Just Another Bangladeshi

Mar 23, 20143 min

সনাতনধর্ম মতে পৃথিবীর বাইরেও কি প্রাণের অস্তিত্ব আছে?

পবিত্র বেদে মৃত্যুর পর জীব কোথায় গমন করে সেই বিষয়ে বর্ণনা করতে গিয়ে বলা হচ্ছে।

সূর্য চক্ষুর্গচ্ছতু বাতমাত্মা দ্যাং চ গচ্ছ পৃথিবীং ধর্মণা।
 
অপো বা গচ্ছ যদি তত্র তে হিতমোষধীষু প্রতি তিষ্ঠা শরীরৈঃ।।

----(ঋগ্বেদ ১০/১৬/৩)----

পদার্থ - হে মনুষ্য! মৃত্যুর পর তোমার (চক্ষুঃ) চক্ষু (সুর্যম্) সুর্যকে (অাত্মা) এবং অাত্মা (বাতম্) প্রাণবায়ুকে (গচ্ছতু) প্রাপ্ত হয়। (ধর্মণা) কৃত কর্ম অনুসারে তোমার অাত্মা (দ্যাম চ) দ্যূলোক এবং (পৃথিবীম্ চ) পৃথিবীলোককে (গচ্ছ) প্রাপ্ত হয়। (শরীরৈঃ) শরীর ধারণ করে (অপ বা) জলজ স্থানকেও (গচ্ছ) প্রাপ্ত হয় কিংবা (ঔষধীষু) ঔষধি ও বৃক্ষ অাদিতে (প্রতি তিষ্ঠ) স্থিতি লাভ করে
 
(যদি) যদি (তত্র) সেই স্থান প্রাপ্তিই (তে) তোমার (হিতম্) কর্মফল হয়ে থাকে

.

পবিত্র বেদের উক্ত মন্ত্রে অামাদের অবগত করা হচ্ছে যে মৃত্যুর পর অাত্মা তার কর্মফল অনুসারে ভূমির উপর মানুষ কিংবা অন্য কোন প্রাণি হয়ে জন্মলাভ করে। কিংবা জন্ম নেয় কোন জলজ প্রাণি হয়ে।

.

এমনকি

পৃথিবীর বাইরে

দ্যূলোকের বিভিন্ন স্থানে অর্থ্যাৎ অনন্ত মহাশূন্যে যেই গ্রহ-উপগ্রহ, সৌরজগত, গ্যালাক্সি অাদিতে প্রাণের অস্তিত্ব অাছে সেখানেও অাত্মা তার কর্মফল অনুসারে গমন করে।

.

তার মানে সনাতনধর্ম অনুসারে পৃথিবীর বাইরেও প্রাণের অস্তিত্ব অাছে।

.

কিন্তু বাস্তবতার দিক দিয়ে বেদের এই বাণী কতটুকু বিশ্বাসযোগ্য?

.

এবার অাসি সেই বিষয়ে।

একবার ভেবে দেখুন অামাদের এই সৌরজগতের কেন্দ্রে যেমন সূর্য রয়েছে। বেদ বলে মহাবিশ্বে এরকম অারো অসংখ্যা সূর্য অাছে(ঋগ্বেদ ৯/১১৪/৩)

.

অর্থ্যাৎ, সূর্যের মতই অারো অসংখ্য নক্ষত্র অাছে এবং কেবল পৃথিবী হতে টেলিস্কোপে দৃশ্যমান মহাবিশ্বেই এই নক্ষত্রের সংখ্যা প্রায় 10^24। এই নক্ষত্রের চারদিকে ঘুরছে বিলিয়ন বিলিয়ন গ্রহ!

.

মহাবিশ্বের এই বিশালত্ব নিয়ে ভাবতে গেলে অবাক লাগে যে এত বিশাল মহাবিশ্বে অামরাই একা!

.

এই বিস্ময়ের সমাধান করার মত প্রযুক্তির দিক দিয়ে উন্নত অাজও মানবসভ্যতা হয়ে উঠতে পারেনি।

তাই এটি এখনো অমীমাংসিত জিজ্ঞাসা।

.

তবে বিজ্ঞানীরা বলে থাকেন পৃথিবীর বাইরে কোথাও প্রাণের অস্তিত্ব থাকার জন্য সেখানে তিনটি জিনিস থাকা সবচেয়ে বেশি জরুরি। এগুলো হল

১) জল

২) কার্বন

৩) DNA(যা একমাত্র নীজের প্রতিরূপ সৃষ্টি করতে পারে)

.

এবং অামাদের এই সৌরজগতের অনেক গ্রহ-উপগ্রহতেই জলের অস্তিত্ব থাকার প্রমাণ পাওয়া গেছে।

.

বিশেষ করে মঙ্গলগ্রহে একসময় জলের অস্তিত্ব থাকার অনেক প্রমাণ পাওয়া গিয়েছে।

সেখানে একসময় বিশাল নদী থাকার প্রমাণ মিলেছে, এমন অনেক Minerals পাওয়া গিয়েছে যা কেবল জলের উপস্থিতিতে তৈরি হওয়া সম্ভব।

যেহেতু জল ছিল তাই ধারণা করা হয় যে সেখানে micro-organism এর মত প্রাণের অস্তিত্ব ছিল।

.

এছাড়াও বৃহস্পতি গ্রহের একটি উপগ্রহ Europa তেও প্রাণের অস্তিত্ব থাকার সম্ভাবনা অাছে।

Europaর বরফ অাবরণের নীচে জল বিদ্যমান থাকার বিশাল সম্ভাবনা অাছে এবং জলের তলদেশে Hydrothermal Vents যদি থেকে থাকে তাহলে সেখানে প্রাণের অস্তিত্ব থাকতে পারে।

(বিস্তারিত -

https://en.m.wikipedia.org/wiki/Extraterrestrial_life)

.

এরকম অারো বহু সম্ভাবনার কথা পাওয়া যায়।এর মধ্যে সবচেয়ে অবাক করার মত যেটা ছিল তা হল ১৯৭৭ সালে মহাবিশ্বের কোন এক অজানা প্রান্ত থেকে পৃথিবীতে অাসা 72 second এর "WOW!" সিগন্যাল।যা থেকে অনেকে ধারণা করে থাকেন যে মহাবিশ্বের অন্য এক সুদূর প্রান্ত থেকে কোন এক অজানা সভ্যতা অামাদের সাথে যোগাযোগ করার চেষ্টা করছে।

https://en.m.wikipedia.org/wiki/Wow!_signal

তবে এই বিষয়ে এতটা নিশ্চিতভাবে বলার মত কোন প্রমাণ মিলেনি এখনো।

.

পরিশেষে একজন হিন্দু হিসেবে অামি দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করি যে কোন এক সুদূর ভবিষ্যতে মানুষ পৃথিবীর বাইরে সেই অজানা সভ্যতার খোঁজ অবশ্যই পাবে। একদিন প্রমাণিত হবেই যে হ্যা, পৃথিবীর বাইরেও প্রাণের অস্তিত্ব অাছে।

.

১৮৭৮ সালে মহর্ষি দয়ানন্দ সরস্বতী তার লেখা "ঋগ্বেদাদিভাষ্যভূমিকা" গ্রন্থে বেদের বিভিন্ন মন্ত্রের Reference দিয়ে একটি বিস্ময়কর যানের বর্ণনা দিয়েছেন। এমন একটি যান যাতে বসে মানুষ শূণ্যে ভাসতে সক্ষম ও অাকাশে গমন করতে পারে। বেদে তার নাম বলা অাছে বিমান(যজু ১৭/৫৯)

.

তখন মহর্ষির কথা শুনে সবাই শুধু হাসি-ঠাট্টা করত। তাকে পাগল বলে ডাকত ।

.

১৮৮৩ সালে মহর্ষি মারা যান। তার মৃত্যুর প্রায় ১৬ বছর পর ১৯০৩ সালে Write Brothers রা সত্যি সত্যিই বেদে বর্ণিত সেই উড়ন্ত যান বিমান বানাতে সক্ষম হয়।

কিন্তু বেদে বর্ণিত সেই বিমানের বর্ণনাকে মানুষ এখনো সম্পূর্ণ বাস্তবে রূপ দিতে পারে নি।

.

(ঋগ্বেদ ১/১০৮/১) এ এমন এক রথের কথা বলা অাছে যা দ্বারা এই জগতের সমস্ত ভুবনে গমন করা সম্ভব।

সমস্ত ভুবন মানে মহাবিশ্বের সমস্ত গ্রহ-উপগ্রহ, সমস্ত গ্যালাক্সি ।

উপরন্তু

(ঋগ্বেদ ১/১৮৩/১) এ এমন এক রথের কথা বলা হচ্ছে যা উড়তে সক্ষম এবং যার গতি মনের চেয়েও দ্রুত।

মানবসভ্যতা যেইদিন এতটা উন্নত মহাকাশযান বানাতে সক্ষম হবে সেইদিনই নিঃসন্দেহে পৃথিবীর বাইরে সেই অজানা প্রাণের অস্তিত্বও অাবিষ্কার করতে সক্ষম হবে।

    1