Just Another Bangladeshi

May 31, 20192 min

সীতাহরণ ও জটায়ুঃ

রামপত্নী সীতাকে অপহরণ করে পুষ্পক রথ চালিয়ে আকাশপথে পালিয়ে যাচ্ছে রাবণ। সীতা চিৎকার করছে, "বাঁচাও! বাঁচাও! রাম! লক্ষ্মণ! বাঁচাও!" কিন্তু দূর্ভাগ্যবশতঃ আকাশ পথে দ্রুতগামী সেই যানে অপহৃত নারীটিকে কেউ বাঁচাতে এগিয়ে আসছে না।

লঙ্কা যাবার পথে থাকা কোন একটা গাছেই ঘুমাচ্ছে জটায়ু পাখি। সে রামচন্দ্রের পিতা দশরথের বন্ধু। নারীর আর্তচিৎকার আর রাম-লক্ষ্মণের নাম শুনে সে আকাশের দিকে তাকিয়ে দেখতে পেল, উড়ন্ত রথে এক প্রকান্ড রাক্ষস এক নারীকে নিয়ে পালিয়ে যাচ্ছে। বৃদ্ধ পাখি ডানায় ভর করে সীতাকে বাঁচাতে উড়াল দিলো।

রাবণের পথ আগলে দাড়ালো জটায়ু। হুংকার দিয়ে বলল, "ওরে দুর্বিনীত! কে রে তুই? এই নারীকে অপহরণ করে নিয়ে তুই কোথায় যাচ্ছিস?" রাবণ তাকে দেখে অট্টহাসি দিয়ে বলল, "ওরে বৃদ্ধ পাখি! আমি ত্রিভুবনের অধীশ্বর রাবণ! যদি প্রাণে বাঁচতে চাস, তবে তাহলে পথ থেকে সরে দাঁড়া!" অপহৃত মেয়েটি দশরথের পুত্রবধু সীতা, জটায়ু তা ততক্ষণে টের পেয়ে গেছে। জটায়ু বলল, "আমার দেহে প্রাণবায়ু থাকতে তুই ওকে নিয়ে যেতে পারবি না!"

শুরু হলো আকাশ পথে তুমুল যুদ্ধ। জটায়ু তার ধারলো নখ আর ঠোঁট দিয়ে দশানন রাবণকে নাজেহাল করে ফেলল। দুজনেই প্রাণপণে লড়ছে, কিন্তু কেউ কাউকে হারাতে পারছে না। অধৈর্য হয়ে রাবণ কুটকৌশল অবলম্বন করলো। সে জটায়ুকে বলল, "দেখো, শক্তিতে তুমি আর আমি সমানে সমান। চলো, আমরা একজন আরেকজনকে যার যার দুর্বলতা বলে দেই, তাহলে আমরা কম সময় যুদ্ধটা শেষ করতে পারবো।"

বৃদ্ধ রণক্লান্ত জটায়ু রাবণের পাতা ফাঁদে পা দিল। সে বলল,"আমার দুর্বলতা আমার এই দুই ডানায়।" কিন্তু রাবণ মিথ্যা বলল। রাবণের দুর্বলতা তার পেটে হলেও সে বলল,"আমার দুর্বলতা আমার গোড়ালিতে।"

আবার যুদ্ধ শুরু হলো। রাবণের কথা বিশ্বাস করে জটায়ু রাবণের পা লক্ষ্য করে আক্রমণ করলো। সেই সুযোগে রাবন জটায়ুর পাখা কেটে দিয়ে পুষ্পক রথ নিয়ে সীতাকে নিয়ে লঙ্কায় পালিয়ে গেল। ডানা হারিয়ে জটায়ু আকাশ থেকে যেখানে বা যে এলাকায় পড়ে যায় বলে ধারণা করা হয়, সেখানে জটায়ুর একটি ভাস্কর্য স্থাপন করা হয়েছে।

ভারতের কেরালা রাজ্যের কোল্লাম জেলার চান্দায়ামাঙ্গালাম (পূর্বে জটায়ুমাঙ্গালাম)-এ অবস্থিত জটায়ু আর্থ'স সেন্টার। কোন পাখির সবচেয়ে বড় ভাস্কর্য হচ্ছে এই জটায়ুর ভাস্কর্য। এটি সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে ১২০০ ফুট উঁচুতে অবস্থিত। ভাস্কর্যটি ২০০ ফুট দীর্ঘ, দেড়শ ফুট প্রশস্থ এবং ৭০ ফুট উঁচু।

জটায়ুর আত্মত্যাগের কথা স্মরণ করে নারী সুরক্ষার প্রতীক হিসেবে এটি স্থাপন করেন একজন ভাস্কর, যার নাম রাজীব আঞ্চল।