Just Another Bangladeshi

Feb 14, 20193 min

আকাশ ভরা মেঘ

টোর থেকে বাসায় ফিরছিলাম। দুইদিনের টোর তিনদিন হয়ে গেছে। তারপরেও ফেরি চালু হবার নাম নেই। আজও হবে কিনা সন্দেহ আছে। এদিকে আমাদের অবস্থা চরমভাবাপন্ন। স্যারদের সাথে সাথে আমাদের পকেটও খালি, আর সাথে সাথে পেটও খালি। ক্ষুধার জ্বালায় পেট চো চো করছে। সবগুলো টিচারই তাদের এটিএম কার্ড থেকে টাকা তুলার বন্ধোবস্ত করছে, এতগুলো স্টুডেন্ট সারাটাদিন না খেয়ে থাকবে এটা কি হতে দেওয়া যায়?

আকাশে ঘন কালো মেঘ জমে আছে। নদীর ঘাটে শয়ে শয়ে গাড়ি লাইন দিয়ে দাড়িয়ে আছে। নদীর উপার যাবার উপায় নেই। গতকাল রাত থেকেই ফেরি চলাচল বন্ধ হয়ে আছে। নদীর ঢেউ কমছে না, অতএব আজও ফেরি চলবে বলে মনে হচ্ছে না।
 
সকলেই বাস থেকে নেমে এদিক-ওদিক ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছে।যদিও টিচার বলেছিলো সবাই একসাথে থাকবে।

হঠাৎ করেই আকাশ গর্জে উঠলো, আলোয় আলোয় আলোকিত হয়ে উঠলো চারিপাশ। আর তৎক্ষনাৎ ঝমঝম করে বৃষ্টি নামা শুরু হলো। যে সে বর্ষণ নয়,একদম ভারি বৃষ্টিপাত। খোলা রাস্তায় দাড়িয়ে থাকাতে মুহুর্তেই মাথাসহ সার্ট-প্যান্ট ভিজে একাকার হয়ে গেলো। যে যার মতো দৌড়ে আশে-পাশের ছাউনির নিচে আশ্রয় নিলো। বাস এখান থেকে অনেক দূরে,বাসে পৌছাতে পৌছাতে ভিজে কাক হয়ে যাবো। তাই দৌড়ে গিয়ে পাশের একটা কুড়েঘরে ঢুকলাম। একদম জীর্ণ-শীর্ণ ছনের তৈরি একটি কুটির। একটু নড়া লাগলেই হয়তো ভেঙে যাবে, তবে এখনকার জন্য এটাই যথেষ্ট।
 
ঘরের ভেতরে ঢুকতেই একটা ছেলেকে চোখে পড়লো। ঘরের এক কোণে একটি ক্যারাম বোর্ড উল্টে রাখা, আর তার সামনেই একটি বেঞ্চ। আর সেই বেঞ্চের উপরেই ছেলেটি বসে আছে। বেশ লম্বা চওড়া ফর্সা মতন ছেলে।মায়াবী জোড়া চোখ, ফ্রেঞ্চ কার্ট দাড়ি। পরনে সাদা রঙের সার্ট আর কালো রঙের প্যান্ট। এক কথায় অনন্য সুন্দর একটি ছেলে। ছেলেটি একটু সরে গিয়ে বসলো। অর্থ্যাৎ আমার জন্য জায়গা ছেড়ে দিলো। আমি তার পাশে গিয়ে বসলাম।
 
ছেলেটি আমার দিকে তাকিয়ে একটা মুচকি হাসি দিয়ে তার পকেট থেকে একটা টিস্যু বের করে দিলো। আমি সেটা দিয়ে আমার মাথা আর মুখ মুছে নিলাম।
 
—hi bro,আমি শাওন!
 
ছেলেটি হাত বাড়িয়ে দিলো।
 
—আমি রবি!
 
—তো আপনার বাড়ি কোথায় ব্রো?
 
—নদীর ওইপারেই। আপনার?
 
—আমারও! তা কোথায় যাওয়া হয়েছিলো?
 
—টোরে গিয়েছিলাম। আপনি?
 
—আমি বোনের বাড়ি এসেছিলাম।
 
—নাইস টু মিট ইউ!
 
—সেইম টু ইউ!

কুড়েটির জানালা দিয়ে নদীটাকে স্পষ্ট দেখা যাচ্ছে। বেশ বড়সর একটি নদী। সাদা কালো জলগুলো ঢেউয়ের টানে উছলে উছলে উঠছে। বেশ অদ্ভুত সুন্দর একটা দৃশ্য। আমি উদাস দৃষ্টিতে তাকিয়ে ছিলাম সেই দিকে। হঠাৎ করেই আবারো এক গগনবিদারিনী শব্দ করে বাঁজ পড়লো। ভয়ে আতকে উঠে আমি কান আটকে ধরে চোখ বুজ রইলাম। অনুভব করলাম কেউ একজন আমার মাথায় হাত বুলিয়ে দিচ্ছে।
 
—ভয় করে?
 
আমি চোখ তুলে তাকালাম!
 
—hmm! অনেক ভয় করে!
 
—এত ভয় পাবার কি আছে? কি হবে এই বাঁজ পড়লে?

আমি বলতে যাচ্ছিলাম, ঠিক ওই সময়েই আবারো একটা বাঁজ পড়লো। এতটাই জোরসরে বাঁজ পড়লো যে আমি বিকট এক চিৎকার দিয়ে পাশে থাকা ছেলেটাকে জরিয়ে ধরলাম। ছেলেটি কিছু না বলে আমাকে জরিয়ে ধরে রাখলো!
 
—ভয় পেও না রবি! আমি আছি তো কিচ্ছু হবে না। বোকা ছেলে,এত ভয় পায় নাকি কেউ?

ছেলেটির বডিটা বেশ শক্ত-কোমল। তার গা থেকে একটা সুন্দর গন্ধ আসছিলো। একদম পাগল করে দেওয়া গন্ধ। যেই গন্ধটা নাকে যেতেই আমি একদম উতলা হয়ে উঠলাম,মাথায় নেশা চড়ে বসলো।
 
ছেলেটা আমায় ডাকছে!
 
—রবি! উঠো? বাঁজ পড়া থেমে গেছে তো?

আমি উঠলাম না। কেননা তার কথাগুলো তখোনো আমার কানে পৌছায়নি। ছেলেটা আবারো ডাকলো,
 
—রবি! রবি?

ছেলেটা আমার দিকে অদ্ভূত ভঙ্গিতে চেয়ে আছে। বেশ লজ্জা করছে! এতক্ষন তাকে জরিয়ে ধরে রেখেছিলাম!
 
কি আজব কান্ড!
 
আবারো প্রচন্ড জোরসরে বাঁজ পড়লো। কিন্তু এইবার আর আমি কান আটকে ধরলাম না,চোখও বন্ধ করলাম না। বরং শাওনের দিকে তাকিয়েই রইলাম। শাওন কিছু একটা আন্দাজ করতে পারলো। সে মুহুর্তেই ঝাপিয়ে পড়লো আমার ক্ষুধার্ত ঠোঁটগুলোর উপর।
 
দীর্ঘ পয়তাল্লিশ মিনিট পর বৃষ্টি থামলো। আমি গিয়ে বাসে উঠে বসলাম। তারও দুইঘন্টা পর ফেরি চালু হলো। আমাদের বাস ফেরি পার করে এপার চলে এলো। প্রায় দেড় ঘন্টা পর আমরা কলেজের গেইটে পৌছালাম। আকাশ তখোনো মেঘাচ্ছন্ন,গুড়ি গুড়ি বৃষ্টি হচ্ছে। বাস থেমে নেমে একটি অটোয় উঠে বসলাম, আরো আধ ঘন্টার পথ পাড়ি দিয়ে বাড়ি ফিরবো। অটোটা সামনে যেতেই কেউ একজন অটো দাড় করালো। পলিথিন বাধা থাকায় আমি তাকে দেখতে পেলাম না। ছেলেটি অটোর ভেতরে ঢুকতেই‌ আমি চমকে উঠলাম। এ তো শাওন, যার সাথে কুড়েঘরে কথা হলো। শাওন আমাকে পেয়ে ভীষণ খুশিতে দিশেহারা হয়ে উঠলো।
 
অটো বাড়ির দিকে এগিয়ে চলেছে। বৃষ্টি বাড়ছে। আকাশ ভরা মেঘ। এ বৃষ্টি যেন মুহুর্তেই শেষ হবার নয়।

    1