Just Another Bangladeshi

Jun 3, 20192 min

সর্পকেশী মেডুসা

আমাদের বেশিরভাগ কাহিনী গুলো রচিত হয়েছে দেব দেবীদের অভিশাপ নিয়ে। দেখা যায় সামান্য বিষয়ে চটে গিয়ে অভিশপ্ত হয়ে যায় অনেকে। আজ এমন একটি অভিশাপের কাহিনী বলব।

সর্পকেশী মেডুসা- গ্রীক মিথলজির এই দানবীর কথা কে শোনেনি? তার চোখে চোখ পড়লেই সব পাথর হয়ে যায়, এতই ভয়ানক তার দৃষ্টি। হলিউডের সিনেমা Clash of the Titans (২০১০) এ মেডুসাকে দেখানো হয়েছে বেশ নিখুঁতভাবে। পার্সিয়াসের হাতে বধ হয়, আর নিজে হয় দানব ক্র্যাকেনকে বধ করার অস্ত্র। কিন্তু সিনেমায় আসল ঘটনার কত পরিবর্তনই তো হয়। পুরাণ অনুসারে মেডুসা আসলে কে ছিল? কী করে মারা যায় সে?

মেডুসার জন্মের ইতিহাস নিয়ে বেশ খানিকটা বিতর্ক আছে। মনে করা হয়, গ্রীক মিথলজির আর সব দানব-দানবীর মতো মেডুসার জন্মও দিয়েছিল টাইফন আর একিডনা দম্পতি। এরা নিজেরাও ছিলেন দানব-দানবী। মেডুসারা ছিল তিন বোন। এর মাঝে সে সবচেয়ে ছোট। বড় দুই বোন অমর হলেও মেডুসা ছিল মরণশীল। এই তিন বোনকে একসঙ্গে বলা হত গর্গন।
 
আবার মতান্তরে, মেডুসার বাবা-মা ছিলেন সাগরের দেবতা ও দেবী ফোরসিস ও সিটো। এ-ও বলা হয় যে মেডুসা প্রথমে দানবী ছিল না, অপূর্ব সুন্দরী ছিল। কিন্তু দেবী অ্যাথেনার অভিশাপে সে গর্গনদের একজন হয়ে পড়ে।
 
অনিন্দ্যসুন্দরি মেডুসা বাস করত পৃথিবীর একদম উত্তরে, যেখানে কখনো সূর্য দেখা যেত না। অনেক ছোটবেলাতেই নিজেকে দেবী অ্যাথেনার সেবায় উৎসর্গ করেছিল স্বর্ণকেশি মেডুসা। তাই ধর্মযাজিকা হিসেবে নিয়োজিত হয়েছিল দেবীর মন্দিরে।
 
একবার তার সাধ হয় সূর্য দেখার। দেবী অ্যাথেনার কাছে অনুমতি চাইতে গেল। কিন্তু দেবীর মর্জি বলে কথা। স্রেফ না করে দিল। মেডুসার মনে মনে খুব রাগ হল। রেগে মেগে বলেই ফেলল, এতদিন ধরে নিষ্ঠার সাথে পূজা করার পরেও তাকে যেতে না দেওয়ার কারণ নিশ্চয়ই ঈর্ষা, কেননা মেডুসা যে অপরূপ সুন্দরী। মেডুসার এহেন মন্তব্যে এথেনা ভয়ানক ক্রুদ্ধ হয়ে গেলেন। তিনি তাকে অভিশাপ দিলেন, যে রূপ নিয়ে তার এত অহংকার, সে রূপই হারিয়ে যাবে। শুধু তাই নয়, তার দিকে যে তাকাবে সে নিষ্প্রাণ পাথরে পরিণত হয়ে যাবে।
 
সাথে সাথে মেডুসার দুধে-আলতা গায়ের রং বদলে সাপের মতো সবুজ হয়ে যায়। চামড়া হয়ে যায় আঁশটে। মাথার ঘন চুল পরিণত হয় হাজার হাজার বিষাক্ত সাপে, কোমর থেকে নিচ পর্যন্ত সাপের লেজে বদলে যায়। চোখ দুটো হয়ে যায় আশ্চর্য রকম শীতল।
 
রূপ হারিয়ে ভয়ানক কুৎসিত মেডুসা দুঃখে আর হতাশায় মন্দির ছেড়ে চলে গেল অনেক দূরে। মানসিক শান্তি লাভের আশায় ঘুরে বেড়াতে লাগল গহীন জঙ্গলে। মাথা থেকে সাপ খসে পড়তে লাগল মাটিতে। কথিত আছে, সেটি পড়েছিল আফ্রিকায় এবং এর পর থেকেই আফ্রিকা বিষাক্ত সাপদের অন্যতম একটি আবাসস্থল হয়ে দাঁড়ায়।
 
মেডুসার সাথে সবসময় থাকত লম্বা একটি ধনুক, পিঠে থাকত তীর। তবে সবচেয়ে বড় অস্ত্র ছিল তার চোখ-জোড়া। চোখের দৃষ্টিতে পাথর বানিয়ে দিয়েছিল অগণিত প্রাণি। থাকত সমুদ্রের এক নির্জন দ্বীপে, সেই দ্বীপে তাকে মারার জন্যে যারা যেত কেউ আর ফিরে আসত না।

    2