Just Another Bangladeshi

Dec 13, 20202 min

পুরুষ

বেশ কয়েক বছর আগে আমি এক্সিডেন্ট করে, জ্ঞান হারিয়ে রাস্তায় ছিলাম প্রায় পনেরো মিনিট। চোখ খোলার পর চতুর্দিকে অনেকগুলো পুরুষের চোখ। ভয় পেয়ে খুব দ্রুত উঠতে চেষ্টা করেছিলাম। কেউ কেউ বলে উঠেছিলেন, আপনি ভয় পাবেন না! আমার মাথাটা একজন আপুর কোলে ছিলো। আমার চোখে মুখে পানির ছিটা! আপু বলেছিলেন, আমি রাস্তা দিয়ে হেঁটে যাচ্ছিলাম। আপনি মেয়ে জন্য উনারা আমাকে সাথে সাথে ডেকেছেন। হঠাৎ বয়স্ক একজন আমার আধ ভাঙা চশমাটা এনে হাতে দিলেন। স্নেহভরা কন্ঠে বলেছিলেন, "মা হাসপাতালে চলেন! আপনার হাত কেটে গেছে।" তিনি পুরুষ ছিলেন!

বাসে সিট না পেলে কোন না কোন পুরুষ দাঁড়িয়ে বলেন-
 
"ম্যাডাম বা মা আপনি বসেন। কন্ঠস্বরটি অচেনা পুরুষের!

কখনো মাছ কিনতে গেলে, কোন একটা কন্ঠ বলে উঠে- "আপারে ভালো মাছ দিস! কন্ঠটা একজন অচেনা পুরুষের!

বাস থেকে নামার সময় কেউ না কেউ বলে উঠে- "ব্রেক করেন, মহিলা নামবে।" কন্ঠস্বরটি অচেনা পুরুষের!

রাস্তা দিয়ে হেঁটে যাওয়ার সময় মাঝে মাঝেই চোখে পড়ে-
 
"কিছু পুরুষ হাত উঁচু করে হাঁটেন, যেনো ভিড়ের মধ্যে কোনো
 
মেয়ের শরীরে স্পর্শ না লাগে।" এই পুরুষগুলো আমার অচেনা!

একজন পুরুষ ভুল বুঝে ডিভোর্স দেয়, অন্য একজন অচেনা পুরুষ স্ত্রীর সম্মান দিয়ে ঘরে নিয়ে যায়।

স্ত্রী অপারেশন থিয়েটারে, স্বামী হাসপাতালে পায়চারি করতে করতে মনে মনে প্রার্থনা করতে থাকে...। এই মানুষটিও একজন পুরুষ!

অনেক বাবা সন্তানের মুখের দিকে তাকিয়ে আর দ্বিতীয় বিয়ে
 
করেন না। তিনিও পুরুষ!

সংসারের খরচ চালাতে হিমশিম অবস্থা, তারপরও মুখ ফুটে
 
কিছু বলছেন না। এই মানুষগুলোও পুরুষ!

রিকশা চালিয়ে মেয়েকে কলেজে পড়াচ্ছেন। তিনিও পুরুষ!

ঈদের কেনাকাটা পরিবারের সদস্যদের করা হয়েছে। একজন মানুষের কখনোই কিছু প্রয়োজন হয় না! সেই পুরুষটি কিন্তু বাবা!

ছোট ভাই রাস্তা পার হওয়ার সময় বারবার স্মরণ করিয়ে দিচ্ছে-
 
" আমার সাথে সাথে রাস্তা পার হবে কিন্তু!" ভাইটিও পুরুষ!

টিউশনির টাকা বাঁচিয়ে ঈদে মাকে শাড়ি কিনে দিচ্ছে। এই ছেলেটিও একজন পুরুষ!

বখাটে ছেলেরা সহপাঠীকে বিরক্ত করছে। কিছুটা পথ এগিয়ে দিচ্ছে, এই ছেলেটিও পুরুষ!

পুরুষ ধর্ষণ করে, ইভটিজিং করে, হত্যা করে কিন্তু গুটিকয়েক পুরুষের জন্য সমগ্ৰ পুরুষ জাতিকে দোষারোপ করা যায় না। ঠিক তেমন স্বল্প সংখ্যক নারীর জন্য নারী জাতিকে অপমান করাও যায় না। সবকিছুরই এপিঠ-ওপিঠ রয়েছে। এটাই তো জগতের নিয়ম!

আমার বাবা আজো আমার সকল কাজের প্রেরণা, আমার মাথায় বটবৃক্ষের ছায়া। ভাই, সবসময় উৎসাহ দেয়। বাসা থেকে বের হওয়ার সময় স্মরণ করিয়ে দেয়- "কোন সমস্যা হলে সাথে সাথে ফোন দেবে।" আমার বাবা, ভাইও পুরুষ! তাদের শ্রদ্ধা করি, তাহলে সব অচেনা পুরুষদের এক মাপকাঠিতে কীভাবে মাপি? প্রত্যেকটি মানুষ ভিন্ন,ভিন্ন তাদের আদর্শ। আর ছেলেদের কখনো দায়িত্ব কাঁধে চাপিয়ে দিতে হয় না। সময় হলে তাঁরাই অনায়াসে শত দায়িত্ব কাঁধে তুলে নেয়। তাঁরা আবেগ কম প্রকাশ করে, তাই বলে পাথর নয়! পুরুষরাও কাঁদে!! তবে, হাউমাউ করে নয়!! গাল বেয়ে অশ্রু ঝরে... নীরবে, নিভৃতে...!! যার সাক্ষী হয়ে থাকে; গভীর রাত, কখনো সমুদ্রের নীল, কখনো বা নির্জন আকাশ....।

    6