অন্য দুনিয়া
তখন ভর দুপুর।আমি আর মা ঘরের সিঁড়ি-তে বসে আছি।এমন সময় একটা অদ্ভুত ধরনের লোক আমাদের বাড়িতে প্রবেশ করে।লম্বা... লম্বা জট পাকানো দাঁড়িতে মুখ ভর্তি।পরনেও আলখাল্লা টাইপ পোশাক। চোখের দৃষ্টি উদ্ভ্রান্তের মতো।দেখলেই কেন জানি গা শিউরে ওঠে।লোকটা বাড়ির ভিতরে ঢোকা মাত্রই আমাদের পালিত পশুপাখি গুলো অদ্ভুত ভাবে ডাকতে লাগলো।সেই ডাক ভয় পেয়ে করা চিৎকারের মতো।গরু গুলো নিজের গলার রশি ছেড়ার প্রানপন চেষ্টা করছিলো।এমনকি খাঁচায় থাকা পাখিটাও ডানা ঝাপটাচ্ছিলো।
যেনো ওরা কোনো বিপদের আভাস পেয়েছে যেটা আমরা পাচ্ছি না।আলখাল্লা পরা লোকটা ধীরে ধীরে আমাদের সামনে আসলো।এসে সহজ-স্বাভাবিক ভঙ্গীতে ভিক্ষা চাইলো।
ভিক্ষার কথা শুনে আমার মা প্রচন্ড বিরক্ত হলো।বললো,এতো জোয়ান ছেলে কাজ-কাম করতে পারেন না?দাড়ি -গোফ জট পাকিয়ে সাধু সেজে ভিক্ষা করছেন?
মায়ের কথা শুনে লোকটার চোখ ভয়ঙ্কর ভাবে জ্বলে উঠলো। কিন্তু, তিনি গলার স্বর স্বাভাবিক রেখে আবার ভিক্ষা চাইলেন।এবার ভিতর থেকে বাবা বেরিয়ে এসে খুব ঝাঁঝালো ভাবে ধমকালেন লোকটাকে।চলে যেতে বললেন।
সে চলে যাওয়ার সময় আমরা খেয়াল করলাম,এই ভর দুপুরে-ও তার কোনো ছায়া পরছে না।
এই দৃশ্য দেখার পর ভয়ে আমরা প্রায় জমেই গেলাম।মা উনাকে ডাকলেন চাল নেয়ার জন্য;বাবাও।
কিন্তু,সে আর আসলো না।তবে একবার পিছন ফিরে অগ্নিদৃষ্টিতে তাকালো।
এরপর কিছু দিন আমরা খুব ভয়ে ছিলাম। কিন্তু, দিনকে দিন সব স্বাভাবিক হয়ে গেলো।
এই ঘটনার প্রায় দশ-পনেরো দিন পরের কথা।
আমার বাবা রাতে ঘুম ভাঙায় বারান্দায় বসে ছিলেন। হঠাৎ,কে যেনো তার উপর আলো ফেললো।কোনো সাধারণ আলো নয়।গাঢ় কমলা আলো।বাবা বিরক্ত হয়ে জিজ্ঞেস করলেন,কে?
কিন্তু,উত্তর এলো না। আবার আলো পরতে লাগলো।বাবা বিরক্ত হয়ে বাগানের দিকে গেলেন।এর কিছু ক্ষণ পরই ফিরে এলেন। কিন্তু, কেমন যেন ভীত হয়ে। বললেন, ওখানে নাকি একটা লোক দাঁড়িয়ে আছে।তার শরীর থেকে কমলা আলো ঠিকরে বেরোচ্ছে।তার গা থেকে মরা মানুষের গন্ধ।
এই ঘটনার পর থেকেই বাবা অসুস্থ হয়ে পড়েন। অসুস্থ হওয়াও খুব স্বাভাবিক।কার যেন বিয়ে হয়েছিল। উচ্চ স্বরে মাইক বাজিয়েছে,তাই বাবার মাথা ব্যথা।
কিন্তু,সেই ব্যথা কমার নাম নেই।
ডাক্তার ওষুধ দিলো, কিন্তু কোনো লাভ হলো না।
এরপর বাবা দৃষ্টি শক্তি হারিয়ে ফেললেন।আই স্পেশালিস্ট জানালো, চোখ একদম ভালো। লেন্স, আইরিশ, কর্নিয়া সবই ঠিক আছে। ইভেন, মস্তিষ্কও ঠিক ঠাক মতোই সংকেত পাঠাচ্ছে।তবুও কেন কিছু দেখতে পাচ্ছেন না তা কিছুতেই বুঝা গেলো না।
১৪ দিনের মধ্যে সবটা পাল্টে গেল।বাবা কোনো কাজ করতে পারেন না।তাই, আমাদের চাচাদের কাছে হাত পাততে হয়।
এর মধ্যে, একদিন আমার বড় আপু আমাকে বললো,ঐ অদ্ভুত লোকটার সাথে খারাপ ব্যবহার করার পর থেকেই এমন হচ্ছে না তো?
কথাটা ফেলে দেয়ার মতোও নয়।
এদিকে বাবা ধীরে ধীরে আরো অসুস্থ হয়ে যাচ্ছিলো।
একদিন আমি আর আপু গাছ লাগানোর জন্য মাটি খুঁড়ছিলাম। হঠাৎ,একটা অদ্ভুত ধরনের কাপড়ের পুতুল পেলাম।সেটার চোখ দুটোতে পেরেক মারা। পুতুল টার শরীরের বিভিন্ন অংশ ও কাটা।আমরা ভয় পেয়ে গেলাম।এই টাইপ ব্যাপার গুলো ব্ল্যাক ম্যাজিক এ হয় এ ব্যাপারে আমরা কিছুটা জানতাম।
তাই,এই পুতুল নিয়ে গ্রামের এক হুজুরের কাছে গেলাম।এই সব সম্পর্কে উনি অনেক কিছুই জানে বলে শুনেছি।
উনি পুতুল টা দেখে অবাক হয়ে গেলেন। বললেন, এইরকম কালোযাদু তো মানুষ করতে পারে না। এগুলো শুধু জ্বীনেরাই পারে।
আমরা দু বোন অবাক হয়ে গেলাম।
উনি জ্বীন সাধনা করতেন।তাই,আমরা বললাম, কিছু সাহায্য করতে।
উনি বললেন, আমি সেই জ্বীন-কে ডাকতে পারবো শুধু।এর বেশি কিছু করতে পারবো না।আর জ্বীনেরা কখনো কারো উপর কালো যাদু করলে তা সরিয়ে নেয় না।
তবুও আমরা জ্বীনকে ডাকতে বললাম। আল্লাহ যদি ভাগ্য ভালো রাখেন তবে ভালো কিছু্ও তো হতে পারে।
ঐ হুজুর আমাদের কথায় রাজি হলেন,তবে বললেন যেকোনো একজনকে থাকতে। জ্বিন বেশি মানুষ পছন্দ করবে না।
আপু যেহেতু বড় তাই আপুই রইলো।
আমি বাইরে চলে এলাম।
ভিতরে কি হলো জানি না;তবে খানিক বাদে আপু হাসি মুখে বেরিয়ে বললো, জ্বীন নাকি পুতুল টা ধ্বংস করে দিয়েছে।
এটা ভালো খবর হওয়া সত্ত্বেও যিনি জ্বীন-কে ডেকেছিলেন তিনি মুখ ভার করে রইলেন। বললেন,এটা অসম্ভব।কোনো জ্বীনই এমনটা করে না।সে কেন করলো?
এর পিছনের কারন কি?এতে আবার ক্ষতি হবেনা তো?
তবে তার কথা আমরা পাত্তা দিলাম না।বাড়ি ফিরে এলাম।বাড়ি ঢোকা মাত্রই মা হাসি মুখে বললো,জানিস তোর বাবা সব দেখতে পাচ্ছে।আর অনেক সুস্থ ও বোধ করছে।
মায়ের কথা শুনে আমরা প্রচন্ড খুশি হলাম।
দ্রুত ঘরের দিকে যাচ্ছি।আর সেসময় আমাদের গরু, কবুতর,মুরগি ,ছাগল গুলো ভয়াবহ ভাবে ডাকতে লাগলো।
সেই দিনের মতো।
প্রানী গুলো আমাদের দিকে তাকিয়েই ভয় পাচ্ছিলো।
হঠাৎ,আপু বলে উঠলো,এই ইরা আমার সাথে মনে হয় কেউ রয়েছে।
আমি বললাম,কই?কেউই নেই।
আপু ভয়ার্ত কন্ঠে বলল,আছে।তাকে দেখা যাচ্ছে না। কিন্তু, আমি ফিল করছি.
Comments