Just Another Bangladeshi

Dec 25, 20163 min

জগন্নাথ লীলা থেকে শিক্ষা পর্ব ০৩

আমরা জানি জগন্নাথের এই রূপ কেন। দ্বারকা রাজা কৃষ্ণ যখন তাঁর প্রধান আট রানী সহ রাজ প্রসাদে থাকতেন তখন তাঁর রানীরা কৃষ্ণকে সেবা করে তৃপ্তি পাচ্ছিল না। রানীরা অনেক প্রেম দিয়ে সেবা করতো সেই সেবাতে কৃষ্ণের কেন জানি সুখ হতো না। তারা কৃষ্ণের জন্য মালা গাঁথতো, কৃষ্ণ সে মালা হাতে নিয়ে বলত সুন্দর কিন্তু বৃন্দাবনের ব্রজ গোপীকাদের মতো হয়নি । আবার কৃষ্ণের জন্য শয্যা রেডি করে রাখত, কৃষ্ণ বলত ভাল নরম বিছানা হয়েছে, কিন্তু গোপীরা যে বিছানা করত সেটা আরো নরম ছিল সুখ প্রদান করত। ঘুমের মধ্যে মাঝে মাঝে রাধা রাধা বলে চিৎকার করে উঠত। এরপর কৃষ্ণের জন্যে রানীরা রান্না করে আনত, কৃষ্ণ বলত মাতা যশোদার মতো হয় নি। তাই দ্বারকাবাসী মহিষীদের ইচ্ছা হল বৃন্দাবন কী রকম জায়গা , কী রকম সেবা ওখানে কী হত তা জানার ইচ্ছা হল। কিন্তু কে বলবে বৃন্দাবনের কথা? অনেক ভেবে খুঁজে পেলেন একজন কে। তিনি হলেন বলরাম মাতা রোহিনী।

রোহিনী মাতা শর্ত দিয়েছেন বললেন আমি যখন লীলা বলব তখন যেন কৃষ্ণ আর বলরাম না আসে। তখন তারা সুভদ্রাকে দরজায় পাহাড়া দিতে বলল যাতে কৃষ্ণ আর বলরাম আসলে তাঁকে ইশারা দিতে পারে। ইশারা দিলে মাতা রোহিনী চুপ হয়ে যাবেন। সুভদ্রা দুয়ারে বসে আছেন, মা রোহিনী মাতা বলছেন বৃন্দাবনের সেই অপূর্ব লীলা কথা। বাৎসল্যরসের কথা, সখ্য রসের কথা, মধুর রসে কথা বলতেন লাগলেন। মধুর রসের সঙ্গে মা জড়িত না তবে দেখেছেন তিনি গোপীদের, দেখছেন তাদের বিরহ।সেই সব কথা সব বিস্তার করে বলছেন। আর প্রভুর ভক্তরা, রাণীরা আকুল হয়ে শুনতে লাগল।
 
শুনতে শুনতে তাঁরা ভাবাবেগে অস্থির হয়ে উঠল।ওদিকে কৃষ্ণ বলরাম ছিলেন রাজসভায়। তারা সেখানে থাকতে পারছেন না।

কৃষ্ণকথা কৃষ্ণকে আকর্ষণ করে।
 
শ্রীকৃষ্ণের নিজ বাক্য আছে, "নাহং তিষ্ঠামি বৈকুন্ঠে যোগীনাংহৃদয়ে ন চ। মদভক্তাঃ যত্র গায়ন্তি তত্র তিষ্ঠামি নারদ।।" ভগবান যোগীদের হৃদয়েও থাকেন না আবার বৈকুন্ঠেও থাকেন না। কোথায় থাকেন তবে? শ্রীকৃষ্ণ বলছেন আমার ভক্তরা যেখানে আমার কথা গুণকীর্তন করে সেখানে আমি থাকি। বাড়ির মধ্যে বসে রোহিনী মা মাধুর্যমন্ডিত ব্রজের কথা বলছেন কৃষ্ণ কি রাজসভায় থাকতে পারেন? কৃষ্ণকথা কৃষ্ণকে আকর্ষন করেছেন। কৃষ্ণ বলছেন বলরামকে, "দাদা এখানে আর ভাল লাগছে না। চল ভিতরে যায় । ওখানে কি যেন আনন্দ হচ্ছে। "

কিন্তু তাঁরা যে এলেন একবার হুট করে এলেন না। আস্তে আস্তে এলেন। এসে সুভদ্রা যেখানে বসে আছেন ঠিক তার দুই পাশে এসে দাঁড়ালেন। কৃষ্ণ বলরাম এসে সুভদ্রার পাশে দাঁড়ালেন এবং দাঁড়িয়ে নিজেদের লীলা কথা শুনতে লাগলেন। সুভদ্রা তাদের লক্ষ্য করলেন না। কারন সুভদ্রাও কৃষ্ণকথায় বিহ্বল ছিলেন।

কৃষ্ণ, বলরাম সুভদ্রার কাছে দাঁড়িয়ে নিজেদের কথা মা মুখে শুনছেন। কত কথা গোপীদের প্রেম, শ্রীমতি রাধার বিরহ, সেই ব্রজের কথা, বাঁশীর সুরে গোপীদের আকুলতার কথা। রাধার প্রেমের কত কথা আজ শুনছে।
 
যত শুনছেন তত আনন্দে গলে যাচ্ছেন। কৃষ্ণ বলরাম আনন্দে বিগলিত হয়ে যাচ্ছেন। মাঝে সুভদ্রা যে দাঁড়িয়ে আছেন তিনিও গলে যাচ্ছেন। সুদর্শনও আজ গলে যাচ্ছে। চিন্ময় দেহ মুখ গোলাকার হয়ে যাচ্ছে, হাতপা গলে গেছে। হাত নিচের দিকে নেই, পা নিচের দিকে নেই। এইভাবে নিজের কথা নিজে শুনছেন আর গলে যাচ্ছেন।

দের্বষি নারদ বলছেন, " আমার মহা সৌভাগ্য। আমি বীনা নিয়ে গান করতে করতে ঐ সময় বিমানপথে কি যেন আকর্ষনে দ্বারকা এলেন। ঠাকুর মনে হয় আমাকে আকর্ষন করে ছিল । এসে কি অদ্ভুত লীলা দেখলাম। সাজানো দ্বারকায় অন্দরমহলে দ্বারকাবাসী কৃষ্ণকথা শুনছেন। রোহিনী মা বলছেন। আর তা শুনে বলরাম কৃষ্ণ সুভদ্রা কথা শুনতে শুনতে গলে গেলেন । এমন কথা যে প্রেমে প্রভু গেলে গেলেন। এমন কি সুদর্শনও গেলে গেল।" কথা হঠাৎ বন্ধ হয়ে গেল। আমার কারনে কি না জানি না।"

আবার সব আগে মত হয়ে গেল। প্রভু বললেন- "নারদজী তুমি এখানে।" আমি বললাম- "ও প্রভুআমি নিজে আসি নি। মনে হল কিসের আকর্ষনে আমি এখানে এলাম। আজ একি রূপ দেখলাম প্রভু।"

প্রভু বললেন-" তুমি অনেক ভাগ্যবান। এই রূপ দেখলে তুমি।"
 
নারদজী বললেন- প্রভু আপনার কথা শুনে আপনি নিজে গলে গেলেন। তবে কেমন এই প্রেমের কথা, সেই কথা আমাদের না জানি কত আনন্দ দেবে। নিজের কথা শুনে প্রভু তুমি প্রেমে গলে গেলেন। অপূর্ব রূপ তোমার প্রভু। এই রূপ যে জগত্কে দেখাতে হবে গো প্রভু। "

প্রভু বললেন, " সামনে কলিতে এই রূপে আমি সেবিত হব নারদ। তুমি প্রতিষ্ঠা করবে আমাকে।"

জগন্নাথ গেলে গেলেন প্রেমে। প্রেমময় বিগ্রহ এই জগন্নাথের।

শিক্ষা - জগন্নাথ শ্রবণে আগ্রহি । আজকে জগন্নাথের এই রূপের কারন হলো নিজের কথা শ্রবণ করেছে তাঁর প্রিয় ভক্তদের কথা শ্রবণ করেছে। তাই কেউ যখন ভগবানের সামনে প্রার্থনা করে তখন ভগবান খুব খুশি হয়। উনি মন্দিরে দাঁড়িয়ে আছে আমাদের কথা শোনার জন্য। আমরা জগন্নাথের কাছে তাঁর লীলাময় কাহিনী কীর্তন করতে পারি। তখন তিনি খুশি হয়ে আমাদের উপর কৃপা বারিষ করবেন। তাই আমরা যদি ভগবানকে সন্তুষ্ট করার জন্য তাঁর নাম কীর্তন করি তাহলে ভগবান সন্তুষ্ট হবে। তাই তাঁর সন্তুষ্ট বিধানের উদ্দেশ্যে আমাদের হরিনাম করা উচিত।

    2