Just Another Bangladeshi

Jun 11, 20153 min

রুপা আমার দিকে তাকিয়ে

কমপক্ষে বিশ বার ফোন দিলাম তোকে। সারাদিন কোথায় থাকিস অরণ্য?
 
-তোর মনে।
 
-উফ! আর পারি না তোকে নিয়ে। চিন্তা হয় আমার।
 
-হুঁ। ব্যস্ত ছিলাম পার্টির মিটিংয়ে। তুই কী করিস?
 
-বাচ্চা পড়াই।
 
- সে কি! আমাদের তো বিয়েই হয়নি। বাচ্চা এলো কোথা থেকে?
 
- ধ্যাত!আমি টিউশনিতে।
 
-এখনও? কয়টা বাজে?
 
-দ্বিতীয়টা চলছে।


 
-এত টাকা দিয়ে কি হবে?
 
-জমাব।
 
-টাকা জমিয়ে কি করবি?
 
-তোর সাথে পালিয়ে যাব।
 
-তোর ছাত্রী শুনছে তো,ম্যাডামের প্রেমালাপ!
 
-ছাত্রী না ছাত্র।
 
-কোন ক্লাসে পড়ে যেন?
 
-ফাইভে।
 
-ড্যাব ড্যাব করে যেন না তাকায় তোর দিকে, বলে দিলাম। এত সুন্দর ম্যাডাম!
 
-অসভ্য, বাঁদর। ফোন রাখ।

রুপা ফোন কেটে দেয়,আমি হাসতে থাকি মনে মনে।
 
এই হাসি লেগে থাকে আমার চোখে মুখে নির্ঘুম রাত জুড়ে..

কত কী ভাবতে ভাবতে ভোর হয়! জানালা খুলে দিই, নারিকেল গাছের ডালে এসে বসে দুটো কাক। কাকের কর্কশ স্বর! তবু এত মধুর কেন?

অপেক্ষা।
 
সকাল নয়টা নাগাদ বিশ্ববিদ্যালয়ের গাড়িতে রুপা আসে ক্যাম্পাসে, আমি দাঁড়িয়ে থাকি অদূরে।
 
চোখে চোখ পড়ে, হাসি বিনিময় হয়!
 
কে বলে -রে জীবন সুখের নয়?

-অরণ্য,জানিস কাল রাতে তোকে স্বপ্নে দেখেছি।
 
-জানি তো কী দেখেছিস স্বপ্নে!
 
-কী দেখেছি?
 
-আমি তোকে আদর করছি।
 
-অসভ্য, বাঁদর, শয়তান, বদমাশ!

রুপা লজ্জায় লাল হয়ে বলে যায় একনাগাড়ে। আমি কপট রাগে তাকিয়ে থাকি অন্যদিকে। একটুপর আবার রুপা,
 
-অরণ্য রাগ করেছিস? বকা দিয়েছি বলে?
 
-আমি তো খারাপ, মন্দ।
 
-মন্দ হলেও আমার।
 
-তবে আর ভালো হওয়ার দায় নেই আমার!
 
-শোন? আজ সারাদিন দূরে দূরে থাকবি তুই!

আমি রাগ করে চলে আসি রুপার কাছ থেকে। টানা তিনটা ক্লাস শেষে রুপা কাছে এসে বলে, চা খাব। চল নিচে যাই? আমি অভিমানে দূরে সরে যাই, রুপা কাছে ডাকে।

আমি সরে সরে হাটি, রুপা গা ঘেঁষে আমার পাশাপাশি! আমি বলি,
 
-রুপা! প্লিজ দূরে থাক।
 
-কেন?
 
-তুই এত কাছে এলে আমার লম্পট হতে ইচ্ছে করে, পিপাসা বাড়ে। খুব পিপাসা! আমি তো চরিত্রহীন নই।শুধু তোকে কাছে পেলেই কেন যে এমন হই!

-আমি জানি, খুব চিনি তোকে। প্রথম প্রথম যখন আমরা বন্ধু হলাম তখনকার কথা। রিকশায় উঠলেই কেমন চেপে বসেছিস তুই,সংকোচে! আমি হাসতাম মনে মনে। তখনই আমি তোকে ঠিক চিনে নিয়েছি, কিন্তু আজকাল প্রায়ই ভাবি এই কি তুই সেই ছেলে?

-কি করব রুপা বল? আমার ভেতরে এত ক্ষুধা, এত পিপাসা,এত বাসনা, এত যে স্পৃহা সব যেন ঘুমিয়ে ছিল আগে। যেন তুই আমার জীবনে না এলে কখনোই খুঁজে পাওয়া হতো না,এই আমাকে। যেন তুই এসে জাগিয়ে তুললি, জেগে উঠলো সমস্ত চরাচর। যেন আমি চাতক পাখি,সারাক্ষণ জলের আকুতি; যেন চৈত্রের দুপুরে-বুক ফাটা চৌচিরে, আমি পুড়ে যাই তোকে কাছে না পেয়ে!

হঠাৎ রুপার দিকে তাকিয়ে দেখি, রুপা কাঁদছে!
 
-রুপা কাঁদছিস কেন?ব্যথা দিয়ে ফেললাম তোকে?
 
-না তো। এ জল আনন্দের! তুই বুঝবি না।

সত্যিই আমি বুঝি না এই মেয়ের মন!নিজেকে মাঝেমাঝে এত নির্বোধ মনে হয় আজকাল। কিছুটা পথ অবুঝের মত চলতেই, রুপা সজল চোখে আমার দিকে তাকিয়ে হেসে ফেলে আবার। আমি বিরক্ত হয়ে বলি
 
- এই হাসি! এই কান্না! ধরতে পারি না কিছুই।
 
-আমার চোখের দিকে তাকা?
 
রুপার চোখ জলে চিক চিক করছে। বললাম
 
-আনন্দ অশ্রু?
 
-উঁহু। চপল হরিণী! দেখেছিস কখনো? ধরা যায় না কিছুতেই।
 
-হরিণী? ধরা না দিলে তাদের পেটে বাচ্চা থাকে কি করে?
 
-অসভ্য, বাঁদর, বদমাশ, শয়তান!
 
-হাহাহ!

দুপুরের কাঠফাটা রোদ উপেক্ষা করে আমরা হাঁটতে থাকি, হাসি-কাঁদি। একে অন্যের চোখে ডুবে মরি। আমি ডাকি,
 
-লক্ষ্মী?
 
-বল কান্ত!
 
-সেকি? শ্রীকান্তের রাজলক্ষ্মী?
 
-হুঁ।
 
-এতটা ভালোবাসিস?
 
-জানি না। যা! ন্যাকা!
 
রুপার লজ্জায় মস্ত পৃথিবী যেন লাল হয়ে ওঠে! রুপা! দেখ দেখ কৃষ্ণচূড়া!
 
-কোথায়?
 
আমি নিজেই রুপার ব্যাগ থেকে আয়না বের করে ধরি, রুপার মুখে।
 
-অরণ্য! থামবি?লজ্জায় মরে যাই আমি!

একটু বাদেই আবার বলি,
 
-রুপা?
 
-বল
 
-সিগারেটের নেশা হয়েছে। একটা খাব।
 
-আমি সাথে আছি তবু সিগারেট? সাহস তো কম নয় তোর?
 
-দুটো টান দিয়েই ফেলে দিব। প্লিজ?
 
-আমাকে পাশে রেখে সিগারেট খাওয়ার খুব শখ তোর! নাহ?
 
-হুঁ
 
-ধরা।

আমি সিগারেট ধরিয়ে দুটো টান দিতেই, রুপা আমার দিকে তাকিয়ে চোখ গরম করে অভিমানে ফুলেফেপে দ্রুত চলে যায়! নিভে যাই আমি, দমে যাই। ধ্যাত!কেন যে সিগারেট ধরালাম! সেই আক্ষেপে আরও দুটো যায়, সিগারেট!

তারপর?
 
দশ বছর পর। ঢাকায় আমি।

এই পথ আমার খুউব চেনা-
 
এত মানুষ চারপাশে,তবু আমি ভীষণ একা।

টিএসসির পুস্তক-বিপণি কেন্দ্র থেকে বেরিয়ে আসতেই, চমকে যাই হঠাৎ রুপাকে দেখে। রুপার পাশে দাঁড়িয়ে আছেন পরিপাটি এক ভদ্রলোক, হাতে সিগারেট। রুপার বর। হ্যাঁ,এই ভদ্রলোকের ছবিই দেওয়া আছে ফেসবুকে-রুপার প্রোফাইলে।

এড়িয়ে যেতে চাইলাম,ধরা খেলাম।
 
উচ্ছ্বসিত রুপা সহসা আবেগ গোপন করে পরিচয় করিয়ে দিলো আমাকে ওর বরের সাথে। কিছুটা সৌজন্য আলাপ শেষে রুপার কাছে ফিসফিয়ে বললাম,বর সিগারেট খেলে এখন আর অভিমান করে চলে যাস না বুঝি?
 
রুপার চোখ মুহূর্তেই জলে ভিজে গেল! আমি ছাড়া আর কে এই জল স্পর্শ করতে পারে,সাধ্য কার?

    3