Just Another Bangladeshi

Nov 19, 20171 min

বাকশাল এর সমালোচনা কি শুধু একদলীয় শাসনের জন্য আর চারটি ছাড়া বাকি সংবাদপত্র বাতিল করে দেয়ার জন্যই করব

বাকশাল ব্যাবস্থার সমালোচনা মুলত এই দুই পয়েন্টে হয়ে থাকে। বাকশাল বিরোধীরা মুলত এই দুই পয়েন্টেই তাদের সমালোচনা সীমাবদ্ধ রাখেন। তবে বাকশালের রাজনৈতিক সমালোচনা হওয়া উচিত আরো গভীর। বাকশাল মুলত ১৯৭১ এরমুক্তিযুদ্ধের মধ্যে দিয়ে গড়ে ওঠা রিপাবলিকের ভিত্তিকে তছনছ করে দেয়। আরো স্পষ্ট করে বললে বাংলাদেশ নামের যেই রাষ্ট্র ১৯৭১ এ তৈরি হয়েছিল, সেই রাষ্ট্রটাকেই কার্যত ধ্বংস করে দেয়। বাকশাল কীভাবে মুক্তিযুদ্ধের মধ্যে দিয়ে গঠিত রাষ্ট্রকে ধ্বংস করেছিল? করেছিল দুভাবে।

১/ বাকশাল যেই আইনে হয় সেই চতুর্থ সংশোধনী আইন ১৯৭৫-এ সংবিধানের অনুচ্ছেদ ১১ সংশোধন করে বলা হয়েছিল, ‘Effective participation by the people through their elected representatives in administration at all levels shall be ensured’ shall be omitted’। যার বাংলা করলে দাঁড়ায় সংশোধনের আগের সংবিধানের অনুচ্ছেদ ১১ তে প্রশাসনের সর্বস্তরে জনগণের নির্বাচিত প্রতিনিধিদের মাধ্যমে জনগণের অংশগ্রহণের যে কথা বলা ছিল এখন তা বাতিল করে দেয়া হল। অর্থাৎ রাজনৈতিক নেতৃত্ব বা সোজা বাংলায় শাসক নির্বাচনের ক্ষমতা আর রাষ্ট্রীয় কাজে রাজনৈতিক জনগোষ্ঠী হিসেবে জনগনের অংশ নেয়ার ক্ষমতা থাকলো না।

২/ সংক্ষুব্ধ কোন নাগরিকের আদালতে যাবার যে মৌলিক অধিকার ৪৪ অনুচ্ছেদে স্বীকৃত ছিল বাকশাল সংশোধনীতে খোদ সেই ৪৪ অনুচ্ছেদকেই বিলুপ্ত করে দেয়া হয়। একই সাথে ১০২ অনুচ্ছেদে সুপ্রিম কোর্টেকে দেওয়া অধিকার অর্থাৎ সংক্ষুব্ধ কোন নাগরিকের আবেদন শুনতে এবং প্রতিকার দিতে নির্বাহী বিভাগকে আদেশ দেবার আদালতের ক্ষমতাকেও একইসাথে বাতিল করা হয়।

সোজা কথায়, চতুর্থ সংশোধনী আইন রাষ্ট্রের নগরিকের সংক্ষুব্ধ হবার মৌলিক অধিকার রদ করেছিল, রাষ্ট্র পরিচালনায় জনগনের অংশগ্রহণ রদ করেছিল এবং রাষ্ট্রকে লাগামহীন ক্ষমতা দিয়েছিল। এমন লাগামহীন ক্ষমতা পেলে তা আর রিপাবলিক থাকেনা। জনগনও আর নাগরিক থাকেনা। এটা হয়ে যায় রাজত্ব আর জনগন হয়ে যায় প্রজা।

বাকশাল বাংলাদেশের মানুষকে নাগরিক থেকে প্রজাতে রিডিউস করেছিল, আর বাংলাদেশ রাষ্ট্রকে রিপাবলিক থেকে রাজত্বে রিডিউস করেছিল।

    3