Just Another Bangladeshi

Sep 21, 20132 min

পরমাত্মার সাথে জীবাত্মার সম্পর্ক কি?

"দ্বা সুপর্ণা সযুজা সখায়া সমানং বৃক্ষং পরিষস্বজাতে।
 
তয়োরণ্যং পিপ্পলং স্বাদ্বত্ত্যনশ্নন্নন্যো অভিচাক শীতি।।"

- ঋগবেদ (১/১৬৪/২০)

অনুবাদঃ সুন্দর পক্ষবিশিষ্ট সম সম্বন্ধযুক্ত দুইটি পক্ষী মিত্ররূপে একই বৃক্ষে আশ্রয় করিয়া আছে৷ তাহাদের মধ্যে একটি বৃক্ষের ফলকে স্বাদের জন্য ভক্ষণ করে এবং অন্যটি ফলকে ভক্ষণ না করিয়া সব দিক দেখিতেছে।
 

 
এখানে বৃক্ষটি জগৎ এবং দুইটি পক্ষীর একটি জীব, অন্যটি ব্রহ্ম।
 

 
বেদান্ত বিশ্লেষণঃ
 

 
মুণ্ডকোপনিষদের তৃতীয় মুণ্ডকের ১ম খন্ডে এ বিষয়টা খুব সুন্দরভাবে বিশ্লেষণ করা হয়েছে৷
 

 
জীবের দেহকে একটা বৃক্ষের সাথে তুলনা করা হয়েছে। এই বৃক্ষরূপ দেহ নিয়ে সুন্দর বিশ্লেষণ করা হয়েছে কঠোপনিষদে। বৃক্ষ যেমন খুব অল্পদিনে বিনষ্ট হয়, তেমন দেহেরও বিনাশ হয় তাড়াতাড়ি। যেহেতু গাছের ডালে পাখিদের বসবাস তাই পরমাত্মা ও জীবাত্মাকে দুইটি পাখি হিসেবে দেহবৃক্ষে চিন্তা করা হয়েছে। জীবাত্মা ও পরমাত্মা (ব্রহ্ম) সবসময় একত্রেই থাকে, কেউ কাউকে ছাড়া থাকতেও পারে না৷ জীব সবসময়ই ঈশ্বরের আশ্রয়েই থাকে, ঈশ্বর ভিন্ন জীব স্বতন্ত্রভাবে থাকতে পারে না এবং ঈশ্বরও সবসময় জীবের সাথেই যুক্তই থাকেন৷ এই বিষয়ে দ্বিতীয় মুণ্ডকের ১ম খন্ডেও সুন্দর ব্যাখ্যা আছে। এছাড়া শ্রীমদভগবদগীতার পঞ্চদশ অধ্যায়ের ১৫ নং শ্লোকেও বলা হয়েছে যে পরমাত্মা আমাদের হৃদাকাশেই অবস্থান করেন।
 

 
জীব যখন নিজেকে ঈশ্বর হতে আলাদা ভাবেন এবং "আমি কর্তা" এই ভেবে সংসারের বিভিন্ন কাজে লিপ্ত হয় তখন জীব সেই আসক্তি জনিত কাজের জন্য কর্মফল হিসেনে সুখ-দুঃখ ভোগ করে। ঈশ্বর কিন্তু অকর্তা, তিনি কোন কাজে লিপ্ত হন না। তিনি কেবল জীবের সকল কর্মের হিসেব রাখেন এবং উপযুক্ত ফল প্রদান করেন।
 

 
শ্রীমদভগবদগীতা ত্রয়োদশ অধ্যায়ের ২৮ ও ২৯ নং শ্লোকে বলা হয়েছে।
 

"যিনি সর্বভূতে সমভাবে অবস্থিত পরম্‌ আত্মাকে দর্শন করেন তিনি জানেন যে জীব আত্মা এবং পরম্‌ আত্মা উভয়েই অবিনাশী, তিনিই প্রকৃতভাবে দর্শন করেন।"
 
"যিনি সর্বত্র সমভাবে অবস্থিত পরম্‌ আত্মাকে দর্শন করেন, তিনি কখনও মনের দ্বারা অধপতন সাধন করেন না। এই ভাবে তিনি পরম গতি লাভ করেন।"
 

জীব ও ঈশ্বর একই বৃক্ষে (জীবের হৃদাকাশে) পরস্পরকে আলিঙ্গন করে থাকলেও জীব মোহবশত ঈশ্বরকে ভুলে গিয়ে কেবল নিজের ইন্দ্রিয় নিয়ে ব্যাস্ত থাকে। তখন জীব নিজের দেহকেই একমাত্র সত্য মনে করে দেহেই আসক্ত হয়ে দেহের সুখদঃখকেই কেবল অনুভব করে।
 

 
মোহচ্ছন্ন জীব নিজেকে ক্ষুদ্র, তুচ্ছ ও শক্তিহীন মনে করে নিজেকে খুব দরিদ্র ও অভাবী মনে করে এবং প্রয়োজনের চেয়ে অতিরিক্ত প্রাপ্তির কামনাবাসনায় সুখদুঃখে নিমজ্জিত থাকে।
 

 

কিন্তু জীব যখন ঈশ্বরের অনুগ্রহ ও নিজ প্রচেষ্টায় পরম জ্ঞানলাভ করে তখন সে নিজেকে আর দেহবিশিষ্ট ক্ষুদ্র জীব নয় বরং ঈশ্বরেরই স্বরূপ তথা ঈশ্বরের অনুপ্রকাশ হিসেবে চিন্তা করে। যখন জীব তার স্বরূপ বুঝতে পারে তখন আর নিজেকে অভাবী দরিদ্র ভাবে না এবং তার সকল কামনাবাসনা দূর হয়। তখন আর কোন সুখদুঃখ (স্বর্গ ও নরক) জীবকে স্পর্শ করতে পারে না তথাপি সেই জীব মোক্ষলাভ করে। জীবের মৃত্যু আসলে জীবত্মার এক দেহ থেকে অন্যদেহে স্থানান্তর।
 
বিখ্যাত দার্শনিক জন লেনন এই পরম সত্যকে অনুধাবন করেই শ্রীমদ্ভাগবতগীতার ২/২০ শ্লোক থেকে লিখেছেন,
 

"আমি মৃত্যুকে ভয় পাই না কারন আমি মৃত্যুকে বিশ্বাস করি না। মৃত্যু কেবলমাত্র একটি গাড়ি থেকে নেমে অন্য গাড়িতে উঠা"

অর্থাৎ পরমাত্মা ও জীবাত্মা উভয়ই অনাদি এবং পরস্পর বন্ধুরূপ অবস্থান করে।

    1