়েটি বোরকার নেকাব খোলে দিয়ে এমন অট্টহাসি দিয়েছিলো, যাঁর কারণে রকির নগ্ন ধ্যান ভঙ্গ হয়! অার মেয়েটির দিকে তাকাতেই রকির এ হাল )
-- চুপ, একদম চুপ! (যেন সাপের মত শীশিষ দিয়ে কথাগুলো বের হলো, মেয়েটির কন্ঠ থেকে)
নিমিষেই মেয়েটির চোখ দিয়ে অাগুন বের হচ্ছে, এমন একটা ভয়ংকর রুপ নিলো! যেন সবকিছু পোড়ে ভস্ম করে দিবে!! মেয়েটি, হাতের রুমাল দিয়ে তড়িৎ গতিতে রকির নাকেমুখে চেপে ধরতেই অজ্ঞান হয়ে যায়!
যখন রকি চোখ খোললো, প্রথমে কিছুই দেখতে পেলোনা! ভয়ে আৎকে উঠে ভাবলো, মরে পরলোকে চলে এসেছে! কিন্তু না কিছুক্ষণের মধ্যেই সব ঝাপসা ঝাপসা হয়ে ক্লিয়ার হয়ে গেলো। ও একটা আধো আলো অন্ধকার স্যাতস্যাতে গুহাতে চিৎ হয়ে শুয়ে অাছে, হাতেপায়ে লোহার শিকল বাঁধা! টান দিয়ে খোলার চেষ্টা করলো কিন্তু পারলো না, কারণ প্রচন্ড শক্ত করে বাঁধা!
রকি যেন দুঃস্বপ্ন দেখছে! সবকিছুই কেমন ঘোলাটে ঘোলাটে লাগছে। ও এখানে কেন, কিভাবে অাসলো, কে নিয়ে অাসলো অার ঐ মেয়েটি(তুলি) কোথায়??
তুলির কথা মনে হতেই রকির ব্রেণ যেন ৩৬০ ডিগ্রিতে ঘোরতে লাগলো! কখনো সেই ২ বছর অাগের ঘটনাতে চলে যাচ্ছে, কিভাবে তুলিকে কিডন্যাপ ও রেপ করার পরে হত্যা করে মাটিচাপা দিয়েছিলো! অাবার কখনো জনি, রাফসান ও অাবিদের দুর্ঘটনার কথা মনে পড়ছে! অাবার ও নিজেই কিভাবে কিডন্যাপ হয়ে গেলো...!!
তবে কি, তুলিই এসব করেছে!? কিন্তু ওতো মরে গেছে, অাচ্ছা মরা মানুষ কখনো কি জিন্দা হয় ? নাকি ওর প্রেতাত্মা!! এসবতো হরর মুভিতে দেখেছি, বাস্তবেও কি সম্ভব? তবে কি______?!?!
কিন্তু না, হুটকরেই যেন ওর কাছে সব পরিস্কার হয়ে যায়! এক ঝটকায় শুয়া থেকে বসে যায়! চারদিকে ভালো করে লক্ষ্য করতে যেয়ে, অারো বিস্ময়ে হতবিহ্বল হয়ে যায়! ওর পাশেই, একটু দূরে ওঁর মতো করেই বন্দী অবস্থায় শুয়ে অাছে অাবিদ।
ভূত দেখলেও হয়তো এতটা ভয় পেতো না রকি, যতটা ভয় পেয়েছে অাবিদকে এভাবে দেখে! এটা কি করে সম্ভব? অাবিদতো মরে গেছে! তবে কি অামিও মরে গেছি? এখানে কি মৃতব্যক্তিদের রাখা হয় কিন্তু অামাদের হাতে পায়ে শিকল কেন?? এটা কি জাহান্নাম?? না, অার ভাবতে পারছে না রকি! মাথা কেমন যেন ঝিমঝিম করছে! পুনরায় অজ্ঞান হলো বোধহয়। চলবেই।
Comments