Just Another Bangladeshi

Jul 17, 20162 min

কেন গ্রীক জাগরণ থেমে গিয়েছিল?

পিথাগোরাস সামোস দ্বীপ থেকে সমুদ্রগামী জাহাজকে লক্ষ্য করে দেখেন যে পাল ও মাস্তুল সবার শেষে দিগন্তরেখা থেকে অন্তর্হিত হয়। তিনি তা দেখে বলেছিলেন, ভূপৃষ্ঠ সমতল নয় বরং তা গোলাকার।

ডেমোক্রিটাস বলতেন, স্বৈরতন্ত্রের অধীনে সম্পদশালী হওয়ার চেয়ে গণতন্ত্রের অধীনে দরিদ্র থাকাও শ্রেয়তর। বিশুদ্ধ জড়বাদী এই দার্শনিক গ্রিসের সমসামিয়ক ধর্মকে মনে করতেন সকল দুস্কর্মের ধাত্রী। তিনি ছিলেন, দেবতা ও আত্মার অস্তিত্ব ও অমরত্বে অবিশ্বাসী। তিনি বলেছিলেন, কিছুই অস্তিত্বশীল নয়- একমাত্র পরমাণু ও শূন্য ছাড়া।

এ্যানোক্সোগোরাসই প্রথম বলেন, চাঁদের আলো হচ্ছে সূর্য থেকে প্রতিফলিত, যার ওপর নির্ভর করে চন্দ্রকলার হ্রৃাসবৃদ্ধি, চাঁদের বুকেও রয়েছে পাহাড়-পর্বত। শুধুমাত্র তাদের হাতের উৎকর্ষের কল্যাণে তিনি মানুষকে অন্যান্য জীবজন্তুর চেয়ে উন্নততর বিবেচনা করতেন।

এরিস্টার্কাস গ্রহণের সময় চাঁদে পতিত পৃথিবীর ছায়া দেখে ধারণা করেন যে, সূর্য পৃথিবী থেকে অনেক দূরে অবস্থিত এবং তা অনেক বড়। সুতরাং এমন বড় একটি বস্তু পৃথিবীর মতো একটা ছোট বস্তুকে আবর্তন করবে তা যুক্তিগ্রাহ্য নয়। তিনি যুক্তি দেন, পৃথিব নয়, সূর্যই গ্রহমণ্ডলের কেন্দ্র।

হিরাক্লিডস আবিষ্কার করেন যে, পৃথিবী প্রতি ২৪ ঘণ্টায় তার অক্ষের চারদিকে ঘুরে আসে। আকাশের উজ্জ্বলতম দুটি গ্রহ বুধ ও শুক্র পৃথিবীকে নয়, সূর্যের চারদিকে আবর্তন করে।

হিপারকাস সঠিকভাবে চান্দ্র মাসের হিসাব করেন। তিনি চাঁদ ও সূর্যের দূরত্ব পরিমাপ করেন।

এরাটোস্থেনেস জেনেছিলেন আলেকজান্দ্রিয়ার ৫০০ পাইল দক্ষিণে সিয়েনে জুন মাসের ২১ তারিখে দুপুরবেলা একটি কাঠির কোন ছায় হয় না। অথচ আলেকজান্দ্রিয়াতে ৭ ডিগ্রি কোন উৎপন্ন করে। তিনি হিসাব করে পৃথিবীর পরিধি এবং ব্যাস বের করেন। তার হিসাব প্রকৃত হিসাবের খুবই কাছাকাছি ছিল। মাত্র ৫০ মাইল কম করেছিলেন। পৃথিবীর প্রকৃত ব্যাস ৭৪৫০ মাইল (গড় ব্যাসার্ধ ৩৯৫৮.৮)।

আর্কিমিডিস আবিষ্কার করেন পানি সেচের যন্ত্র। তিনি যুদ্ধের জন্য ৪০ প্রকারের মারাত্মক অস্ত্র আবিষ্কারে করেন।তিনি তরল পদার্থের প্লবতার সূত্র, কপিকলের শক্তি, পাইয়ের মান আবিষ্কার করেছিলেন।

টলেমি হিসাব করে পৃথিবী থেকে চাঁদের দূরত্ব বের করে ফেলেছিলেন।

সেই জ্ঞান চাপা পড়ে যায়। সক্রেটিসের প্রাণদণ্ডসহ কয়েকটি ঘটনায় এমনিতেই এথেন্সের দর্শন ও বিজ্ঞান চর্চা বাধাগ্রস্থ হচ্ছিল। উত্থান ঘটে আলেকজান্দ্রিয়ার। রোমানদের হাতেই তা ধ্বংস হয়। একসময় এথেন্স চলে আসে রোমান সাম্রাজ্যের অধীনে। খ্রিস্টধর্মের মৌলিক চেতনার পরিপন্থী বলে সমস্ত বাইজেন্টাই সাম্রাজ্যে দর্শন ও বিজ্ঞানচর্চা নিষিদ্ধ করা হয়। ইউরোপেই থেমে যায় চিন্তা, দর্শন ও বিজ্ঞান। ইউরোপ দীর্ঘদিন ঘুমিয়ে থাকে অন্ধকার যুগে এবং রেনেসাঁ পর্যন্ত।

সেই দুই হাজার বছর যদি জ্ঞানচর্চা অব্যাহত থাকতো তাহলে পৃথিবীর মানুষ আরো এগিয়ে যেতো। এক খৃস্টান ধর্মের উগ্রতা ও মৌলবাদই বিশ্বকে ২ হাজার বছর পিছিয়ে দেয়। এথেন্সের ভাবনাগুলোই ২ হাজার বছর পরে ফিরে আসে ইউরোপে। আমরা কোপার্নিকাস, ব্রুনো, গ্যালিলিওকে দেখি এথেন্সের বিজ্ঞানীদের জায়গাটাতেই ফিরে যেতে। তারা পেরিছিল বলেই খৃস্টধর্মের ভুল ও মিথ্যাচারকে উপড়ে ফেলে দিয়ে ইউরোপসহ উন্নত বিশ্বকে অন্যান্যা বিজ্ঞানী/দার্শনিকগণ নিয়ে এনেছেন আজকের অবস্থানে। যদি ওই ২ হাজার বছরও জ্ঞান চর্চা অব্যাহত থাকতো তাহলে আমরা কতোটাই না এগিয়ে থাকতাম!

    0