Just Another Bangladeshi

May 12, 20172 min

ফ্যাক্ট

প্রশ্নঃ ও আচ্ছা, ওটা তো একটা থিওরী মাত্র?
 
উত্তরঃ আমরা আম জনতা থিওরী বলতে যা বুঝি, এবং বিজ্ঞানে থিওরী বলতে যা বোঝায়, তা এক নয়। ধরুন আমরা আম জনতার ভাষায় বলতে পারি, আওয়ামী লীগ এক টাকার চালের থিওরী দিয়েছে। বা ওটা কলিমুদ্দীনের থিওরী। মানে বোঝাচ্ছে, আওয়ামী লীগ বা কলিমুদ্দীন বাসায় বসে বসে চিন্তা করে কিছু সিদ্ধান্ত তৈরি করেছে। কিন্তু এই থিওরী বিজ্ঞানের থিওরী নয়। সায়েন্টিফিক থিওরী একেবারেই আলাদা। কলিমুদ্দীনের পোলা বসে বসে ভেবে সায়েন্টিফিক থিওরী বানাতে পারে না।
 
বিজ্ঞানের জগতে থিওরী কাকে বলে? হাইপোথিসিস কী? ল’ কী? ফ্যাক্টই বা কাকে বলে? এই সম্পর্কে আপনি কী সঠিক ধারণা রাখেন? বিজ্ঞানের জগতে থিওরি কাকে বলে, আপনার টঙ্গের দোকানের আড্ডার থিওরি থেকে যে তা আলাদা অর্থ বহন করে, তা আপনি জানেন তো?
 
বিজ্ঞানের জগতে এই প্রতিটি বিষয় আলাদা এবং ওয়েল ডিফাইন্ড। আপনি হাইপোথিসিসের ক্ষেত্রে থিওরী ব্যবহার করতে পারবেন না, বা থিওরীর জায়গায় হাইপোথিসিস ব্যবহার করতে পারবেন না। করলেই আপনার বক্তব্য ভুল বলে গণ্য হবে। যেখানে যেটি ব্যবহারযোগ্য, সেখানে শুধুমাত্র সেটিই ব্যবহার করতে হবে।
 

যেমন, ফ্যাক্ট হচ্ছে তা, যা আপনি সরাসরি আপনার ইন্দ্রিয় দ্বারা পর্যবেক্ষণ করতে পারেন। যেমন আগুনে আমাদর চামড়া পুড়ে যেতে পারে। এখন আপনি তা সরাসরি পরীক্ষা করে দেখতে পারেন। এটা হচ্ছে ফ্যাক্ট। এরকম ইন্দ্রিয় গ্রাহ্য বিষয়গুলোকে বা যা সরাসরি পরীক্ষাযোগ্য, বিজ্ঞানের জগতে সেগুলোকে ফ্যাক্ট বলে।
 
আর কোন ঘটনা বিশ্লেষণ করতে যে ব্যাখ্যা দেয়া হয়, কিংবা অনেকগুলো ফ্যাক্ট একত্রিত করে যেই এক বা একাধিক অনুমান দাড় করানো হয় সেটা/সেগুলোকে বলা হয় হাইপোথিসিস বা অনুমান। যেমন আগুনে হাত দিলে আপনার চামড়া পুড়ে যায়। এ থেকে প্রাপ্ত তথ্য প্রমাণের ওপর ভিত্তি করে আপনি হাইপোথিসিস দাড় করাতে পারেন এমন যে,
 
১) আগুনের মধ্যে এমন এক প্রাণী আছে তা কামড়ে আপনার চামড়া পুড়িয়ে ফেলে।
 
২) আগুনের তাপমাত্রা বেশি থাকার কারণে আপনার চামড়া সেই তাপ সহ্য করতে পারে না।
 
৩) আগুনের দেবতা বা ফেরেশতা তাকে ধরলে রাগ করে আপনার চামড়া পুড়িয়ে দেয়।
 
এখন এই তিনটি অনুমান বা হাইপোথিসিসের ওপর ভিত্তি করে আপনি পরীক্ষা চালান। নানা তথ্য প্রমাণ সংগ্রহ করেন। পরীক্ষার ফলাফল পাবেন ২ নম্বরটি। তাহলে আপনার ২ নম্বর হাইপোথিসিসটি প্রমাণিত হলো। বাকিগুলো বাতিল হলো। (১ নম্বর এবং তিন নম্বর মজা করে লেখা হয়েছে, বিজ্ঞানে এমন হাইপোথিসিস আনা হয় না। হাইপোথিসিসের জন্যেও তথ্য প্রমাণ প্রয়োজন হয়। )
 
আবার, প্রমাণিত হলেই যে হাইপোথিসিসটি ধ্রুব সত্য না নয়। যেকোন কিছুও ধ্রুব সত্য নয়। যেকোন সময় আরো ভাল যুক্তি প্রমাণ তথ্য পাওয়া গেলে এটা পালটে ফেলতে হবে।
 

তবে মনে রাখতে হবে, কোন বিশেষ হাইপোথিসিস প্রমাণ করা যদি আপনার উদ্দেশ্য হয়, সেই অনুসারে সুবিধাজনক তথ্য উপাত্ত যদি আপনি সংগ্রহ করেন, যেই তথ্যপ্রমাণ শুধু একটা বিশেষ হাইপোথিসিসকে প্রমাণ করবে, তাহলে সেটা চোরচোট্টামি হয়ে যাবে।
 
ধরুন আপনার উদ্দেশ্য কোরান বা বাইবেল বা রামায়নের সাথে বিজ্ঞানকে মেলাতে হবে। তখন যদি শুধুমাত্র সেইসব প্রমাণ আপনি গ্রহণ করেন, যা আপনার হাইপোথিসিসের সাথে মেলে, তাহলে সেটা বৈজ্ঞানিক পদ্ধতি নয়। নির্ভেজাল চোর চোট্টামি।
 
আবার, অসংখ্যবার একটা হাইপোথিসিসকে পরীক্ষা করার পরে যদি একই রকম ফলাফল পাওয়া যায়, এবং ভবিষ্যতেও একই ফলাফল পাওয়া যাবে বলে মনে হয়, সেটাকে তখন সায়েন্টিফিক থিওরীর মর্যাদা দেয়া হয়। যেমন থিওরী অর রিলেটিভিটি, গ্রাভিটেশনাল থিওরী, এভোলুশন থিওরী। বিজ্ঞানের জগতে সায়েন্টিফ থিওরী অত্যন্ত মর্যাদার অধিকারী।

সত্য জানার জন্য এখন পর্যন্ত এটিই সবচাইতে ভাল পদ্ধতি। অমুক বইতে লেখা তাই সত্য, আল্লায় কইছে তাই সত্য, সেগুলোর সাথে এই পদ্ধতি তুলনীয়ই নয়।

    4