Just Another Bangladeshi

Mar 27, 20194 min

পৈতৃক সম্পত্তিতে কন্যার উত্তরাধিকার

কন্যা কি পিতার সম্পত্তির অংশ পাবে?

উত্তর হচ্ছে অবশ্যই পাবে।

তাহলে আমার বাকি কথাগুলো একটু ধর্য্য সহকার পড়ুন।

পোস্টের শুরুতে অনুপ কুমার দাসকে ধন্যবাদ জানাই। গ্রুপে কয়েকদিন আগে ঋগবেদর ৩.৩৩.১ ও ৩.৩১.২ এই দুটি মন্ত্রের ভার্বাথ জানতে চেয়ে সাথে বিশ্লেষ্ণণ ধর্মী কিছু একটা লেখা চেয়েছিলাম। এই বিষয়টা নিয়ে আরো জোরালো আলোচনা উচিত ছিল কিন্তু হয়নি। কারন হতে পারে এটা খুবই জটিল একটি সমাধান যা এক দুই পৃষ্ঠায় লিখে সব বোঝানো যাবে না। আমিও এত কিছু পড়ার বা ঘাঁটাঘাঁটির সুযোগ পাইনি। আর অনলাইনেও এটা নিয়ে তেমন কিছু লিখা হয়নি। ভারতের নারীরা পিতার সম্পত্তিতে পুত্রের সমান অংশীদারিত্ব পায় তাই এটা তাদের সমাজে কোন সমস্যা নয় তাই এই নিয়ে কেউ সময় নষ্ট করতে চায় না। কিন্তু আমাদের বাংলাদেশে হিন্দু সমাজের নারীদের ক্ষেত্রে এটা একটা বড় ধরনের সমস্যা। পৈতৃক সম্পত্তি বঞ্ছিত হওয়া নারীদের জন্য শুধু অপমান জনক নয় অভিশাপও বটে। তাই এই নিয়ে আমি আগে অনেকবার বিভিন্ন গ্রুপে জোড়ালো অবস্থান রেখেছিলাম। যার ফলে হিন্দু সংগঠনের অনেকের সাথে আমার তর্কাতর্কি এমনকি সম্পর্ক নষ্ট পর্যন্ত হয়ে গেছে।

তাহলে হিন্দু নারীরা কি অধিকার বঞ্চিত?

পৈতৃক সম্পত্তিতে নারীর কোন অধিকার নেই। যদি থাকে সেটা শর্ত সাপেক্ষে। সূত্র হিসেবে বলা হয় মনুস্মৃতি যা তিনি ঋগবেদ এর আলোকে এই বিধান পেয়েছেন।কথা সত্য আসলে এমনই সিদ্ধান্ত রয়েছে। তাহলে আমি একটা প্রশ্ন করি পৈতৃক সম্পত্তিতে শুধু পুত্রের অধিকার এমন কোন মন্ত্র বা রেফারেন্স রয়েছে? আমি খুব সাধারন ভাবে বলছি কোন সাহিত্য রচনা করছি না। আমি কোন বেদ পন্ডিত নই যে একের পর এক রেফারেন্স দেবো। রেফারেন্স আপনার খুঁজে বের করবেন।

বেদ হচ্ছে মানবজাতির একমাত্র সংবিধান আর এই সংবিধান কোন অশিক্ষিত মানুষের স্বপ্নের পাওয়া কোন বিধান নয়।কালের কালস্রোতে এই পবিত্র বেদকে মানুষের অত্যাচারের জন্য ঢাল হিসেবে ব্যবহার করেছে ধর্ম ব্যবসায়ীরা যা আজও আমাদের সমাজে বিদ্যমান। সেভাবেই নারীকে পৈতৃক সম্পত্তি বঞ্চিত করার জন্য পবিত্র বেদকে ব্যবহার করা হয়েছে খুবিই চতুরতার সাথে।

কিভাবে? সেটা জানলে আপনি আশ্চর্য্য হয়ে যাবেন। পবিত্র বেদে একটি আদর্শ সমাজ কি রকম হওয়া উচিত তার একটী দিক নির্দেশনা দেয়া হয়েছে। সেই সমাজে নারীকে সব চাইতে উঁচু আসনে বসানো হয়েছে। সেটা নিয়ে অন্য একদিন রেফারেন্স সহ আলোচনা করবো। আজ শুধু পৈত্তৃক সম্পত্তির অধিকারের মধ্যে সীমাবদ্ধ থাকবো।

বৈদিক সমাজে পৈতৃক সম্পত্তি বলে কোন সম্পত্তি নেই !

হ্যাঁ ঠিকই শুনেছেন। যেখানে পৈতৃক সম্পত্তিই নেই সেখানে কিভাবে তার অংশ পুত্র ও কন্যার মাঝে ভাগ ভাটোয়ারা হবে? বৈদিক সমাজে সম্পত্তি হচ্ছে পরিবারের কোন ব্যাক্তির নয়। অর্থাৎ পুরো পরিবার মিলে সম্পত্তির দেখাশোনা করবে, ভোগ করবে এবং আরো বর্ধিত করার জন্য চেষ্টা করবে। এমনকি পিতামাতার মৃত্যুর পরে সেই সম্পত্তি একাধিক ভাইয়ের মাঝে ভাগাভাগি হয় না যেমনটা এখনকার সমাজে হয়। পরিবারে পিতা মাতা তাদের সন্তানদের (কন্যা ও পুত্র উভয়কে)শিক্ষিত করে উপযুক্ত করে তুলবেন। পুত্র ও কন্যার মাঝে কোন আলাদা করা যাবে না। কন্যার যতদিন বিবাহ না হচ্ছে ততদিন সে পিতার পরিবারে তার উপর অর্পিত দ্বায়িত পালন করবে। কিন্তু বিবাহের মাধ্যমে একজন কন্যা স্বামীর পরিবারে অন্তর্ভুক্ত হয়ে যান। তখন তিনি স্বামীর ( নিজের ) পরিবারের তার উপর অর্পিত দ্বায়িত্ব পালন করেন। আগেই বলেছি বৈদিক সমাজে সম্পত্তি পরিবারের কোন ব্যাক্তির নয়। কন্যা বিবাহের মাধ্যমে অন্য পরিবারে চলে যায় বিধায় পিতামাতা পরিবারের সম্পত্তির উপর তার আর কোন অর্পিত দ্বায়িত্ব থাকে না।তাকে দ্বায়িত্ব থেকে অব্যাহতি দেয়া হয় বঞ্ছিত নয়।ধরুন আপনি এখন ঢাকার কোন অফিসে কর্মরত আছেন। তাহলে ঐ অফিসে আপনার কিছু নির্দিষ্ট জব ডিস্ক্রিপন আছে। সেটা আপনি নিষ্ঠার সাথে পালন করলেন। সেই অফিসে আপনার কিন্তু দায়বদ্ধতা আছে। এখন আপনি যদি চট্টগ্রামের অফিসে বদলি হয়ে যান তাহলে আপনার পুর্বের অফিসে অর্থাৎ ঢাকার অফিসে আপনার কোন দায়বদ্ধতা থাকে কি না? ব্যাপারটা অনেকেটা সেই রকম। বিবাহ বন্ধনের মাধ্যমে অন্য নতুন একটি পরিবার অন্তর্ভুক্ত হওয়ার পরে পিতার পরিবারের সাথে তার সম্পর্ক কিন্তু ছিন্ন হয় না। সেখানেও কিছু সামাজিক বিধি বিধান আছে। বেদে চার ধরনের দৃষ্টিকোন রয়েছে আধত্মিকতা, আচারিকতা, আদি দৈহকতা, ও লৌকিকতা। এখানে এই ব্যাপারটি হচ্ছে আচারিকতা ও লৌকিকতার অংশ।

হিন্দু ধর্মে একমাত্র নারীর ব্যাক্তিগত সম্পত্তির বিধান রয়েছে।

নারীর ব্যক্তিগত সম্পত্তিকে বলা হয় স্ত্রীধন যা তিনি পিতা ও স্বামীর পরিবার থেকে প্রাপ্ত বিভিন্ন উপহার সামগ্রী যেমন অলংকার,আসবাবপত্র, পোষাক,যানবাহন, গবাদি পশু, জমিজমা ইত্যাদি। অনেকে বলেন যেহেতু হিন্দু ধর্মে পিতার সম্পত্তি কন্যা পায় না তাই বিয়ের সময় পিতার পরিবার তাকে উপহার হিসেবে কিছু প্রদান করেন। কি সুন্দর করে পণের টাকা পাওয়াটা লিগালাইজ করছে। এই অভিশপ্ত যৌতুক বা পণ প্রথা নামে কত নারীর প্রাণ গেছে তা আমরা সকলেই কম বেশী জানি।আসল সত্যটা হচ্ছে পবিত্র বেদে পণ বা যৌতুক বলতে বলা হয়েছে “পিতা তার কন্যকে পণ হিসেবে উপযুক্ত শিক্ষা ও সংস্কার প্রদান করবে”।সে যাই হোক এই স্ত্রীধনের উপর একমাত্র নারীর অধিকার রয়েছে স্বামী কিংবা স্বামীর পরিবারে কারো কোন অধিকার নেই। সেই ধন পিতা ও স্বামীর কোন পরিবারের ধন নয় এগুলো নারীর ব্যক্তিগত সম্পত্তি।এই স্ত্রীধনের উত্তরাধিকার পাবে শুধুমাত্র ঐ নারীর কন্য বা কন্যাগন ক্ষেত্র বিশেষে পুত্র বাস পুত্রগণ। এখানে আরেকটি সিদ্বান্তের কথা উল্লেখ করতে ভুলে গিয়েছিলাম কোন পিতা মাতা যদি পুত্র সন্তান না থাকে সেক্ষেত্রে কন্যার পুত্র সন্তান পিতা মাতার পরিবারের সম্পত্তি দেখাশোনা দ্বায়িত্ব প্রাপ্ত হয়।আবার বিবাহিত কন্যাকেও ক্ষেত্র বিশেষে উভয় পরিবারের সম্পত্তির দেখাশোনার দ্বায়িত্ব পালন করতে হয়। তাই এখানে মোটা দাগে বলছি বৈদিক সমাজ ব্যাবস্থায় সম্পত্তি পরিবারের কোন ব্যাক্তির নয় তাই এই সম্পত্তি ভাগ ভাটোয়ারা কোন বিধান সেখানে নেই। তাই নারীর উত্তারাধিকার বঞ্ছিত হবার কোন প্রশ্নই আসে না।

কিন্তু বর্তমান সমাজ ব্যবস্থা তো বৈদিক সমাজ ব্যবস্থা নয়, এটা মানুষের তৈরী সমাজ ব্যবস্থা।

এখানেই সবচেয়ে বড় শুভংকরের ফাঁকিটা দেয়া হয়েছে। বর্তমানে সমাজ ব্যবস্থায় সম্পত্তি ব্যাক্তি কেন্দ্রিক পরিবার কেন্দ্রিক নয়। পিতা মাতার মৃত্যুর পরে সম্পত্তি শুধু মাত্র পুত্র বা একাধিক পুত্র সন্তানের মাঝে ভাগাভাগি হয়।এই বিধান মানুষ তৈরী করেছে।কিন্ত্রু পবিত্র বেদ এর দোহায় দিয়ে বাংলাদেশী হিন্দু নারীকে করা হচ্ছে বঞ্ছিত যুগের পর যুগ। যেখানে একজন হিন্দু নারীকে পিতা ও ভাইয়ের দাক্ষিণ্যের উপর নির্ভর করতে হয়। আর এই ঘৃণ্য পারিবারিক প্রথাটি গড়ে উঠেছে আসল পটভুমিকে আড়াল করে। বর্তমান সমাজে সম্পত্তি যখন পরিবারের নয় তাহলে সেখানে সন্তান হিসেবে কন্যাও পিতামাতার সম্পত্তির পুর্ণ দাবীদার।এই সত্য উপলন্ধি করে ভারত সরকার তাদের সংবিধানে নারীকেও পৈতৃক সম্পত্তির উত্তরাধিকারিত্ব নিশ্চিত করা হয়েছে। কিন্তু বাংলাদেশে হিন্দু সমাজের এই বিধানটির সংস্কার হয়নি বিধায় আজও হিন্দু নারীরা বঞ্চিত হচ্ছে।তাই হিন্দু নারীকে তার অধিকার ফিরিয়ে দেয়া এখন সময়ের দাবী।

আমার বক্তব্য হচ্ছে আপনি যদি সত্যিকারের বৈদিক হোন তাহলে আপনার করনীয় হচ্ছে আইন যাই হোক আপনি কোন অবস্থায় নারীর অধিকার বঞ্ছিত করবেন না। আপনার বোনকে তার অধিকার ফিরিয়ে দিন। তার জন্য নিজের মনকে বেদের আলোকে আলোকিত করুন।

বিঃ দ্রঃ আমার সামান্য জ্ঞানে ভুলত্রুটি হওয়াটা খুবই স্বাভাবিক। সেগুলো ক্ষমা সুন্দর দৃষ্টিতে দেখার অনুরোধ রইলো। সকলে এই করোনায় ঘরে থাকবেন,সুস্থ থাকবেন ।