Just Another Bangladeshi

May 18, 20152 min

কেন বাংলার রেনেসাঁ হল না?

নবজাগরণ বলতে আমরা বুঝবো- একটি স্থবির, কুসংস্কারাচ্ছন্ন অন্ধকার সময় পেছনে ফেলে অধিকার আদায় করে মানবিক সমাজ প্রতিষ্ঠার সূচনা। ইউরোপে রেনেসাঁ অন্ধকার যুগকে কাটিয়ে এনেছিল আধুনিক যুগ। ইউরোপে অবশ্য পুনঃর্জাগরণ বলা হয় কারণ তারা গ্রিক সভ্যতার সেই ভাবনাগুলোই ধারণ করেছিল অন্ধকার যুগ পেরিয়ে। তারা আবার জ্ঞানের আলোয় পা রেখেছিল। আমাদের হবে আসলে জাগরণ, নব বা পুনঃজাগরণ নয়। বাস্তবিক আমাদের কি জাগরণ কোনদিন ঘটেছিল

কেন ইউরোপে জাগরণ এসেছিল

অন্ধকার যুগের শেষ দিকে ইউরোপীয়ানরা আবিষ্কার করছিল বিভিন্ন সমুদ্রপথ। প্রসার ঘটছিল বাণিজ্যের। গড়ে উঠছিল নতুন নতুন রাষ্ট্র, নগর। তৈরি হচ্ছিল একটি শক্তিশালী মধ্যবিত্ত শ্রেণি। তারা আকৃষ্ট হচ্ছিল বিজ্ঞান, দর্শন, শিল্প, সাহিত্য ও ইতিহাসের প্রতি। শিক্ষিত ও সচেতন শ্রেণির সম্মান বৃদ্ধি পাওয়ায় শিক্ষার প্রতি একটি ঝোঁক তৈরি হয়েছিল। সমাজে তৈরি হচ্ছিল ডাক্তার, ইঞ্জিনিয়ার, শিক্ষক, আইনজীবী, সরকারি কর্মচারী এবং অনেক ক্ষুদ্র উদ্যোক্তা। তারা রাষ্ট্রের ও নাগরিকদের উপর চার্চের প্রভাব দুর্বল করতে সক্ষম হয়। ধর্মের নামে চলছিল যাবতীয় অযৌক্তিক, অবৈজ্ঞানিক, কুসংস্কারাচ্ছন্ন, অমানবিক কর্মকাণ্ড। অগ্রসর মানুষেরা ধর্মের নামে পৈশাচিক বর্বরতা, শোষণ, কুসংস্কার, ভিন্নমত, মানবাধিকার নিয়ে কথা বলতে লাগলো।তারা ধর্মনিরপেক্ষ রাষ্ট্রের ধারণা নিয়ে আসলো, কথা বললো শোষণমুক্ত অর্থনীতি নিয়ে, কথা বললেন নারী স্বাধীনতা নিয়ে, লেখা হল নাটক, উপন্যাস, কবিতা, দর্শন, বিজ্ঞান, ইতিহাস। ঘটলো নবজাগরণ।

বাংলায় কেন আসলো না জাগরণ

যদিও কেউ কেউ দাবি করেন বাংলাদেশেও জাগরণ ঘটেছিল। বাস্তবিক জাগরণের সম্ভাবনা তৈরি হয়েছিল কিন্তু জাগরণ ঘটেনি। যাদের আমরা জাগরণের মধ্যমণি বলি বাস্তবিক তারাই ছিলেন প্রতিবন্ধক। একমাত্র ইচ.এল.ভি ডিরোজিও ও তার বিপ্লবী শিষ্যবৃন্দ সূচনা করেছিলেন কিন্তু তাকে স্কুল থেকে বহিষ্কার করা ও আকস্মিক মৌলবাদীদের হাতে খুন হওয়া, সেই সম্ভাবনা শেষ করে দেয়। অক্ষয় কুমার দত্ত, মাইকেল মধুসূদন দত্তসহ খুব কম জনই ধর্মীয় বাঁধা পেরোতে পেরেছিলেন কিন্তু তারা যাদের উপর নির্ভরশীল ছিলেন তারাও ছিল প্রতিবন্ধক।

রাজা রামমোহন রায়কে তৈরি করেছিলেন ইংরেজরা। তিনি ইংরেজদের সমর্থন করে গেছেন এবং তাদের ভাবাদর্শ অনুযায়ীই সতিদাহ প্রথার বিরুদ্ধে কথা বলেছেন, ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগরও ইংরেজদের তোষণ করেছেন এবং তাদের মতাদর্শ মতেই শিক্ষা বিস্তার ও বিধবা বিবাহের পক্ষে কাজ করেছেন। সতিদাহ প্রথা বন্ধ, বিধবা বিবাহ ও শিক্ষা বিস্তার গুরুত্বপূর্ণ হলেও তারা ব্যাপক মানুষের মধ্যে সাড়া জাগাতে পারেননি। মানুষ তখন চাচ্ছিল ইংরেজদের দখলমুক্ত। দেবেন্দ্রনাথ ঠাকুর, রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর, কেশবচন্দ্র সেন, বিপিনচন্দ্র পালসহ আরো অনেকেই ছিলেন নতুন ধর্ম ব্রাহ্ম ধর্মের বিস্তারে নিয়োজিত। তারা আধ্যাত্মিক সাধনা করতেই ব্যস্ত থাকতেন। এছাড়া এরা ছিলেন ধনীক শ্রেণির মানুষ যারা প্রজা নিপীড়নই করতেন। তারা কোন ভাবেই পরিবর্তন বা জাগরণ ঘটুক তা চাননি। শ্রী শ্রী রামকৃষ্ণ পরমহংসদেব ও স্বামী বিবেকানন্দ নিয়োজিত ছিলেন হিন্দুত্ববাদী চেতনা জাগ্রত করতে। মুসলিমদের মধ্যে লেগেছিল ওহাবীবাদের ঢেউ আর বৃটিশ বিরোধীরাও যতটা বৃটিশ খেদাও আন্দোলনে জড়িত ছিলেন ততটা প্রগতিশীল ছিলেন না বরং অনেকেই ছিলেন কট্টর ধর্মান্ধ। তাদের হাতে কোনরূপ জাগরণ সম্ভব ছিল না এবং বাস্তবিক হয়ওনি।

এখনই দক্ষিণ এশিয়ায় একটি শক্তিশালী মধ্যবৃত্ত শ্রেণি গড়ে উঠেছে যারা শিক্ষায় এগিয়ে এসেছে। সমাজে বিরাজ করছে বহু কবি, ঔপন্যাসিক, শিক্ষক, চিকিৎসক, আইনজীবী, চাকরিজীবী, উদ্রোক্তাসহ বহু পেশার শিক্ষিত মানুষ। তাদের দরকার জাগরণ। তাদের হাত ধরেই আসবে জাগরণ। সেই সূচনাটাই দেখছি। কে কে ভূমিকা রাখবেন সেটাই বিষয়

    0