Just Another Bangladeshi

Oct 3, 20163 min

মানব রূপী জ্বীন ৫ম পর্ব

রাত তিনটা বাজে। আমি বাসা থেকে বের হলাম। ইফতি গভীর ঘুমে আচ্ছন্ন। কালাম কাকা ঘরে নেই। তার স্ত্রীও নেই ঘরে। আমি টয়লেটের পেছনের ঝোপঝারের দিকে গেলাম গন্ধ অনুসরণ করতে করতে। দেখলাম সেখানে এক অদ্ভুত মন্ত্র পড়া হচ্ছে। কোরআনের আয়াতকে উল্টো করে পড়া হচ্ছে। বিরবির সে শব্দের দিকে এগিয়ে গেলাম। আমি জানি এই রকম একটা কিছু ঘটবে। তবে রহস্যের গভীরে যাওয়ার জন্যে আমার এখানে আসা। সেই বিকট গন্ধ আজকেও আসছে। আমি দেখতে পেলাম কালাম কাকার স্ত্রী সেখানে মন্ত্র পড়ছে। চুলগুলো ছেড়ে রেখেছে। আর সেই সঙ্গে এক অদ্ভুত রকমের নৃত্য করছে। মুখে বলছে দূর হোক সকল অমঙ্গল শয়তানের হাতে আমার জীবন ও শয়তান আমার একান্ত সাহারা। আরও কিছু কথা যা আমি লিখতে চাচ্ছিনা ব্লাকম্যাজিকের মন্ত্র হওয়ার কারণে। আমি দূর থেকে দাড়িয়ে নৃত্য দেখছিলাম। সে ধীরে ধীরে নিজের কাপড় খোলা শুরু করে দিলো। যায়গাটা এমন এক জায়গা যেখানে বসতি নেই বললেই চলে। এখানে কেউ আসার সম্ভাবনা খুবই কম। তার নগ্নতা দেখে আমি কিছুটা বিচলিত হলাম। আবার আগ্রহ ও লাগছিলো আসলে কী হচ্ছে সেটা জানার জন্য। এই ধরনের কালোজাদুর নৃত্য খুব কম দেখেছি। তাই কৌতুহলও দমন করতে পারছিলাম না। সে যেখানে দাড়িয়ে ছিল তার নিচে শয়তানের স্বস্তিকা চিহ্ন আকা ছিল। আমি দেখলাম তার সামনে এক অদ্ভুত অবয়ব চলে এসেছে। একটা মাথার খুলিও রাখা ছিল সেখানে। সেই খুলি হাতে নিয়ে নগ্ন অবস্থায় এক অবয়বের সামনে নৃত্য করে যাচ্ছে। আমি এগুলো দেখে পুরোপুরি বুঝে গেলাম শয়তানের পূজা হচ্ছে। আমি পেছনে ফিরতেই দেখি কালাম কাকা হেসে আমার দিকে তাকিয়ে আছে। আমি একটা দৌড় দিলাম সজোরে কারণ আজকে এখানে সাহস দেখানোর কোনো মানে নেই। আমি এক দৌড়ে চলে গেলাম বাসায়। বাসার গেটে সামনে যেতে যেতে মাটিতে পড়ে গেলাম। অনেক কষ্টে উঠে দাড়ালাম। সে সময় জান বাচানো ফরজ এই নীতিতে চলে এসেছি। কারণ বাচতে হবে আমাকে। আমি চুপ করে ঘরে ঢুকে শুয়ে পড়লাম। তারপর ঘুমিয়ে গেলাম।

সকালে ঘুম থেকে ওঠার পর আমি আর কথা বলতে পারছিলাম না। মুখ দিয়ে আর শব্দ বের হয় না। বোবার মত করছি। আর অনেক জ্বর জ্বর লাগছিলো। আমি বুঝলাম কালোজাদুর প্রভাব। কিন্তু কাউকে বুঝতে দিলাম না। ইফতিকে লিখে বুঝালাম কিছুটা। ইফতি আমাকে সাহায্য করলো। আমি ইফতিকে লিখে লিখে মোটামোটি সবকিছু ক্লিয়ার করে বললাম। ওকে বুঝিয়ে দিলাম সকল রহস্য। আমি কিছু রুকইয়াহ করলাম। আশা করি জাদুর আসর কমে আসবে।

দুপুরে পুকুর ঘাটে গোসল করার পর মোটামোটি ফ্রেশ লাগলো। গলার স্বরও ফিরে পেলাম। আমরা দুই বন্ধু দুপুরে মসজিদের এক ঈমাম সাহেবের সাথে কথা বললাম। আমি প্রতিদিন নামাজ পড়তে যেতাম তখন থেকে তার সাথে আমার পরিচয় ছিল। যেহেতু গ্রামের বাইরের লোক তাই আমার পরিচয় চেয়েছিল। আমি তাকে আমার পরিচয় দিয়েছিলাম। আমাকে ঈমাম সাহেব অনেক আদর করতো মেহমান হিসেবে। আমি তাকে খুলে বললাম। তিনি আমাদেরকে সাহায্য করলো। তিনি বললো তার পরিচিত আরও একজন বড় হুজুর আছে। দুজন মিলে এক সাথে কাজ করবে। কারণ ব্যাপারটা বেশ জটিল। আমরাও সহমত পোষন করলাম।

দুপুরে আমি ঘরে ঢুকলাম। কালাম কাকা পুকুরে গোসল করছিলো। ঘাটে উঠতেই পেছন থেকে জমজমের পানি ছিটিয়ে দিতে বলেছিল আমাকে কালাম কাকার উপর। সেই পানিতে আবার দোয়া পড়া ছিল। আমি যেয়েই কালাম কাকার ওপর জমজমের পানি ছিটিয়ে দেই। কালাম কাকা সাথে সাথে একটা কাক হয়ে যায়। হুজুরেরা প্রস্তুত ছিল এসবের জন্যে। তারা সাথে সাথে একটা বোতলে ভোরে ফেললো কাকটাকে। চোখের সামনেই এসব ধাধা দেখছিলাম। কেমন যেনো অবাক লাগছিলো। মজাও পাচ্ছিলাম বেশ। ঈমাম সাহেব সেই বোতল নিয়ে চলে গেলো। আমরাও গেলাম তার পিছন পিছন মসজিদে। ঈমাম সাহেব বললো এই বোতল সাগরের পানিতে ফেলে দিবে যাতে আর ফিরে আসতে না পারে। আমরা দুশ্চিন্তা মুক্ত হলাম। কাউক কিছুই বলিনি। আমরা জানি কত বড় বিপদ মুক্ত হয়েছি আমরা। ঈমাম সাহেবকে অনেক শুকরিয়া দিলাম। ঈমাম সাহেব আমাদের সাবধানে থাকতে বললো।

বিকেলে বাসায় পৌছালাম। কালাম কাকার স্ত্রী একেবারেই নরমাল ছিল আমাদের সাথে। তাকে দেখলে কেউ বিশ্বাস করবে না যে এই মহিলা জাদু করতে পারে। আমরা অপেক্ষায় রইলাম রাতে তাকে হাতে নাতে ধরার জন্যে। আমরা জানতাম আজ রাতেও সে কালোজাদু করবে। কালাম কাকা তার সাথেই ছিল। কালাম কাকার সাথে আমরা দুই বন্ধু অনেকক্ষণ গল্প করলাম। তিনি আমাদের সাথে রইলো। তিনিও অপেক্ষায় আছে তার স্ত্রী কী করে সেটা দেখার। আমি আঙ্কেল-আন্টিকে সব কিছুই বললাম। যে কালাম কাকার স্ত্রী যে এতো বড় গুটিবাজ। তারা বিশ্বাস করতে বাধ্য হল।

আগামীকাল রাতেই সবকিছুর শেষ হতে যাচ্ছে। এই নাটকের একটা স্থায়ী সমাধান মিলবে। তাই সবাই মিলে অপেক্ষায় রইলাম আগামী কাল রাতে। কালাম কাকাকে নিয়ে কিছু প্রশ্ন আপনাদের মনে আসছে নেক্সট পর্বে সেটার উত্তর পাবেন।

কপিরাইট সতর্কতাঃ

মানবরূপী জ্বীন এর সকল স্বত্ত্ব লেখক শেখ সিয়াম তানভীরের। লেখকের অনুমতি ব্যতীত এর যে কোনো অংশ কপি করা থেকে বিরত থাকার জন্য অনুরোধ করা হচ্ছে। সকলকে শুভকামনা ও ভালোবাসা।

    0