Cosmic Alean

Feb 26, 20213 min

কোরানে কি ভ্রুণতত্ত্বের সঠিক বর্ণনা আছে?

Updated: Sep 13, 2023

Embryology তথা ভ্রণবিদ্যা একটি চমৎকার আধুনিক বিজ্ঞান যেটি ১৯৪০ খ্রিস্টাব্দে ইলেকট্রন মাইক্রোস্কোপ আবিষ্কারের পর প্রাণবিজ্ঞানের একটি স্বতন্ত্র ক্ষেত্র হিসেবে আত্নপ্রকাশ করে।

এই আবিষ্কারের পূর্বে মানুষ সহ অন্যান্য প্রাণীর ভ্রণ বিকাশের বিভিন্ন ধাপ সম্পর্কে সঠিক জ্ঞান লাভ করা সম্ভব ছিলো না। ভ্রুণের আকৃতির ক্ষুদ্রতাই ছিলো তার কারণ। দাবি করা হয়ে থাকে যে মুসলিমদের পবিত্র ধর্মগ্রন্থ কোরান মজিদে ইলেকট্রন মাইক্রোস্কোপ আবিষ্কারের ১৪০০ বছরেরও পূর্বেই নাকি মানব ভ্রুণ বিকাশের বিভিন্ন ধাপ সম্পর্কে সচরাচর বর্ণনা রয়েছে।

প্রিয় পাঠক, তাহলে চলুন আমরা দেখে নিই এ সম্পর্কে কোরান মজিদে আসলে কি বলা হয়েছে।

কোরান ৭৫ঃ৩৭

সে (মানুষ) কি মায়ের গর্ভে বীর্যের শুক্রবিন্দু ছিল না, যা স্থলিত হয় ?

কোরান ৪৯ঃ১৩

হে মানুষ আমি (আল্লাহ) তোমাদেরকে এক নারী ও এক পুরুষ থেকে সৃষ্টি করেছি।

কোরান ৭১ঃ ১৩-১৪

তোমাদের কী হল, তোমরা আল্লাহর শ্রেষ্ঠত্বের পরোয়া করছ না? অথচ তিনি তোমাদেরকে নানা স্তরে সৃষ্টি করেছেন।

কোরান ৩৯ঃ০৬

তিনি তোমাদেরকে মাতৃগর্ভের ত্রিবিধ অন্ধকারে পর্যায়ক্রমে সৃষ্টি করেছেন।

কোরান ২৩ঃ ১২-১৪

আমিত মানুষকে সৃষ্টি করেছি মাটির উপাদান হতে। অতঃপর আমি ওকে শুক্রবিন্দু রূপে স্থাপন করি এক নিরাপদ আধারে। পরে আমি শুক্রবিন্দুকে পরিণত করি রক্তপিন্ডে, অতঃপর রক্তপিণ্ডকে পরিণত করি মাংস্পিন্ডে, এবং মাংসপিন্ডকে পরিণত করি অস্থিপঞ্জরে ; অতঃপর অস্থিপঞ্জরকে ঢেকে দিই মাংস দ্বারা ; অবশেষে ওকে গড়ে তুলি অন্য এক সৃষ্টি রূপে ; অতএব নিপুণতম স্রষ্টা আল্লাহ কত কল্যাণময়।

কোরান ৭৫ঃ৩৭-৩৯

সে কি স্থলিত শুক্রবিন্দু ছিল না? অতঃপর সে রক্তপিন্ডে পরিণত হয়। তারপর আল্লাহ তাকে আকৃতি দান করেন ও সুঠাম করেন। অতঃপর তিনি তা হতে সৃষ্টি করেন যুগল নর ও নারী।

প্রিয় পাঠক, মুটামুটি এই ছিল কোরানে বর্ণিত ভ্রুণতত্ত্ব সম্পর্কিত বর্ণনা।

এই আয়াতগুলোর আলোকে কোরানে বর্ণিত ভ্রুণতত্ত্বের যে সারকথা আমরা পাই তা হল অনেকটা এরকমঃ

মানুষকে আল্লাহ শুক্রবিন্দু থেকে সৃষ্টি করেছেন। এই শুক্রবিন্দু হল মাটির উপাদান। একে তিনি প্রথমে মাতৃগর্ভের জরায়ুতে স্থাপন করেন, তারপর একে তিনি রক্তপিণ্ডে পরিণত করেন, তারপর এই রক্তপিণ্ডকে তিনি মাংসপিণ্ডে পরিণত করেন, তারপর এই মাংসপিণ্ডকে তিনি অস্থিপঞ্জরে(হাড়ে) পরিণত করেন, তারপর এই অস্থিপঞ্জরের চারপাশে তিনি মাংস দ্বারা আবৃত করে দেন, অতঃপর এ থেকে তিনি সৃষ্টি করেন নারী অথবা পুরুষ।

প্রিয় পাঠক, এবার আসুন আমরা সিংক্ষেপে দেখে নিই যে কোরানের উপরোক্ত ভ্রুণতত্ত্ব আধুনিক বিজ্ঞানের সাথে কতটুকু সামঞ্জস্যপূর্ণ ।

মানব প্রজনন সাধারণত শুরু হয়

যৌন প্রজননের মাধ্যমে আন্তঃনিষেক প্রক্রিয়ায় । এই প্রক্রিয়ায়, পুরুষ তার উত্থিত পুরুষাঙ্গ নারীর জরায়ুতে প্রবেশ করায়, এরপর সঙ্গীদ্বয়ের যে কোন একজন ছন্দময় পেলভিক ধাক্কা পরিচালনা করতে থাকে যতক্ষণ না পর্যন্ত পুরুষ তার নারী সঙ্গীর জরায়ুনালীতে শুক্রাণুযুক্ত বীর্যপাত ঘটায়। এই প্রক্রিয়াকে সঙ্গম, সহবাস বা যৌনমিলনও বলা হয়। শুক্রাণু এবং ডিম্বাণু গ্যামেট নামে পরিচিত (যার প্রতিটিতে মাতাপিতার অর্ধেক জেনেটিক তথ্য থাকে, এবং এই কোষগুলো মিয়োসিস প্রক্রিয়ায় সৃষ্টি হয়।)। শুক্রাণুটি (যা পুরুষের প্রতিবার বীর্যপাতের ২৫ কোটি শুক্রাণুর মাঝে শুধু একটি মাত্র) যোনিপথে পরিভ্রমণ করে ফেলোপিয়ান নালী বা জরায়ুতে পৌঁছে ডিম্বাণুকে নিষিক্ত করে একটি জাইগোট গঠন করে থাক। জরায়ুতে, শিশু প্রথমে একটি সংক্ষিপ্ত জাইগোট দশায় থাকে, এরপর থাকে ভ্রুনীয় দশায়, যাতে শিশুর দেহের প্রধান অঙ্গ প্রত্যঙ্গসমূহ তৈরি হয় এবং তা আট সপ্তাহ পর্যন্ত সময় নেয়, এরপর আসে জরায়ুজ দশা, যাতে হাড়ের কোষগুলো তৈরি হয় এবং ফেটাস আকারে আরও বড় হয়। জাইগোট থেকে শিশুতে পরিণত হয়ে ভূমিষ্ট হওয়ার পূর্ব পর্যন্ত সময়কাল আনুমানিক প্রায় ২৬৬ দিন ( প্রায় ৯ মাস)।

এবার আমরা আধুনিক ভ্রুণতত্ত্বের সাথে কোরানের ভ্রুণতত্ত্ব তুলনা করে দেখি যে তাদের মধ্যে কোন সামঞ্জস্যতা আছে কিনা।

প্রথমত, কোরানে দাবি করা হচ্ছে যে শুক্রাণু ও ডিম্বাণু মিলিত হয়ে প্রথমে জমাট বাধাঁ রক্ত হয়। কিন্তু আধুনিক বিজ্ঞান বলে ভিন্ন কথা।

পুরুষের শুক্রাণু ও নারীর ডিম্বানু মিলিত হয়ে প্রথমে তৈরি করে জাইগোট,

যা একধরনের স্টেম সেল। এই স্টেম সেলের একটি নিউক্লিয়াস রয়েছে যার পুরো সেট জিন রয়েছে। জাইগোট যখন মাইটোসিস প্রক্রিয়ায় বিভাজিত হয়, তখন জিনের সম্পূর্ণ সেটটি কপি হয়ে যায় এবং এই প্রক্রিয়াটি অব্যাহত থাকে যতক্ষণ না একটি ভ্রূণ নামক কোষের বল তৈরি হয়। অর্থাৎ জাইগোট হল একধরনের ইউক্যারিওটিক বা আদি কোষ বা স্টেম সেল যেখান থেকে পরবর্তীতে মাইটোসিস বিভাজন প্রক্রিয়ার মাধ্যমে কোষ ও কোষীয় অঙ্গাণুসমূহ তৈরি হয়।

অন্যদিকে রক্ত হল একধরনের তরল যোজক টিস্যু (connective tissue) যা মানব ভ্রুণের বিকাশের সময় ফেটাসের বডিতে হাড়ের লাল অস্থিমজ্জা থেকে তৈরী হয় অক্সিজেন ও কার্বনডাই-অক্সাইড পরিবহনের জন্য ।

তাহলে এখন আমাদের প্রশ্ন, জাইগোট কি করে জমাট বাঁধা রক্ত হতে পারে কিংবা জাইগোট সম্পর্কে কোন তথ্য কি কোরান দিয়েছে? কোরানের ভাষ্য অনুযায়ী বুঝা যাচ্ছে যে জাইগোটই হল জমাট বাঁধা রক্ত (রক্তপিণ্ড) , অথচ জাইগোট দশায় থাকাকালীন রক্তের কোন অস্তিত্বই থাকে না। রক্ত তৈরি হয় সাধারণত জরায়ুজ দশায় যখন হাড়ের কোষগুলো তৈরি হয়, সেই হাড়ের ভেতরের অংশের লাল অস্থিমজ্জা থেকে। এই বিষয়গুলো কি তাহলে অবৈজ্ঞানিক হয়ে গেলো না?

দ্বিতীয়ত, বিজ্ঞান বলে, শুক্রাণু ও ডিম্বাণু মিলে জাইগোট হয়। তারপর সেটা বিভাজিত হয়। তারপর সেখান থেকে এক্টোডার্ম, এন্ডোডার্ম, মেসোডার্ম তৈরি হয়। তারপর এগুলো থেকে সবকিছু তৈরি হয়। আর হাড় ও মাংস একসাথেই তৈরি হয় মেসোডার্ম থেকে। আগে বা পরে না।

তাহলে কোরানে যে বলা হচ্ছে,

ভ্রূণ আগে জমাট বাঁধা রক্ত হয়,তারপর ইহা মাংস হয়, তারপর তাতে হাড় হয়, তারপর আবার তাতে মাংস হয়। এই কথাগুলো কি অবৈজ্ঞানিক হয়ে গেলো না?

আর তাছাড়া কোরানের উপরোক্ত আয়াতের কথাগুলোতে তেমন মিরাকলের কিছু ত দেখছি না আমি। এগুলো একজন গভীর চিন্তাশীল দার্শনিকের পক্ষে বলতে পারাটা অসম্ভবের কিছু নয়।।

    5