Just Another Bangladeshi

Jan 23, 20174 min

পুরুষ ও পশুতে পার্থক্য নাই

পৃথিবীর প্রাণকেন্দ্রে সভ্য একটি নগরীতে চারজন পুরুষ একটি নারীকে প্রকাশ্য দিবালোকে পাশবিকভাবে ভোগ করেছে।

প্রতিক্রিয়া
 
রব উঠেছে —
 
পুরুষ ও পশুতে পার্থক্য নাই
 
পুরুষ পশুরও অধম
 
পৃথিবীতে প্রেম বলে কিছু নাই

(ঘটনার বর্ণনা শোনার পর)পর্যবেক্ষকঃ যে সমস্ত অপুরুষ এভাবে উপভোগী হয় তাদের মেডিক্যাল টেস্ট করালে তারা পুরুষের সনদপত্র পাবে।কিন্তু বিষয়টা প্রকৃত পক্ষে অন্য রকম; কিছু কিছু পুরুষ মানুষের অবয়ব নিয়ে জন্মগ্রহণ করে, কিন্তু তারা প্রকৃত পক্ষে পশুর সমান। এবং তাদের কর্মকান্ডগুলোই সভ্যতাকে প্রশ্নবিদ্ধ করে।

পর্যবেক্ষকের বাণীঃ হে মানবসম্প্রদায়, যৌবন শ্রেষ্ঠ তার সৃষ্টির জন্য। অঙ্গের ফুলগুলো তখনি সবচেয়ে অসুন্দর যৌবন যখন ধ্বংসে মাতে।

সত্যানুসন্ধানীঃ জনাব পর্যবেক্ষক, ঠিক কি বুঝাতে চাইলেন একটু দয়া করে বলবেন কি?

পর্যবেক্ষকঃ আপনাকে অপেক্ষায় রাখা ঠিক হবে না, তাই উত্তর দিচ্ছি।
 
প্রজননের জন্য মানুষের কিছু অঙ্গপ্রত্যঙ্গ থাকে। উদ্ভিদের ক্ষেত্রে ফুলের যে তাৎপর্য মানুষের ক্ষেত্রে সেগুলোর সেই একই তাৎপর্য। কিন্তু সেগুলোর অপব্যবহার সর্বশ্রেষ্ঠ সম্প্রদায়টাকে বিব্রত করে।

সত্যানুসন্ধানীঃ পর্যবেক্ষক মহোদয়, সত্যানুসন্ধান আমার কাজ, আমি আরো কিছু সত্য জানতে চাই।

পর্যবেক্ষকঃ বলছি, তবে মনোযোগ দিয়ে শুনুন।
 
পশুর কাজ দু’টি।
 
প্রথম কাজ খাদ্য গ্রহণ করা
 
দ্বিতীয় কাজ কাম চর্চা করা
 
এবং এই দুটি কাজকে কেন্দ্র করে তাদের অন্য সব কাজ পরিচালিত হয়। পুরুষেরও সব কাজ খাদ্যগ্রহণ ও কাম কেন্দ্রিক। পৃথিবীর সব পুরুষের চিন্তার কেন্দ্রবিন্দুতে থাকে নারী। সব পুরুষের শ্রেষ্ঠ কীর্তিগুলো একজন রূপবতী নারীকে জয়/ভোগ করার সচেতন বা অবচেতন কামনার ফল।
 
পশুতে পশুতে ভেদাভেদ নাই, কামের জাগরণে সবাই কাম করে। মানুষে মানুষে পার্থক্য অনেক। কেউ কাম করে বিনষ্ট করে, কেউ কাম করে জয় করে, কেউ নিজেকে সংযত , কেউ আবার বিরত থাকে।
 
পশু আর পুরুষদের মাঝে যদি কোন তুলনা করতে হয় তবে বলব পুরুষ পশুর চেয়েও হিংস্র। পশু ক্ষুধা লাগলে খায়, মানুষ ক্ষুধা না লাগলেও খায় এবং অন্যেরটা কেড়ে খায়।
 
বুদ্ধিতে মানুষ সব সময় শ্রেষ্ঠ। আচরণে শ্রেষ্ঠত্বের দাবীটা গোপন রাখাই শ্রেয়। নিকৃষ্ট প্রাণীটাকে মানুষের সমাজেই বিচরণ করতে দেখা যায়। আমরা ভাবি মানুষ দ্বিপদী;আসলে মানুষও চতুষ্পদী, সম্মুখপদগুলোকে শোভন একটি নাম দিয়ে তারা সৃষ্টির সেরা হয়েছে।

সত্যানুসন্ধানীঃ তাহলে কি সব পুরুষকেই পশু বলা যায়?

পর্যবেক্ষকঃ পশুতে-মানুষে জৈবিক কোন পার্থক্য নাই। পশু ও মানুষের সন্তান উৎপাদন প্রক্রিয়া হুবহু এক রকম; সেই অর্থে সব পুরুষকেই পশু বলা যায়।
 
আত্মিক পার্থক্যটাই মানুষকে শ্রেষ্ঠ করেছে এবং পশু থেকে পৃথক করেছে।
 
শুধুমাত্র নিজের জন্য বাঁচা ও নিজের সুখের জন্য ভোগী হওয়া মানুষকে পশুর পর্যায়েই রেখে দেয়। মানুষ যখন অন্যের জন্য বাঁচে ও ত্যাগী হয় তখন তার ‘মানুষ’ নামটা গ্রহবাসীদের কাছে শ্রেষ্ঠ কিছুর সুন্দর নামের স্বীকৃতি পায়।
 
পুরুষ যখন নারীর ভালোবাসা বোঝে, কামটাকে প্রেমের কাছে সমর্পণ করে তখন সে তার ‘মানুষ’ নামটাকে বড় করে।

সত্যানুসন্ধানীঃ আমার আরো কিছু প্রশ্ন ছিল।

পর্যবেক্ষকঃ প্রশ্নগুলো করুন। আমার পর্যবেক্ষণের পরিধির বাইরে না হলে উত্তর পাবেন।

বস্ত্রহরণ করে কি সুখ?

মানুষ আর পশুতে পার্থক্য হলো পশু নিজের দেহের ও মনের বন্য ও বর্বর পরিচয়টা গোপন করে না, নিজের নগ্ন রূপটা নগ্নই রাখে, কিন্তু মানুষ সব সময়ই নিজের পাশব মনের পরিচয় গোপন করতে চায় এবং শরীরের নগ্নতাকে ঢেকে রাখতে চায়। কিন্তু মনের নগ্ন রূপ যখন প্রকাশ পায় তখন দেহের নগ্নতাকে সে অপ্রকাশিত রাখতে পারে না, তখন সে বস্ত্রহরণ করে পায় শ্রেষ্ঠ সুখ ।

মানুষের দেহধারী পশুগুলোর মনের অবয়ব সঠিক করার উপায় কি?

উপায় নাই।

আমার কিছু সাধারণ পর্যবেক্ষণ বলি। অর্ধেক ভালো আর অর্ধেক মন্দ মিলে মানুষ। নিজের পরিবার,বন্ধুসঙ্গ, বেড়ে উঠার পরিবেশ, বসবাসের স্থান, জীনগত বৈশিষ্ট তাকে ভালো অথবা মন্দ যে কোন এক দিকে বেশি হেলে পড়ার সুযোগ করে দেয়। পৃথিবীতে সম্পূর্ণ পরিশুদ্ধ বা অশুদ্ধ মানুষ নাই। মানুষের খারাপ গুণগুলো কিছু অর্জিত এবং কিছু অন্তর্গত। দারিদ্র্য কিংবা প্রেমহীনতার অভাবে কেউ যদি মন্দ কিছু অর্জন করে তাহলে আশা করা যায় অভাবটা পূরণ হলে তার মানবীয় ভালো গুণগুলোর জাগরণ ঘটবে। কিন্তু জন্মগতভাবে যে কালসাপ থাকে তাকে যত দুধকলাই খাওয়ানো হোক না কেন সুযোগ পেলেই সে ছোবল দেবে। ‘ঢেঁকি স্বর্গে গেলেও ধান ভানে’। ফলে এই অপুরুষদের শিক্ষিত করে তোলার ইচ্ছাটা মহৎ তবে অফলপ্রসূ। এদের দমন করাই শ্রেয়।

পুরুষকেই শুধু পশু বলে যাচ্ছেন কেন?

জৈবিকভাবে নারীও পশু।
 
তবে নরনারীর অবৈধ মিলনের অপবাদ ও প্রমানটা নারীকেই বহন করতে হয়, তাই সমাজের নারীদের হিসেবী হওয়ার প্রয়োজন আছে। উল্লেখ্য, নারীদের মনোজাগতিক ছলনা ছেলেদের মনে যে ক্ষত সৃষ্টি করে তা ক্ষণস্থায়ী। কিন্তু পুরুষের পাশবিক প্রতারণা মেয়েদের জীবনে মনোদৈহিক যে ক্ষত সৃষ্টি করে তা চিরস্থায়ী।

নারীর এলোমেলো পোশাক তার বিপদের কতটুকু অংশীদার?

নারীর পোশাক ছোট হলে পুরুষের জন্য তা কাম-উদ্দীপক, তবে অবশ্যই তা নারীর বিপদের মূখ্য কারণ নয়। বলার সুযোগ নাই ‘পোশাক ছোট ছিল, তাই ভোগ করেছি’; আর যদি বলতেই হয়, তবে নিজের ‘মানুষ’ পরিচয়টাকে আগে বিসর্জন দিয়ে, তারপর বলতে হবে।
 
একটা ডিপার্টমেন্টাল স্টোরের কথা চিন্তা করুন। এখানে মাঝে মাঝে বিদ্যুৎ চলে যায়। ফলে হঠাৎ অন্ধকার নেমে আসে। তখন পরিবেশটা ডাকাতির জন্য অধিকতর উপযোগী হয়, ডাকাত কিন্তু তখন হানা দেয় না। ডাকাতদের জীবনে যখন অর্থকরীর প্রয়োজন পড়ে তখন তারা অন্ধকারের অপেক্ষা করে না। প্রকাশ্য দিবালোকে সবার সামনে অন্যের সম্পদ লুট করে নেয়। ধনীর সম্পদ আড়ালে না রাখার অসাবধানতা মানুষকে ডাকাত করে না। মানুষ ডাকাত হয় তার দৃষ্টিভঙ্গির কারণে। অভাবীর কিংবা অসুস্থের দৃষ্টিভঙ্গি তাকে সাধক অথবা ডাকাত করে। পুরুষের দৃষ্টিভঙ্গি তাকে প্রেমিক অথবা কামুক করে তুলে। অবগুন্ঠনহীনতা কিংবা নারীর এলোমেলো পোশাক কামুকের অনেক বড় অজুহাত।

একজন আড়িপাতা কামুকঃ যদি ভুল না করে থাকি, আমিতো জানি নারীরাই নারীদের বিপদের কারণ। যে মানসিকতা নিয়ে কথা গুলো বলছেন ঠিক সে মানসিকতা নিয়ে নারীদের আধুনিকতার নামে বেলেল্লাপনা বন্ধ করতে বলুন তাতে যেমন পুরুষ মুক্তি পাবে তেমনি সমাজ থেকে দূর হবে অনেক অশান্তি।

শ্রদ্ধাস্পদেষু,
 
মূল বিষয়টা স্পষ্ট, অথচ আপনি বক্তব্যই শুরু করেছেন অস্পষ্টতার মায়াজালে আত্নবিশ্বাসের অভাব নিয়ে। আপনি সঠিক বলছেন কি-না এ-বিষয়ে আপনি নিজেই নিশ্চিত না। আপনার মত সন্দেহবাতিকগ্রস্ত ব্যক্তিরা সামনের দু’টি হাত দিয়েও হাটেন; এতে কোন সমস্যা ছিল না যদি না আপনার মত মানুষরা অজপাড়া গাঁয়ের পল্লীগুলোকেও নিষিদ্ধ না করে ফেলতেন।
 
মেয়েরাতো অবশ্যই সভ্য পোশাক পড়বেন। তবে মুশকিল হলো আপনাদের নিয়ে। যে মেয়েগুলো ছোট কিংবা এলোমেলো পোষাক পড়ে তাদের আপনারা মানুষ, নারী কিংবা প্রমীলা ভাবেন না, আপনারা তাদের লীলাবতী নর্তকি ভাবেন; এ কারণেই তাদের দিকে আপনাদের দৃষ্টিটা সবচেয়ে আগে পড়ে এবং যেহেতু আপনাদের চিত্ত দুর্বল ও আত্নবিশ্বাসের অভাব আছে, সেহেতু আপনারা আদিম তাড়নায় চঞ্চল হয়ে উঠেন এবং মনুষ্যত্বের কথা ভুলে পশু হয়ে যান।

কামুক ও প্রেমিকের কে বেশি প্রকৃতির সেবক?

দু’জনই সমান সেবক।
 
কাম পশু এবং মানুষ উভয়ের জন্য সাধারণ। পশুর যখন কাম জাগে তখন সে কামুক হয়, কামকেলী করে, নিজের জৈবিক দায়িত্ব পালন করে। পশুর কাম নিয়ন্ত্রণের প্রয়োজন নেই। সে ক্ষুধা লাগলে খায়, কাম জাগলে সঙ্গি খোঁজে। কিন্তু মানুষের কাম পুরোপুরি পাশবিক হয়েও তা মানবিক কেননা তা প্রেমের মোড়কে প্রকৃতির সবচেয়ে বড় সৌন্দর্যে রূপ নিতে পারে।
 
দু’টি ঘটনা বলি।
 
একটা তরুণীকে তার প্রিয় তরুণটা যখন কাছে টানে এবং সর্বাঙ্গে শিহরণ জাগানো ভালোবাসার সব কিছু করে তখন পৃথিবীতে যে ঘটনা ঘটে তা স্বর্গ ও পৃথিবীতে অনন্য।
 
সামাজিক এই পৃথিবীতে একটি পুরুষ যখন কোন নারীকে তার ইচ্ছার বিরুদ্ধে নগ্ন করে, তার জীবনের সব সম্মান কেড়ে নেয়, দেহটাকে রক্তাক্ত করে তখন পৃথিবীতে যে অন্ধকার দেখা দেয় তা নরকেও অনুপস্থিত।
 
দু’টি ঘটনার বর্ণনা ভিন্ন কিন্তু প্রকৃতির কাছে এর ফলাফল সমান। প্রকৃতি পশুকে মানুষ হবার সুযোগ দেয়নি, কিন্তু মানুষকে পশু ও মানুষ উভয়টাই হবার সুযোগ ও উপায় দিয়েছে। যে পশু হতে চায় সে কামুক হয়, যে মানুষ হতে চায় সে প্রেমিক হয়। কামে বিবেক নাই। প্রেমে বিবেকও আছে কামও আছে।

    0