Just Another Bangladeshi

Aug 21, 20164 min

আমি কেন ঈশ্বরের অস্তিত্ব নিয়ে সন্দেহ করি ?

বহুত কারন আছে ভাই, তার কয়েকটা আপনাকে বলি-
 
১) আমার সংশয়ের প্রথম ও প্রধান কারণ হলো ঈশ্বরের বাস্তবে কোন অস্তিত্ব নেই। যদি ঈশ্বর বলে কেউ সত্যিই থাকতেন তাহলে তিনি অবশ্যই তার অস্তিত্বের প্রমাণ মানুষকে দিতেন।
 
যেমন, ধরুন ইসলাম ধর্মে বলা হয়েছে ঈশ্বর সাত আসমানের ওপরে তার আরশে অধিষ্ঠিত আছেন। যদিও বিজ্ঞানের কল্যাণে আমরা জানি, সাত আসমান বলে কিছু নাই, তবুও যুক্তির খাতিরে ধরে নিলাম তিনি সেরকম কোথাও আছেন। তাহলে তিনি কি সেখান থেকে কোন সিগনাল আমাদেরকে পাঠাতে পারেন না যাতে আমরা ডিটেক্টর মেশিনে শনাক্ত করে বলতে পারি যে এটা ঈশ্বর প্রেরিত সংকেত? অথবা তিনি প্রকান্ড বড় একটা মাইক্রোফোন নিয়ে ওপর থেকে একদিন জোরে আওয়াজ তুলে এভাবে ঘোষণা দিলেই পারেন যে-

"হে দুনিয়ার মানব, আমি তোমাদের স্রস্টা বলছি। তোমরা এখন থেকে আর আমার অস্তিত্ব নিয়ে সন্দেহ করো না। আমি অবশ্যই একজন আছি এই মহাবিশ্বের সৃষ্টি কর্তা ও পালনকর্তা। অতএব তোমরা আমারই মুখাপেক্ষী হও। "

তাহলে দেখা যাবে পৃথিবীর সকল অঞ্চলের মানুষ এই অলৌকিকে অদৃশ্য আওয়াজ একই সময়ে যখন শুনতে পারবে, তখন তারা এই মহাজাগতিক ভয়েস কে যন্ত্রে এনালাইসিস করে শিওর হতে পারবে যে,এটা কোন দুনিয়ার কোন মানুষের আওয়াজ হতে পারে না। তারপর তারা আর কেউ স্রস্টার অস্তিত্ব নিয়ে সন্দেহ পোষণ করবে না।

২) ঈশ্বর বলে যদি সত্যিই কেউ থাকতেন, তাহলে তিনি তার সৃষ্টির মধ্যে খাবার নিয়ে হানাহানি লাগিয়ে দিতেন না। এই যেমন দেখেন বড় বড় বনের পশুপাখিদের খাদ্য শৃংখলের ব্যাপারটা। এক প্রাণী খাচ্ছে আরেক প্রাণীকে। বাঘ, সিংহ, হায়েনা এরা খাচ্ছে হরিণ, বানর, মহিষ , হাতি,জিরাফ এদেরকে। বাঘ, সিংহ, হায়েনার কারণে এইসব প্রাণীরা প্রতিটা মুহূর্ত ভয়ে থাকে। একটা হাতি বাচ্চা জন্ম দেওয়ার সময় সব হাতির পাল মিলিতভাবে পাহাড়া দেয় বাচ্চাটাকে রক্ষা করার জন্য। একটা মা জিরাফ বাচ্চা জন্ম দেওয়ার পর পরই পা দিয়ে লাথি মেরে মেরে অল্প সময়ের মধ্যেই বাচ্চাটাকে দৌড়াতে শিখায়, নাহলে যে বাচ্চাটা বাঘ, সিংহ, কিংবা হায়েনার পেটে চলে যাবে। ডিসকভারিতে চোখ রাখলে এরকম আরও অনেক অনেক প্রানীর উদাহরণ দেখতে পারবেন, কিভাবে এরা চরম প্রতিকূল পরিবেশে যুদ্ধ করে টিকে থাকে এবং নিজেদের স্বজাতিকে রক্ষা করে, নিজেদের সবমিলিয়ে বনের মধ্যে চরম এক বিশৃংখল পরিবেশ বিরাজ করে প্রতিমুহূর্তে। মানবজাতির ইতিহাস থেকে আমরা জানতে পারি, আমাদের পূর্ব পুরুষেরাও একসময় বনে বাদাড়ে, পাহাড়ের গুহায়, গাছের ঢালে বাস করতো। এখনকার বনের পশুদের মতো তারাও চরম একসময় চরম প্রতিকূল পরিবেশ এর সাথে যুদ্ধ করে টিকে থাকতো। আমি আপনি সবাই এইসব প্রাকৃতিক দুর্যোগের সাথে যুদ্ধ করেই দুনিয়াতে টিকে আছি। এসব দেখলে স্বাভাবিকভাবেই চিন্তাশীলদের মনে প্রশ্ন জাগতেই পারে যে,স্রস্টা বলে কি আদৌ কেউ আছেন? যদি থাকেন তাহলে এটা কি কোন স্রস্টার নীতি হতে পারে যে,এক প্রানী খাবে আরেক প্রানীকে? তিনি কি প্রত্যেক শ্রেণির প্রানীর জন্য আলাদা আলাদা খাদ্যের ব্যবস্থা করতে পারতেন না?

৩) তিনি কেন প্রাকৃতিক দুর্যোগ যেমনঃ ঘূর্ণিঝড় জলোচ্ছ্বাস, বন্যা, ভূমিকম্প এসব দিবেন? যদি মানুষের ঈমানের পরীক্ষা নেওয়ার জন্য এসব দিয়ে থাকেন, তাহলে বনের পশুপাখি ও গাছপালার কি অপরাধ? ওদেরকে কেন এসবের ফল ভোগ করতে হবে?

৪) বিলিয়ন বিলিয়ন গ্যালাক্সির বিলিয়ন বিলিয়ন নক্ষত্রের সমন্বয়ে গঠিত এই বিশাল মহাবিশ্বের স্রস্টা কেন সামান্য একটা বিন্দুসম কিংবা ধুলিকণার মতো অতি ক্ষুদ্র একটা ভাসমান গ্রহ নিয়ে এতো এতো পরিকল্পনা করবেন? যেখানে পৃথিবীর মতো এরকম বিলিয়ন বিলিয়ন গ্রহ প্রতিনিয়তই মহাবিশ্বের অন্যান্য অংশে সৃষ্টি হচ্ছে আবার ধ্বংসও হচ্ছে।আধুনিক জোতির্বিদদের অনুসন্ধান ও গবেষণা থেকে আমরা জানতে পেরেছি যে, মহাবিশ্বে চরম বিশৃংখল অবস্থা বিরাজ করছে। এখানে প্রতিনিয়ত বিভিন্ন গ্রহ নক্ষত্রের ভাঙ্গা গড়ার খেলা চলছে। আমাদের সৌরজগতও যেকোনো সময় ভেঙে তছনছ হয়ে যেতে বড় কোন গ্রহাণুর আঘাতে।যদি এই ইউনিভার্স এর স্রস্টা বলে কেউ থাকতেন তাহলে তিনি কখনোই এরকম বিশৃংখলার জগত তৈরি করতেন না।
 
৫) তাজা পশুর রক্ত না দেখলে যে স্রস্টার মন ভরে না, তিনি কেমন স্রস্টা?
 
শুধুমাত্র একটা উৎসবকে কেন্দ্র করে পৃথিবীতে একই দিনে কয়েক লক্ষ তাজা পশুকে বলির স্বীকার হতে হয় স্রস্টাকে খুশি করার জন্য। এই ঘন জীব হত্যা কেন? এতো বিশাল বড় মহাবিশ্বের একজন স্রষ্টা কেন এসব চাইবেন?
 
৬) যদি সত্যিই স্রস্টা বলে কেউ থাকতেন তাহলে দুনিয়াতে এতো এতো ধর্ম থাকতো না। তিনি চাইলেই সবাই একই ধর্মের অনুসারী হয়ে যেতো এবং একটিমাত্র সত্য ধর্মের ভেতরে থেকে যারা সঠিকভাবে ধর্ম না মানতো তাদের জন্য তিনি শাস্তির বিধান রাখতে পারতেন।
 
৭) ঈশ্বরের অস্তিত্বে অবিশ্বাসের পেছনে আমার সবচেয়ে স্ট্রং ও সিরিয়াস যে কারণ তাহলো-
 
আদম-হাওয়ার কিচ্চাকাহিনী তথা অধঃপতন তত্ত্বের সীমাবদ্ধতা এবং বিবর্তন তত্ত্বের সফলতা। যেখানে আদম হাওয়ার রূপকথা পুরোটাই অবৈজ্ঞানিক ও ভুলে ভরা, সেখানে বিবর্তন তত্ত্ব আজ সবচেয়ে প্রভাবশালি সায়েন্টিফিক থিওরি গুলোর একটি যার পক্ষে হাজার হাজার তথ্য প্রমাণ আছে এমনকি চোখে আঙ্গুল দিয়েও দেখিয়ে দেওয়া সম্ভব যে, সবকিছুর বিবর্তন হচ্ছে। আমি কে, আমি কোত্থেকে এলাম, কিভাবে এলাম, কোথায় যাবো, আমার শেষ পরিণতি কি ? আমাকে এইসব প্রশ্নের অত্যন্ত যুক্তিযুক্ত ও বিজ্ঞানসম্মত উত্তর দেয় যে থিওরি তার নাম বিবর্তন তত্ত্ব ( ইভোলিউশন থিওরি) । বিবর্তন এর আলোকে না দেখলে আজ যেন মহাবিশ্বের কোনকিছুরই কোন অর্থ হয় না, কি সমাজ,কি রাষ্ট্র, সভ্যতা, সংস্কৃতি, পৃথিবী, পৃথিবীর মানুষ, জীবজন্তু, গাছপালা এসবকিছুকেই আজ বিবর্তন এর আলোকে ব্যাখ্যা করা যায়। তাই বিবর্তন তত্ত্বের ওপর আমার অগাধ আস্থা।
 
৮) বিশ্বের বিভিন্ন ধর্মগ্রন্থ, ধর্মীয় পুস্তক ও ধর্মপুরুষগন অলৌকিকতার দাবি করে, কিন্তু এই বস্তুবাদী মহাবিশ্বের কোথাও অলৌকিক কিছু থাকতে পারে বলে মনে আমি করি না। কারণ, এটা বস্তুবাদী মহাবিশ্ব, এখানের সবকিছু বস্তুর তথা পদার্থ বিজ্ঞানের নিয়ম নীতি মেনেই ঘটবে। আগেরকার দিনে মানুষ বিজ্ঞান বুঝতো না এবং বৈজ্ঞানিক তত্ত্ব সমূহ তখনো আবিষ্কৃত হয় নি বলে প্রাকৃতিক ঘটনাগুলোর কারণ সম্পর্কে তারা অজ্ঞ ছিলো। আর তাই সাধারণ একটা প্রাকৃতিক ঘটনাকে তখন তারা অলৌকিক বলে চালিয়ে দিতো। কিন্তু আজ বিজ্ঞানের কল্যাণে আমরা ঠিকই সেসব ঘটনার সঠিক ব্যাখ্যা দিতে জানি।

    0