Just Another Bangladeshi

Nov 8, 20133 min

সোলমেট

পালিয়ে এসে ‘লিভ ইন’ এ থাকতো তারা দুজন । দুজন দুই ধর্মের । পালিয়ে আসা ছাড়া উপায় কই ? তাছাড়া ছেলে টা সরকারী চাকুরে না, জমিদার এর বেটা ও । ফ্রিল্যান্সার । সারা রাত জেগে দূর দেশের কোম্পানির কাছে সময় আর মেধা বেঁচে । বুকে একদিন ‘হাজার মানুষের কর্মসংস্থান সৃষ্টির স্বপ্ন’ । স্বপ্ন তো আর হাতে ধরতে পারা টাকা পয়সা না, স্বপ্ন দিয়ে শশুর বাড়ির লোক কেনা যায় না । কিন্তু সে হৃদয়ের রূপ দিয়ে আরেক টা হৃদয় কিনে ফেলেছিলো । কিনতে পেরেছিলো কারণ সরকারি বেসরকারী জমিদার হৃদয় বলে কোন হৃদয় হয় না ।

দিনগুলো ভালো যাচ্ছিলো । দুরুমের ছোট্ট একটা বাসা । পুরোনো ফার্নিচার । বেলকনি তে দুটো বেতের চেয়ার । টবে কিছু ফুলগাছ । বেডরুমের দেয়ালে ‘ইলিক ঝিলিক’ বাতি, বাতিগুলোর মাঝে প্রথম হাত ধরার দিন এর পর থেকে দুজনের কিছু ছবি জ্বলছে নিভছে । টেবিলের উপর মাটির ব্যাংক । সেখানে ভবিষ্যৎ বাচ্চার জন্য সিকি জমে ধাতব আওয়াজ তুলে । ‘একদিন নিজেদের দোতলা একটা বাড়ি হবে, উপরতলায় ‘অর্ফান হোম’ হবে । তারা বাচ্চাগুলো কে মা-বাবার আদরে বড় করবে । অর্ফান এডপ্ট করতে তারা কোন ধর্ম বাছবে না । অর্ফান এর কোন ধর্ম হয় না ।’ স্বপ্ন দেখতে দেখতে ছেলেটা কিবোর্ড এ খটাখট করে । মেয়ে টা কাঁথায় ফুল তোলে । সংসার তো নয় যেনো ‘সুখপাখির বাসা’ ।

হুট করে একদিন সুখপাখির বাসায় ঝড় হানা দিলো । এলোমেলো হয়ে গেলো সব কিছু । ক দিন ধরে দাঁত দিয়ে রক্ত ঝরছে । হসপিটালে গেলো দুজন । অনেকগুলো টেস্ট হলো । ডাক্তারের মুখ গোমড়া । মেয়েটার ‘চিরবিদায়ী’ অসুখ । লাস্ট স্টেজ ।

ঘরের ফার্নিচারগুলো বিক্রি হয়ে গেলো । বিক্রি হয়ে গেলো বেতের চেয়ার দুটো । ফুলের টবগুলো, দেয়ালের বাতিগুলো । মাটির ব্যাংক । ছেলেটার ডেস্কটপ । ... দুপয়সায় কি আর যুদ্ধ চলে লাখ টাকার অসুখের সাথে! অর্ফান হোম এর মত আরো হাজার স্বপ্নের বসবাস যে চোখের তারায়, সে তারা দুটো একদিন সন্ধ্যায় শেষ বারের মত হারিয়ে গেলো চোখের পাতার জগৎসীমার আড়ালে । বাই‌রে তখন ঝর ঝর বৃ‌ষ্টি হ‌চ্ছি‌লো । আঞ্জুমান মুফিদুল ইসলাম এর গাড়ি আসেনি । মেয়ে টা মফিদুল ইসলামের ধর্মের না ।

দুদিন পরে বিধ্বস্ত দেহ মন নিয়ে ছেলে টা বাসায় ফিরলো । খালি বাসা । দেয়ালে দেয়ালে স্বপ্নদের হাহাকার । টেবিলের উপরে বিক্রি না হওয়া শেষ একটা বাকসো । ঔষধের বাকসো । ছেলে টা সিদ্ধান্ত নিয়ে ই ফেলেছে । এই শুণ্য দুনিয়া আর সহ্য করা যাবে না একমূহুর্তও । ঔষধের বাকসে কিছু ঘুমের ঔষধ আছে । সে সবগুলো একসাথে খেয়ে একটা ঘুম দিতে চায় । চিরশান্তির শেষ ঘুম । বাকসো খুলতে ই দেখে একটা চিরকুট ঔষধ এর উপর ।

“দুইদিন হয়ে গেছে আমরা একসাথে নেই । আমি জানি আজ তুমি বাসায় ফিরবে । বোকামী চিন্তুা নিয়ে এই ঔষধ এর বাকসো টাও খুলবে । তাই এই চিরকুট টা আমি এখানে লিখে রেখে গেছি সেদিন । সবগুলো খেয়ো না বোকাটা আমার । গোছল করে এসে একটা ঔষদ খাবে শুধু । সুন্দর করে একটা ঘুম দি‌য়ে একটা নতুন জীবন শুরু করো । আমার জন্য ই বেঁচে থাকো । তুমি বেঁচে থাকলে তোমার চোখ দিয়ে আমি আরো অনেক অনেক দিন এই সুন্দর পৃথিবী টা দেখতে পাবো । ভাবতে আমার ভালো লাগছে । তারপর অনেক বছর পরে তুমি যখন চলে আসবে আমার কাছে আমরা দুজনে মিলে সৃষ্টিকর্তার পা ধরবো । শুধু ভালোবাসেন বলে ই যিনি আমাদের সবাই কে সৃষ্টি করেছেন, তিনি আমাদের ভালোবাসাকে মেনে নেবেন আমার বিশ্বাস । আমরা তাঁর কাছে স্বর্গ চাইবো না । বলবো দুজন মানুষ একসাথে থাকতে পারে আমাদের কে শুধু এটুকু জায়গা দিন । তাঁর তো অভাব নেই । তিনি দিবেন । ভালো থেকো । আর হ্যাঁ, বিয়ে করে ফেলো জ্বলদি কিন্তু । আমি জীবনের ওপার থেকে তোমার ছেলে মেয়েদের অর্শিবাদ করতে থাকবো ।

-তোমার সোলমেট । ”

    0