Just Another Bangladeshi

Nov 29, 20193 min

শয়তানের আয়াত বা স্যাটানিক ভার্সেস

মুহাম্মদ তখন মক্কায় ইসলামের দাওয়াত প্রচার শুরু করেছেন। তখন একদিন তিনি ক্বাবা শরীফের প্রাঙ্গণে বসে সদ্য ইসলামে দাখিল হওয়া মুসলিমদের মাঝে বক্তৃতা রাখছিলেন। সেখানে মক্কার অন্যান্য পৌত্তলিক কুরাইশরাও ছিলো। পৌত্তলিক এবং মুসলিমদের মধ্যে তখন প্রচণ্ড শত্রুতাপূর্ণ সম্পর্ক। হজরত জ্বিবরাঈল সেই সময়ে ওহী নিয়ে মুহাম্মদের কাছে আগমন করেন। এবং সুরা নাজমের কয়েকটি আয়াত নাজিল করেন। আয়াতগুলো হচ্ছে,

তোমরা কী ভেবে দেখেছো লাত ও উযযা সম্পর্কে?
 
এবং আরেক (দেবী) মানাত সম্পর্কে?
 
তাঁরা হলেন খুব-ই উঁচু পর্যায়ের (ক্ষমতাবান) দেবী
 
তাদের কাছে সাহায্যও চাওয়া যায়
 
শয়তানের দ্বারা প্রভাবিত আয়াত

পরে মুহাম্মদ নিজেই আবার এই শেষের দুই আয়াত তার অনুসারীদের বাদ দিয়ে সংশোধনমূলক আয়াত নাজিল করে। এবং সুরাটির অন্যান্য আয়াত নাজিল হয়।

তোমরা কি ভেবে দেখেছ লাত ও ওযযা সম্পর্কে।
 
এবং তৃতীয় আরেকটি মানাত সম্পর্কে?
 
পুত্র-সন্তান কি তোমাদের জন্যে এবং কন্যা-সন্তান আল্লাহর জন্য?
 
এমতাবস্থায় এটা তো হবে খুবই অসংগত বন্টন।
 
এগুলো কতগুলো নাম বৈ নয়, যা তোমরা এবং তোমাদের পূর্ব-পুরুষদের রেখেছ। এর সমর্থনে আল্লাহ কোন দলীল নাযিল করেননি। তারা অনুমান এবং প্রবৃত্তিরই অনুসরণ করে। অথচ তাদের কাছে তাদের পালনকর্তার পক্ষ থেকে পথ নির্দেশ এসেছে।
 
সংশোধিত আয়াত

কারণ হিসেবে বললেন, ওগুলো আসলে আল্লাহ প্রেরিত আয়াত ছিল না। শয়তান ধোঁকা দিয়ে তার মুখ দিয়ে এই আয়াতগুলো বলিয়ে নিয়েছে। এর পরিবর্তে তিনি অন্য আয়াত দেন, দেবীদের প্রশংসামূলক আয়াতগুলো বাতিল ঘোষণা করেন। এই পর্যন্ত বক্তব্যগুলো পরবর্তীতে রেফারেন্স সহকারে প্রমাণ করা হবে।

উল্লেখ্য, সেই সময়ে আরবের পৌত্তলিকদের পূজিত সবচে বড় তিন দেবী ছিল লাত, উযযা এবং মানাত। এদের তিনজনকে আল্লাহর তিন কন্যা হিসেবেও গণ্য করা হতো। পৌত্তলিকগণ বারবার মুহাম্মদের কাছে আবদার করছিল, মুহাম্মদ তাদের দেবদেবীকে মেনে নিলে তারাও মুহাম্মদের আল্লাহকে মেনে নিবে। পৌত্তলিকগণ এই বিষয়টি খুবই অপছন্দ করছিল যে, নবী মুহাম্মদ তাদের দেবদেবী সম্পর্কে লাগাতার কটূক্তি, গালাগালি এবং সমালোচনাতে লিপ্ত ছিল। অনেকবার তাকে বোঝাবার পরেও সে ধর্মদ্রোহী কথা, কটূক্তি, দেবদেবীকে গালাগালি থেকে বিরত থাকে নি। এমনকি, মুহাম্মদের চাচা আবু তালিবের কাছে বিচার দিয়েও কোন কাজ হয় নি।

এরকম পরিস্থিতিতে মুহাম্মদের মুখ থেকে পৌত্তলিকদের দেবী সম্পর্কিত ঐ দুই আয়াত শুনে মক্কার মুশরিকরা খুব উৎফুল্ল হয়ে উঠেছিল। তারা ভাবলো, মুহাম্মদ এখন থেকে তাদের দেবদেবীদের নিয়ে আর কটূক্তি করবে না। বরঞ্চ প্রশংসা করবেন। মুহাম্মদ তাদের দেবদেবীদের মেনে নিয়েছেন, তারাও মুহাম্মদের আল্লাহকে মেনে নেবে। দুই পক্ষের দীর্ঘদিনের দ্বন্দ্বের অবসান ঘটে গেছে। এখন সকল ধর্মের লোকের সহাবস্থান সম্ভব হবে। কেউ কারো উপাস্য দেবদেবী বা ঈশ্বরকে নিয়ে আর কটূক্তি করবে না। তাই, সেদিন মুহাম্মদ এবং অন্যান্য মুসলিমদের সাথে মক্কার মুশরিকরা একই সাথে সিজদা করেছিলো মক্কা প্রাঙ্গণে।

কিন্তু পরবর্তীতে মুহাম্মদ দাবী করলেন, ঐ আয়াত দুটি শয়তানের ধোঁকা। তিনি আল্লাহ ছাড়া আর কোন দেবদেবীকে মানবেন না। উনি আয়াত দুটি বাদ দিতে বললেন। তখন আবারো শুরু হলো দুই দলের দ্বন্দ্ব।

এবারে আসুন, রেফারেন্সগুলো যাচাই করে দেখি। একটি গুরুত্বপূর্ণ হাদিস এখানে শুরুতেই বর্ণনা করা জরুরি।

গালাগালি, কটূক্তি, সমালোচনা

নবী মুহাম্মদ পৌত্তলিকদের দেবদেবী, পূর্বপুরুষদের ধর্ম, এগুলো সম্পর্কে অবমাননাকর কটূক্তি করতো বলেই জানা যায়। তাকে ধর্মদ্রোহীতা দায়ে অভিযুক্ত করা হয়েছিল। সমাজে শত শত বছর ধরে প্রচলিত ধর্মের সমালোচনা, বাপদাদার ধর্মের অবমাননা, কটূক্তি, দেবদেবী নিয়ে অপমানজনক কথা বলার কারণে বারবার তাকে সতর্ক করা হয়।

সূত্রঃ সীরাতে ইবনে হিশাম : হযরত মুহাম্মদ (সা:) এর জীবনীগ্রন্থঃ আকরাম ফারুক পৃষ্ঠা ৬১, ৬২

মুসলিম এবং মুশরিকগণের সমবেত সিজদা

গ্রন্থের নামঃ সহীহ বুখারী (তাওহীদ)
 
হাদিস নম্বরঃ [4862]
 
অধ্যায়ঃ ৬৫/ কুরআন মাজীদের তাফসীর
 
পাবলিশারঃ তাওহীদ পাবলিকেশন
 
পরিচ্ছদঃ ৬৫/৫৩/৭. আল্লাহর বাণীঃ অতএব আল্লাহ্কে সাজদাহ্ কর এবং তাঁরই ‘ইবাদাত কর। (সূরাহ আন্-নাজম ৫৩/৬২)
 
৪৮৬২. ইবনু ‘আব্বাস (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, নাবী সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম সূরাহ নাজমের মধ্যে সাজদাহ্ করলেন এবং তাঁর সঙ্গে মুসলিম, মুশরিক, জিন ও মানব সবাই সাজদাহ্ করল। আইয়ুব (রহ.)-এর সূত্রে ইব্রাহীম ইবনু তাহ্মান (রহ.) উপরোক্ত বর্ণনার অনুসরণ করেছেন; তবে ইবনু উলাইয়াহ (রহ.) আইয়ূব (রহ.)-এর সূত্রে ইবনু ‘আববাস (রাঃ)-এর কথা উল্লেখ করেননি। [১০৭১] (আধুনিক প্রকাশনীঃ ৪৪৯৫, ইসলামিক ফাউন্ডেশনঃ ৪৪৯৮)
 
হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)

গ্রন্থঃ সূনান আত তিরমিজী [তাহকীককৃত]
 
অধ্যায়ঃ ৪/ কিতাবুল জুমু’আ (জুমু’আর নামায)
 
হাদিস নম্বরঃ [575]
 
পাবলিশারঃ হুসাইন আল-মাদানী
 
পরিচ্ছদঃ ৫১. সূরা আন-নাজমের সাজদাহ
 
৫৭৫। ইবনু আব্বাস (রাঃ) হতে বর্ণিত আছে, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম সূরা নাজম-এ সাজদাহ করেছেন। মুসলিম, মুশরিক, জ্বিন ও মানুষ সবাই তার সাথে সাজদাহ করেছেন। -সহীহ। বুখারী, কিসসাতুল গারানীক— (১৮, ২৫, ৩১ পৃঃ), বুখারী।
 
আবু ঈসা বলেনঃ এ হাদীসটি হাসান সহীহ। এ অনুচ্ছেদে ইবনু মাসউদ ও আবু হুরাইরা (রাঃ) হতেও হাদীস বর্ণিত আছে। একদল বিদ্বানের মতে সূরা নাজম-এ সাজদাহ রয়েছে। একদল সাহাবা ও তাবিঈনের মতে মুফাসসাল সূরাসমূহে কোন সাজদাহ নেই। মালিক ইবনু আনাস এই মতের সমর্থক। কিন্তু প্রথম দলের মতই বেশি সহীহ। সুফিয়ান সাওরী, ইবনুল মুবারাক, শাফিঈ ও আহমাদ প্রথম মতের সমর্থক। (অর্থাৎ মুফাসসাল সূরায় সাজদাহ আছে)।
 
হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)